সেতু নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। নির্মাণে ব্যবহৃত হচ্ছে মরিচা পড়া রড ও জমে যাওয়া সিমেন্ট। সেতুর মূল স্ল্যাবের কাজ করা হলেও দুই পাশের সংযোগ সড়কের কোনো কাজই হয়নি। সেতুর দুই পাশের রেলিং ও অন্যান্য কাজ এখনও বাকি। এভাবেই অর্ধেক কাজ করে ঠিকাদার হাওয়া। বারবার চিঠি কিংবা ফোনে যোগাযোগ করা হলেও কর্ণপাত করছে না ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি।
২০১৯ সালে কাজ শুরু করা হলেও এখন পর্যন্ত ৫০ শতাংশের মতো কাজ শেষ হলেও বরাদ্দের ৯৩ শতাংশ টাকা নিয়ে গেছেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক বাদল। বর্তমানে সেতু নির্মানের কাজ বন্ধ রয়েছে।
পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের মধুখালী শাখা নদীতে নির্মাণাধীন সেতু পরিদর্শনে এমন অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এনফোর্সমেন্ট টিম। রোববার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে বলে দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মোহাম্মদ শফিউল্লাহ নিশ্চিত করেছেন।
অভিযানে এলজিইডির পটুয়াখালীর উপজেলার সহকারী প্রকৌশলী মহর আলী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আবুল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তারা। তবে এসময় ঠিকাদারকে পাওয়া যায়নি।
সহকারী প্রকৌশলী মহর আলী বলেন, ঠিকাদারকে কাজ শেষ করার জন্য বারবার তাগিদ দিলেও তিনি যোগাযোগ করছেন না। এমনকি অফিস থেকে বারবার ফোন দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। তার জন্য আমাদের ইঞ্জিনিয়ার ডিপার্টমেন্টের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। বর্তমানে কাজ বন্ধ রয়েছে।
নিম্নমানের কাজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্থানীয়রা আমাদের জানিয়েছে ঠিকাদার অনেক সময় গোপনে রাতে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করেছে। রাতে কাজ করলে আমরা কীভাবে পাহারা দেব। বিল তোলার ক্ষেত্রে তিনি বিভিন্ন প্রভাব খাটিয়েছেন। যার জন্য প্রতি মাসেই আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে কথা শুনতে হচ্ছে।
ঠিকাদার মো. বাদলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মূলত ব্রিজের সাইট সিলেকশনেই বড় ভুল ছিল। কাগজপত্রে ব্রিজ যেখানে পাস করা হয়েছে, সেখানে করা হয়নি। আগে যেখানে ব্রিজ ছিল, সেখানেই নির্মাণ করতে পারলে কোনো সমস্যা ছিল না। আগের ব্রিজের ২০০ মিটার দূরে মূল সড়কের বাইরে ব্রিজ নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে ব্রিজের দুই পাশের অ্যাপ্রোচ সড়ক নেই। এখন অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করতে হলে অন্তত ৩০০ মিটার ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি এলজিইডিকে অধিগ্রহণ করতে হবে। অন্যের জমিতে আমি কীভাবে অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করব। এর সমাধান আমার কাছে নেই। এজন্য আমি এলজিইডিকে একাধিকবার লিখলেও তারা সমাধান দিতে পারেনি। সে কারণেই কাজ বন্ধ রয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা যায়, ব্রিজ নির্মাণে ঠিকাদার কর্তৃক নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের পটুয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রাসেল রনি, মো. মাইনউদ্দীন ও উপ-সহকারী পরিচালক সমীরন কুমার মন্ডলের সমন্বয়ে গঠিত টিম অভিযানে যায়। এনফোর্সমেন্টের অভিযান চলাকালে টিম সরেজমিনে মধুখালী শাখা নদীতে নির্মাণাধীন পার্ডার ব্রিজের নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করে।
তারা রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দেখতে পান, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কাজের টেন্ডার ও কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। মেসার্স কাসেম কনস্ট্রাকশন ও মেসার্স পল্লী স্টোর্স (জেভি) ৩ কোটি ২৭ লাখ ৩৩ হাজার ৯৭৬ টাকার কার্যাদেশ পায়। চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ১৭ অক্টোবর প্রকল্পটি সমাপ্ত করার কথা থাকলেও পরবর্তীতে ঠিকাদারের আবেদনে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। তারপরও কাজ শেষ হয়নি।
দুদক আরও জানায়, সরেজমিনে পরিদর্শনকালে স্থানীয়রা ব্রিজের কাজের জন্য মরিচা পড়া রড ও জমে যাওয়া সিমেন্ট ব্যবহার করার অভিযোগ করেন। স্থানীয়রা ও প্রকৌশলীদের উপস্থিতিতে ঠিকাদারের সাইট রুমে প্রবেশ করে মরিচাপড়া রড ও জমে যাওয়া সিমেন্ট দেখতে পায় দুদক টিম। এছাড়া সরেজমিনে ব্রিজের কাজের অনেক ত্রুটি দেখা যায়। ব্রিজের মূল অংশের কাজ সমাপ্ত হলেও দুই পাশের রেলিং ও অন্যান্য কাজ শেষ করা হয়নি। ব্রিজের মূল স্ল্যাবের কাজ হলেও দুই পাশের অ্যাপ্রোচ সড়কের কোনো কাজই করা হয়নি। প্রকল্পের কাজ প্রায় ৫০ শতাংশ বাকি থাকলেও প্রায় ৩ কোটি ৫ লাখ টাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ইতোমধ্যে প্রদান করা হয়েছে।
-জ/অ