ভারতের সংসদের শীতকালীন অধিবেশন চলাকালীন সোমবার ৭৯ জন সংসদ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে লোকসভা ও রাজ্যসভা—সংসদের উভয় কক্ষের সদস্যই আছেন। এর আগে গত সপ্তাহে ১৪ জন সংসদ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এর ফলে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এমপির সংখ্যা এখন ৯০-এর বেশি।ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে বলেছে, লোকসভার ৩০ জন সংসদ সদস্যকে আগামী ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত অধিবেশনের বাকি সময়ের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। পাশাপাশি বিশেষ কমিটি আচরণের বিষয়ে প্রতিবেদন জমা না দেওয়া পর্যন্ত তিনজন বরখাস্ত থাকবেন।
এছাড়া রাজ্যসভার ৪৬ জনকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে ৩৫ জন অধিবেশনের বাকি সময়ে অংশ নিতে পারবেন না বা এবং ১১ জনের বিষয়ে প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত বরখাস্ত থাকবেন।
আনন্দবাজার পত্রিকা বলেছে, এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বক্তৃতার মাঝেই নতুন সংসদ ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সরব হন বিরোধী সংসদ সদস্যরা। তুমুল চিৎকার শুরু হয় সংসদ কক্ষে। প্রথমে স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ৪৫ মিনিট, পরে ৩টা পর্যন্ত সভার কাজ মুলতবি করে দেন স্পিকার। তার পরও পরিস্থিতি তপ্ত হওয়ায় ৩০ জনের বেশি সংসদ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করেন স্পিকার
গণমাধ্যম দুটি জানিয়েছে, লোকসভার কংগ্রেস দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী এবং উপনেতা গৌরব গগৈও এদিন সাসপেন্ড হয়েছেন। অধীর গত বাদল অধিবেশনেও ‘অসংসদীয় শব্দ’ ব্যবহার করায় সাসপেন্ড হয়েছিলেন।
সাসপেন্ড হওয়া সংসদ সদস্যদের তালিকায় রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অনেক তৃণমূল এমপিও। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অপরূপা পোদ্দার, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, সুনীল মণ্ডল, সৌগত রায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, প্রতিমা মণ্ডল, অসিত মাল, শতাব্দী রায়কে সাসপেন্ড করেছেন স্পিকার। এ ছাড়া এই তালিকায় রয়েছেন ডিএমকের তিন এমপি—টি আর বালু, এ রাজা এবং দয়ানিধি মারান।
আবারও সাসপেন্ড হওয়ার পর অধীর চৌধুরী বলেন, ‘বিজেপির সংখ্যাধিক্য রয়েছে। তাই দিয়ে সংসদে পেশিশক্তি দেখাচ্ছে। সংসদকে বিজেপি ও আরএসএসের কার্যালয়ে পরিণত করতে চাইছে।’
লোকসভায় কংগ্রেস নেতা আরো বলেন, ‘সংসদের নিরাপত্তা যেভাবে ভেঙে পড়েছে, তা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করা হয়েছিল। তাঁরা বাইরে অনেক কথা বললেও সংসদে কিছু বলছেন না। সেই প্রশ্ন তুললেই বিরোধীদের ওপর আক্রমণ নেমে আসছে।’
গত বুধবার ভারতের লোকসভার অধিবেশন চলাকালীন সাগর এবং মনোরঞ্জন ডি গ্যালারি থেকে চেম্বারে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তার পর রং বোমা ছুড়ে ছড়িয়ে দেন হলুদ ধোঁয়া। অল্পক্ষণের মধ্যেই তাঁদের ধরে নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সংসদের বাইরে থেকে একই সময়ে গ্রেপ্তার করা হয় নীলম আজাদ এবং অমল শিন্ডেকে।
তাঁরা বাইরে স্লোগান দিচ্ছিলেন। সংসদের নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঘটনায় আরো দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দিল্লির থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন ললিত এবং মহেশ কুনাওয়াত। তাঁদের সবাইকে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এদিন থেকেই লোকসভার নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
উল্লেখ্য, দিল্লিতে এই মুহূর্তে রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়ার’ বৈঠক রয়েছে। তার আগের দিনই এই ঘটনা বিরোধী শিবিরকে আরো এককাট্টা করবে বলেই মত রাজনৈতিক মহলের অনেকের।