এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হার দিয়ে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। তবে আফগানিস্তানের কাছে ৮৯ রানের জয়ে গ্রুপ পর্বের বাঁধা পেরিয়েছিল টাইগাররা। কিন্তু বর্তমানে ওয়ানডে র্যাংকিংয়ের এক নম্বর দল পাকিস্তানের কাছে ব্যাটে-বলের লড়াইয়ে পেরে উঠল না সাকিবের দল। ফলে হার দিয়ে সুপার ফোর মিশন শুরু করল লাল সবুজের প্রতিনিধিরা।
লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। সেই চাপ সামলে সাকিব-মুশফিকের শতরানের জুটিতে চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহের আশা জাগিয়েছিল। তবে এ দুজনের ফিফটির পর বিদায়ের পর লোয়ার অর্ডারের ব্যর্থতায় মাত্র ৩৮.৪ ওভারে ১৯৩ রানে অলআউট হয়ে যায় টাইগাররা।
পাকিস্তানের রান তাড়ায় শুরুতেই আগ্রাসী বোলিং করেন তাসকিন-শরিফুলরা। কিন্তু সেই বোলিংয়েও স্বাগতিকদের সেভাবে বিপদে ফেলতে পারেনি। আঁটসাঁট বোলিংয়ে পাক ব্যাটারদের কিছুটা চাপে রাখলেও ওপেনার ইমাম-উল হকের ৭৮ ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের অপরাজিত ৬৩ রানের ইনিংসে ৩৯.৩ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাবরের দল।
বাংলাদেশের দেওয়া ১৯৪ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়ায় বেশ সাবধানী শুরু করে স্বাগতিকরা। ফলে বাংলাদেশি পেসাররা নতুন বলের সুবিধা কাজে লাগাতে পারেননি। দশম ওভারে এসে বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন শরিফুল ইসলাম। ওভারের প্রথম বলে ফখর জামানকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন বাঁহাতি এই পেসার।
বিদায়ের আগে ৩১ বলে ২০ রান করেন থামে ফখরের ইনিংস। অবশ্য স্লিপে নাঈম শেখ ক্যাচ মিস না করলে আগেই তার উইকেট পেতেই পারত টাইগাররা। তবে জীবন পেয়েও বেশি দূর এগোতে পারেননি ফখর জামান।
তিনে ব্যাট করতে ক্রিজে আসেন বাবর আজম। বাংলাদেশি বোলারদের দেখেশুনে ব্যাট করে দলকে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু ১৬তম ওভারে পেসার তাসকিন আহমেদের বলে এডজ হয়ে বল গিয়ে লাগে স্টাম্পে। এতে পাকিস্তান অধিনায়ক সাজঘরে ফিরেছেন ২২ বলে ১৭ রান করে।
এরপর তৃতীয় উইকেটে ৮৫ রানের জুটি গড়েন ইমাম ও রিজওয়ান। মূলত এই দুই ব্যাটারের জুটিতেই সহজ লক্ষ্যে কোনো ঝড় তুলতে পারেনি বাংলাদেশি বোলাররা। তবে ক্যারিয়ারের ৯ম ফিফটির পর আগ্রাসী রূপ নেওয়া ইমামকে বোল্ড করে ফেরান মেহেদি হাসান মিরাজ। তার ৮৪ বলে ৭৮ রানের ইনিংসে ছিল ৫ বাউন্ডারি ও ৪ ছক্কার মার।
বাকি কাজটুকু একাই সারেন রিজওয়ান। ৭৯ বলে ৬৩ রানের ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। তার সঙ্গে অপরাজিত থাকা আগা সালমান ২১ বলে করেন ১২ রান। এতে ৬৩ বল বাকি থাকতেই জয় নিশ্চিত করে দুইবারের এশিয়ান চ্যাম্পিয়নরা।
এর আগে টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ। তবে পাক পেসারদের বোলিং তোপে ব্যর্থ হন টাইগাররা। ইনিংসের শুরুতেই গোল্ডেন ডাক মেরে বিদায় নেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকানো জয়ের নায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ।
নাজমুল হোসেন শান্তর হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে স্কোয়াডে ফেরা লিটন দাস দারুণ শুরুর পরও থামেন ১৩ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ১৬ রানে। আরেক ওপেনার নাঈম শেখ সেট হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ২৫ বলে ২০ রান করেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। এশিয়া কাপে এখন পর্যন্ত ব্যর্থ তৌহিদ হৃদয় মাত্র ২ রান করেন।
দলীয় ৪৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে যখন ধুকছে, এমন সময়ে দলের হাল ধরেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান। তারা দুজনে মিলে ১০০ রানের জুটি গড়ে দলের সংগ্রহ এগিয়ে নিয়ে যান। এর মাঝে ক্যারিয়ারের ৫৪তম ফিফটি তুলে নেন সাকিব। তবে ৫৭ বলে ৭টি চারে ৫৩ রানে থামে তার ইনিংস।
সাকিবের বিদায়ের পর পরই হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান মুশফিকও। ক্যারিয়ারের ৪৬তম হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করে ৬৪ রানে থামেন তিনি। তার আগে ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পেয়ে সাত নম্বরে আসা শামীম হোসেন ২৩ বলে ১৬ রান করেন। এরপর শেষ দিকে ৩ রান তুলতেই লেজের সারির ৪ ব্যাটারকে হারিয়ে ১৮৯ রানে ৬ উইকেট থেকে ১৯৩ রান তুলতেই অলআউট হয় বাংলাদেশ।
বোলিংয়ে পাকিস্তানের হয়ে ১৯ রানে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট শিকার করেন হারিস রউফ। তাছাড়া আফ্রিদির ঝুলিতে গেছে ৩ উইকেট। নাসিম শাহ, ফাহিম আশরাফ ও ইফতিখার আহমেদ একটি করে উইকেট পান।