মাঙ্কিপক্সকে করোনা মহামারীর মধ্যেই বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
এর পরপরই ভাইরসাটির বিস্তার ঠেকাতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে বিশ্বের নানা দেশ। এবার মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য গুটিবসন্তের টিকাকে অনুমোদন দিলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন(ইইউ)।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ফার্মাসিউটিক্যাল কর্তৃপক্ষ ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি (ইএমএ) এ সংক্রান্ত সুপারিশ করেছে।
মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার পর এবার ইউরোপের দেশগুলোর জন্য এই টিকার অনুমোদন দিলো সংস্থাটি। খবর রয়টার্সের।
সংস্থাটি বলছে, মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে গুটিবসন্ত প্রতিরোধী টিকা 'ইমভেনেক্স' ব্যবহার করা যেতে পারে। ডেনিশ কোম্পানি ‘বাভারিয়ান নরডিক’এ টিকা উৎপাদন করছে।
সম্প্রতি বিশ্বের একাধিক দেশে হু হু করে বাড়ছে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্তের সংখ্যা। গত শনিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউইইচও) মাঙ্কিপক্সকে গ্লোবাল হেলথ ইমার্জেন্সি বা বিশ্ব স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা হিসাবে ঘোষণা করে। ডব্লিউইইচও’র উচ্চ-স্তরের সতর্কতা জারি করার ঠিক পর পরই ইমভানেক্স টিকাকে এই অনুমোদন দেওয়া হলো।
ড্যানিশ বায়োটেকনোলজি কোম্পানি বাভারিয়ান নর্ডিক-এর প্রধান নির্বাহী পল চ্যাপলিন বলেছেন, ‘একটি অনুমোদিত ভ্যাকসিনের উপস্থিতি (মাঙ্কিপক্সের মতো) উদীয়মান রোগগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য দেশগুলোর প্রস্তুতিকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করতে পারে। তবে তা শুধুমাত্র বিনিয়োগ এবং জৈবিক প্রস্তুতির কাঠামোগত পরিকল্পনার মাধ্যমে হতে হবে।’
সাম্প্রতিক সময়ে মাঙ্কিপক্স প্রাদুর্ভাবের মধ্যে ড্যানিশ এই কোম্পানিটি ‘অফ-লেবেল’ (অননুমোদিত ভাবে) ব্যবহারের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত বেশ কয়েকটি দেশে তাদের ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছে। তবে ইউরোপীয় কমিশনের অনুমোদনের পর এই টিকা কোম্পানিটি এখন ইউরোপের সকল দেশেই পাঠাতে পারবে।
বাভারিয়ান নর্ডিক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইউরোপীয় কমিশনের এই অনুমোদনের ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সকল সদস্য দেশের পাশাপাশি আইসল্যান্ড, লিচেনস্টাইন এবং নরওয়েতেও ইমভানেক্স টিকা সরবরাহ করতে পারবে তারা।
ড্যানিশ এই কোম্পানিটি আরও জানিয়েছে, গত দুই দশকে মার্কিন সরকারের উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগের মাধ্যমে ইমভানেক্সের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।
রয়টার্স বলছে, মাঙ্কিপক্স ভ্যাকসিনের ব্যাপক চাহিদার কারণে বাভারিয়ানের শেয়ারের দাম গত তিন মাসে বেড়েছে ১২২ শতাংশ।
উল্লেখ্য, মাঙ্কিপক্স ভাইরাসজনিত অসুখ। স্মলপক্স ভাইরাস শ্রেণির একটি ভাইরাস এ রোগের জন্য দায়ী। ভাইরাসটির দু’টি রূপান্তরিত ধরন রয়েছে— মধ্য আফ্রিকান ও পশ্চিম আফ্রিকান।
রোগটির বিভিন্ন লক্ষণের মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, ঘেমে যাওয়া, পিঠে ব্যথা, মাংসপেশির টান ও অবসাদ। প্রথম পর্যায়ে রোগীর জ্বর আসে, পাশাপাশি শরীরে দেখা দেয় ফোস্কা ও অধিকাংশ ঘটনায় শুরুতে মুখে ফুসকুড়ি ওঠে। পরে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে; বিশেষ করে হাত ও পায়ের তালুতে।
গুটিবসন্ত প্রতিরোধে ২০১৩ সালে ইমভানেক্স ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছিল ইউরোপ। গুটিবসন্তের ভাইরাসের সঙ্গে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের বেশ মিল পেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে ১৯৮০ সালে নির্মূল হওয়া এই অসুখের তুলনায় মাঙ্কিপক্স অনেক কম সংক্রামক ও কম বিপজ্জনক।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৩ সালে গুটিবসন্তের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ইইউ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) এ টিকাকে অনুমোদন দেয়।
-জ/অ