কুড়িগ্রামের ধরলা নদীর চরাঞ্চলে শুভ্রতা ছড়াচ্ছে কাশফুল। এরমধ্যে ফুলবাড়ী উপজেলা শহরের পশ্চিম দিকে তিন কিলোমিটার দুরুত্বে শেখ হাসিনা দ্বিতীয় ধরলা সেতু বা ফুলবাড়ী সেতুর পশ্চিম পাড়ের ধরলা নদীর চরে বিশাল বিশাল কয়েকটি কাশবন তার ফুলের শুভ্রতা ছড়াচ্ছে অবিরাম।
এসব কাশবনে চোখ রাখলেই দেখা মিলছে কাশফুলের মন কাড়ানো শুভ্রতা। কাশবনে ফোটা কাশফুলের দিকে তাকালেই সাদা কাশফুলের শুভ্রতা চোখে চিকচিক করছে। চোখ জুড়ানো এই কাশফুলের শুভ্রতা ভ্রমণ পিপাসু মানুষের নজর কাড়ছে।
ফলে কাশফুলের শুভ্রতা ও ফুলের নরম ছোঁয়া নিতে দুর-দূরান্তের ভ্রমণ পিপাসু মানুষেরা ছুটছেন ধরলা নদীর চরে। এখানে প্রতিদিনেই ভ্রমণ পিপাসুদের ভিড় বাড়ছে। শিশু, কিশোরসহ সকল বয়সী মানুষের পদভারে মুখরিত হয়ে পড়েছে এখানকার চরাঞ্চল।
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এই কাশবনে পালন করা হচ্ছে শিক্ষা ভ্রমণ। অনেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ছুটে আসছেন কাশবনে। কেউ কেউ গান ও কবিতা পরিবেশন করছেন এখানে। বেশির ভাগেই ভ্রমণ পিপাসু তার নিজের ছবি কাশফুলের সাথে ক্যামেরাবন্দী করছেন।
এখানকার কাশবনে সৌখিন ও ভ্রমণ পিপাসু মানুষের ভিড় বাড়ছে প্রতিদিনেই। ধরলা নদীর উপরে ৯৫০ মিটার দৈর্ঘের শেখ হাসিনা দ্বিতীয় ধরলা সেতু বা ফুলবাড়ী সেতুর মনোরম দৃশ্য ও নিচে চরাঞ্চলের বিশাল বিশাল কাশবনের শুভ্রতা এ দুইটি দেখার জন্যেই মানূষজন ছুটে আসছেন এখানে।
ভ্রমণ পিপাসু মানুষের পদচারণায় ধরলা পাড়ে নৌকার মাঝিদের অর্থ উপার্জনের পথও খুলেছে। এখানকার প্রায় ৮/১০ টি নৌকা ব্যবহার হচ্ছে ভ্রমণ পিপাসুদের পারাপারের জন্য। এখানে একজনকে পার করতে নেয়া হচ্ছে ১০ টাকা। ধরলা নদীর একটি খাল পার হয়ে কাশবনে যেতে হয়। তাই ভ্রমণ পিপাসুদের একবার ওই খাল পাড়ি দিতে দিতে নৌকা ভাড়া ১০ টাকা দিতে হচ্ছে।
এতে একজন ভ্রমণ পিপাসুকে নৌকা পারাপারে ভাড়া দিতে হচ্ছে ২০ টাকা। এভাবে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৫০০ জন ভ্রমণ পিপাসু মানুষকে কাশবনে যেতে নৌকা ভাড়া গুনতে হচ্ছে। এতে নৌকার মাঝিরা অর্থ উপার্জনের সুযোগ পাচ্ছেন।
স্থানীয় নৌকার মাঝি আইয়ুব আলী এ প্রতিবেদককে জানান, কাশফুল দেখতে আসা ভ্রমণ পিপাসু মানুষকে নৌকা পারাপার করতে তারা দৈনিক আয় করছেন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। একবার পারাপার করতে জনপ্রতি ১০ টাকা ভাড়া হিসেবে তাদের এই আয় হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ধরলা পাড়ের কাশবনে শিক্ষা সফরে আসা ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের পানিমাছকুটি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থিত কিশোর-কিশোরী ক্লাবের শিক্ষার্থী শাওন আহমেদ জানান, আমরা শিক্ষা সফরে এসে ধরলা নদীর চরে শোভাসিত কাশবনের ফুলের শুভ্রতা দেখে মুগ্ধ হয়েছি। মনের আনন্দে গান গেয়েছি, কবিতা আবৃতি করেছি, ছবি উঠেছি।
অপর শিক্ষার্থী সাখয়াত হোসেন জানান, কিশোর-কিশোরী ক্লাবের শিক্ষার্থী হিসেবে ক্লাবের স্যারদের আমন্ত্রণে চরাঞ্চলের কাশবনে শিক্ষা সফরে কাশফুলের শুভ্রতায মুগ্ধ হয়েছি। এখানে কাশফুল নিয়ে লেখা ইউনুছ আলী আনন্দ স্যারের একটি কবিতা ‘ফুলবাড়ীর ফুল’ আবৃতি করেছি। এটি আমার কাছে স্মরনীয় হয়ে থাকবে।
শিক্ষার্থী পুষ্পাজ্ঞলি রায় জানান, আমরা শিক্ষা সফরে এসে কাশফুলের শুভ্রতা দেখে মুগ্ধ হয়েছি। এনজয় করেছি। যারা এখানে আসতে পারেনি তারা বড় একটা জিনিস মিস করবে। আমার এ সফর চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
শিক্ষার্থী ঋতু পারভীন জানান, আমরা শিক্ষা সফরে কাশবন দেখতে এসে কাছ থেকে কাশফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করেছি। কাশফুল গাছ থেকে ছিড়ে নিয়ে উপভোগ করেছি কাশফুলের নরম ছোঁয়া। কিশোর-কিশোরী ক্লাবের আবারো কোনো শিক্ষা সফরের আয়োজন করলে আমরা এই কাশবরেন আসবো।
সূদুর লালমনিরহাট থেকে স্ব-পরিবারের আসা ইসরাইল হোসেন জানান, ফুলবাড়ী ধরলা নদীর চরাঞ্চলে ফোটা কাশফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য আমি আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসেছি। খুব ভালো লেগেছে।
এক কৃষক জানান, চরাঞ্চলের একটি অর্থকরী জিনিস হচ্ছে কাশবন।
কাশফুল ঝরে পড়ে গেলে কাশ খড়ের মূল্য বেড়ে যায়। এই কাশ খড় থেকে ঘরের বেড়া, ঝাড়ুু ও পানের বরের জাংগলা তৈরির কাজে লাগে। একারনে এখানকার কাশের খড় আঁটি বেঁধে বিক্রি হয় চড়া দামে।
ফুলবাড়ীতে ধরলা নদীর চরাঞ্চলে বেশ কযেকটি বড় ব্ড় কাশবন থাকলেও ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরে কাশবনের জমির পরিমান রেকর্ড করা হচ্ছেনা। কাশবন চাষাবাদের মধ্যে না পড়ায় এসবের জমির পরিমান রেকর্ড করা হচ্ছেনা বলে জানান ফুলবাড়ী উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফখরুল ইসলাম।
এ ব্যাপারে ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াছমিন জানান, ফুলবাড়ী ধরলা সেতুর পশ্চিম পাড়ের চরাঞ্চলে কাশবন দেখা যাচ্ছে। এর ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার মতো। কাশবন চাষ ছাড়াই প্রাকৃতিভাবে সৃষ্টি হয়।
তিনি আরও জানান, কাশের শিকড় থেকেই এক বছর পর কাশ জন্মায়। এসব কাশের খড় থেকে ঘরের বেড়া ও ঝাড়ু তৈরি হয়। এসব বিক্রি করে অনেকে উর্পাজন করছেন।