সোমবার ২৮ অক্টোবর ২০২৪ ১২ কার্তিক ১৪৩১
 

‘নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে দেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে’    গৃহকর্মী হত্যার অভিযোগে বনশ্রীতে বাড়িতে আগুন    ২০২৩ সালে দেশে এইডসে ২৬৬ জনের মৃত্যু     নিউজিল্যান্ডে আরেকটি ঐতিহাসিক জয় টাগইগারদের     নির্বাচন বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞার আহ্বান ওবায়দুল কাদেরের    হবিগঞ্জের ডিসি ও তিন ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ ইসির    ভোট ঠেকানো গণতান্ত্রিক অধিকার নয়: ডিএমপি কমিশনার   
একের পর এক বৈঠক করেও আসন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৩, ৫:২২ অপরাহ্ন

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে একের পর এক বৈঠকের পরেও আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন বণ্টন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। এতে ১৪ দলের শরিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। জোট নেতাদের দাবি, এতে নির্বাচনি প্রস্তুতিতে পিছিয়ে পড়ছেন তাঁরা। 

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের ছাড় দেওয়া আসনে জোটের সবচেয়ে বড় শরিকদলের কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীও চান না জোট নেতারা। অবশ্য এ নিশ্চয়তা দিতে পারেনি আওয়ামী লীগ। 

আসন সমঝোতা নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে অন্তত তিনটি বৈঠক করেছে ১৪ দলের নেতারা। প্রথম দফায় গত ৪ ডিসেম্বর জোট নেতারা বসেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। সে সময় জোট নেতারা তাঁদের প্রত্যাশা অনুযায়ী আসনের একটি তালিকা আওয়ামী লীগ সভাপতিকে দিয়েছিলেন।

পরদিন জোট সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমুর সঙ্গেও বৈঠক করেন তাঁরা। সবশেষ গত রোববার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আবারও বৈঠক করেন তাঁরা। সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জোট শরীকরা ছাড় দেওয়া আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন। আর বাকি আসনগুলোতে ভোট করবেন নিজেদের প্রতীক নিয়ে। 

ওবায়দুল কাদের অবশ্য কোন দল কত আসন পাচ্ছেন সে বিষয়ে বৈঠক থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। জোট নেতারা বলছেন, এ নিয়ে দলের নেতা–কর্মীদের চাপের মুখে আছেন তাঁরা। 

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘অসুবিধাটা হচ্ছে আমরা কর্মীদের স্পষ্ট করে কিছু জানাতে পারছি না। আমার কাছে এখনও দুই–তিন থানা থেকে ফোন আসছে। কী হচ্ছে, কী হবে, একটা উদ্বেগ উৎকণ্ঠা তো আছেই।’

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ২৯টি দলের প্রার্থীরা এবার নির্বাচনে আসছেন। অন্যদিকে, বিএনপিসহ ১৫টি রাজনৈতিক দলের কোনো প্রার্থী এই নির্বাচনে নেই।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, দেশের ৩০০টি সংসদীয় আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নৌকা চেয়েছেন ৩০৩ জন। পাঁচটি আসনে নৌকার বিপরীতে দুজন করে প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোও নিজেদের মতো করে প্রার্থী ঘোষণা করেছে।

এর মধ্যে তরিকত ফেডারেশনের ‘ফুলের মালা’ প্রতীকে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ৪৭ জন, সাম্যবাদী দলের ‘চাকা’ প্রতীকে ৬ জন, গণতন্ত্রী পার্টির ‘কবুতর’ প্রতীকে ১২ জন, জাতীয় পার্টির (জেপি) ‘বাইসাইকেল’ প্রতীকে ২০ জন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ‘হাতুড়ি’ প্রতীকে ৩৩ জন এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) ‘মশাল’ প্রতীকে ৯১ জন।

নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবে ১৪ দল, আসন বণ্টন পরে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবে ১৪ দল, আসন বণ্টন পরে 
আগের তিনটি নির্বাচনে ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে কুষ্টিয়া-২ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু। এবার আওয়ামী লীগ এই আসনটিতে কোনো প্রার্থী দেয়নি। তবে এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিন।

হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘শরীকদের যেখানে আসন ছেড়ে দেওয়া হবে সেখানে স্বতন্ত্র নামে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা যদি নির্বাচন করে, তাহলে তো সেই আওয়ামী লীগ বনাম শরিকদল নির্বাচনটা হয়ে গেলো। এটা বিব্রতকর।’  

অবশ্য ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, নির্বাচনে দলের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তাতে বাধা দেওয়া হবে না।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘কেউ যদি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়, এটার অধিকার কিন্তু আইন অনুযায়ী আছে। এটা তার সাংবিধানিক অধিকার। সেই অধিকারকে আমরা খর্ব করতে চাই না।’

১৪ দলের আসন বণ্টন নিয়ে আওয়ামী লীগের যে ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে তার অন্যতম সদস্য বাহাউদ্দিন নাছিম। তিনি নিজেও এবার ঢাকা–৮ আসন থেকে নৌকা নিয়ে নির্বাচন করছেন। গত তিন নির্বাচনে এই আসনটি থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন ১৪ দলের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।

নাছিম বলছেন, ১৪ দল নির্বাচনী নয়, রাজনৈতিক জোট। তাই আসন কেউ কম-বেশি পেলেও সমস্যা হবে না। 

বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘কোন দলকে কয়টি আসন দেওয়া হবে সেটা কিন্তু মূল বিষয় না। বিষয়টা হলো নির্বাচনে জয় লাভ করাটাই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ন। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ আমরা চাই একটি উৎসবমুখর পরিবেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। প্রতিযোগীতামুলক নির্বাচন। 

এদিকে জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি ও বিএনএমের সঙ্গেও ক্ষমতাসীন দলের সমঝোতা হতে পারে। তার ওপরও আসন বন্টন নির্ভর করছে বলে মনে করেন জোট নেতারা।

বর্তমানে ভোটের মাঠে থাকা রাজনৈতিক জোটগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো বলা যেতে পারে ১৪ দলীয় জোটকে। বিএনপি-জামায়াতকে প্রতিহত করতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কয়েকটি রাজনৈতিক দল নিয়ে ২০০৪ সালে গঠিত হয় রাজনৈতিক জোট কেন্দ্রীয় ১৪ দল। জোটের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগ।

২০০৯ সালে এক-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বৃহত্তর জোট মহাজোট ক্ষমতায় আসে। এ সময় ১৪ দলের শরিক দলগুলোর কয়েকজন নেতা মন্ত্রিসভায়ও স্থান পান। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও এ ধারা অব্যাহত ছিল। টানা দুই মেয়াদে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং জাতীয় পার্টির (জেপি) সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু।

তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শরিক দলের কোনো নেতাই মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি। এ নিয়ে জোটনেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের মতবিরোধ তৈরি হয়। জোটের অনেক নেতাই প্রকাশ্যে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনাও করেন। অবশ্য বরফ গলতেও সময় লাগেনি। গত জুলাইয়ে জোটনেতারা আবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে আসার ঘোষণা দেন। আগের মতো এবারও আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে নামবেন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের প্রার্থীরা।

গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তফসিল অনুযায়ী ভোট হবে আগামী ৭ জানুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর, আর প্রতীক বরাদ্দ হবে ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনের প্রচার শুরু হবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে। চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. আক্তার হোসেন রিন্টু
বার্তা ও বাণিজ্যিক বিভাগ : প্রকাশক কর্তৃক ৮২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক (৩য় তলা) ওয়্যারলেস মোড়, বড় মগবাজার, ঢাকা-১২১৭।
বার্তা বিভাগ : +8802-58316172. বাণিজ্যিক বিভাগ : +8801868-173008, E-mail: dailyjobabdihi@gmail.com
কপিরাইট © দৈনিক জবাবদিহি সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft