মঙ্গলবার ১৯ আগস্ট ২০২৫ ৪ ভাদ্র ১৪৩২
 

খুলনায় জনবল ও ঔষধ সংকটে ব্যাহত স্বাস্থ্যসেবা
খুলনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫, ৪:২৮ অপরাহ্ন

খুলনা অঞ্চলের মানুষের উন্নত স্বাস্থ্যসেবার লক্ষ্যে ১৯৮৯ সালের ১৭ জানুয়ারি নগরীর বয়রা এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট খুলনা হাসপাতাল। ১৯৯২ সালে যা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রূপান্তরিত হয়। অধিক রোগীর চাপের কারণে ২০০৮ সালে হাসপাতালটিকে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বর্তমানে সেখানে ১৬টি বিভাগের আওতাধীন ৩১ ওয়ার্ডে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয়। তবে নানামুখী সংকটে ভুগছে খুলনা বিভাগের সবচেয়ে বড় সরকারি এ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান।

হাসপাতালের ফার্মেসি বিভাগের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে ১২২ ধরনের ওষুধ সরবরাহ করা হতো। বর্তমানে সরবরাহ করা হচ্ছে ৫১ ধরনের ওষুধ। তাও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এরই মধ্যে নরমাল স্যালাইনের (এনএস) মজুদ শেষ হয়েছে। পাশাপাশি জনবল সংকটের কারণে প্রত্যাশিত সেবা পাচ্ছে না রোগীরা। ৫০০ শয্যার কাঠামোয় ৩০৬টি চিকিৎসক পদের মধ্যে ২০টি শূন্য রয়েছে। সবচেয়ে বেশি সংকট চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর। ১০৯টি পদের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ৭২ জন। ফলে আউটসোর্সিংনির্ভর হয়ে পড়ছে হাসপাতালটি।

মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, মেডিকেল কলেজে বর্তমানে ২০৬টি চিকিৎসকের পদের মধ্যে ৮১টি শূন্য রয়েছে। শূন্যপদের মধ্যে অধ্যাপক পদ ১৭টি, সহযোগী অধ্যাপক ২০টি এবং সহকারী অধ্যাপক পদ রয়েছে ৪১টি। বিশেষ করে ফরেনসিক বিভাগে কোনো অধ্যাপক নেই। শুধু কয়েকজন প্রভাষক দিয়েই চালানো হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ এ বিভাগ।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা বলছেন, প্রয়োজনীয় বেশির ভাগ ওষুধ বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনতে হচ্ছে। সামর্থ্যবানরা কোনোভাবে ওষুধ কিনে চিকিৎসা করাতে পারলেও দরিদ্র রোগীরা তা পারছে না। একইভাবে অধিকাংশ পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করাতে হচ্ছে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে।

তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতি বছর ঠিকাদারের মাধ্যমে ওষুধ কেনা হয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ওষুধ ক্রয়ে সময়মতো দরপত্র আহ্বান করা যায়নি। ফলে হাসপাতালে ওষুধ সংকট দেখা দিয়েছে। ক্রয়কৃত দরপত্র মূল্যায়নের পর ঠিকাদার নিয়োগ হলে ওষুধ কেনার অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হবে। অর্থ বরাদ্দ হলে প্রয়োজনীয় ওষুধ কেনা হবে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ওষুধের সঙ্গে ছোট-বড় মিলিয়ে শতাধিক চিকিৎসাযন্ত্র অচল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। চিকিৎসা সরঞ্জাম সংকটও তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষাও বন্ধ হয়ে গেছে। অচল এসব যন্ত্রের মধ্যে পালস অক্সিমিটার (শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা পরিমাপের যন্ত্র), নেবুলাইজারের (শ্বাসগ্রহণ যন্ত্র) মতো ছোট যন্ত্র যেমন রয়েছে; তেমনি সিটি স্ক্যান, পোর্টেবল এক্স-রে, ডায়ালাইসিস যন্ত্রের মতো বড় ও দামি যন্ত্র রয়েছে। রেডিওলজি বিভাগে থাকা পাঁচটি এক্স-রে যন্ত্রের সবই ফিল্মের অভাবে অচল রয়েছে। একই বিভাগে সিটি স্ক্যান যন্ত্র রয়েছে দুটি। এর মধ্যে একটি নষ্ট। অন্য যন্ত্রটিতে শুধু মস্তিষ্কের স্ক্যান করা সম্ভব।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, প্যাথলজি বিভাগের অটো অ্যানালাইজার যন্ত্র সচল থাকলেও রি-এজেন্টের অভাবে পড়ে থাকছে। ২০২০ সালে যন্ত্রটি স্থাপনের পর আর রি-এজেন্ট কেনা হয়নি। হাসপাতালের ছয়টি ইসিজি যন্ত্রের তিনটি, ১৬টি ফটোথেরাপি যন্ত্রের সব অচল পড়ে রয়েছে। এছাড়া দুটি সিটি স্ক্যান যন্ত্রের একটি, তিনটি ১০০ এমএ পোর্টেবল এক্স-রে যন্ত্রের দুটি অচল রয়েছে। ৫০০ এমএ এক্স-রে যন্ত্র একটি, সাতটি আলট্রাসনোগ্রাম যন্ত্রের পাঁচটি, ১৯টি অ্যানেস্থেসিয়া যন্ত্রের চারটি, ৩০টি ওটি টেবিলের ছয়টি, ১১টি ওটি লাইটের চারটি, একটি ডায়ালাইসিস যন্ত্র, একটি ডায়ালাইসিস রিপ্রেসর, ১২টি কার্ডিয়াক মনিটর ও চারটি আইসিইউর কিছু চিকিৎসা যন্ত্র অচল পড়ে রয়েছে।

এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহসিন আলী ফরাজী দৈনিক জবাবদিহি প্রতিবেদককে বলেন, ‘নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। মাস খানেকের মধ্যে ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ওষুধ ক্রয়ে সময়মতো দরপত্র আহ্বান করা যায়নি। ফলে হাসপাতালে বেশকিছু ওষুধের ঘাটতি রয়েছে। ঠিকাদার নিয়োগের পর ওষুধ ক্রয়ে অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হবে। ওষুধ ক্রয়ে অর্থ বরাদ্দ হলে প্রয়োজনীয় ওষুধ ক্রয় করা হবে।’

এদিকে জনবল ও যন্ত্রপাতি সংকট থাকলেও হাসপাতালের বহির্বিভাগে বসানো হয়েছে একটি ইকো ও ইটিটি যন্ত্র। তবে এখনো সেখানে কার্যক্রম শুরু হয়নি।

চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাসপাতালের চিকিৎসা সরঞ্জাম সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। ঢাকা টিবি হাসপাতাল থেকে ফিল্ম এনে কিছুদিন এক্স-রে চালানো হলেও এখন আবার বন্ধের পথে। ফিল্ম না থাকায় চাহিদা অনুযায়ী এক্স-রে করা যাচ্ছে না। খুলনা বিশেষায়িত হাসপাতাল থেকে এনে চালানো হচ্ছে এমআরআই। তা-ও খুব বেশি জরুরি রোগী বা সুপারিশের রোগী ছাড়া সাধারণ রোগীদের ক্ষেত্রে করা হচ্ছে না। গজ, ব্যান্ডেজ ও তুলার সরবরাহ রোগীর তুলনায় অনেক কম। সার্জিক্যাল আইটেমের সরবরাহ ২৭ থেকে কমে এখন আটে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে গ্লাভস, সিরিঞ্জ, ক্যানোলা, সুতা ও ইউরিন ব্যাগের সরবরাহ নেই।

হাসপাতালে ৫০০ শয্যা থাকলেও প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকছে প্রায় দেড় হাজার। প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৭০০-৮০০ রোগী আসছে। এ অবস্থায় সক্ষমতার তিন গুণ রোগীকে কাঙ্ক্ষিত সেবা দেয়া যাচ্ছে না।

হাসপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালটিতে কাঙ্ক্ষিত সেবা মিলছে না। দিনে মাত্র একবার ডাক্তার দেখতে আসেন। জরুরি প্রয়োজনে ডাকলে ইন্টার্ন চিকিৎসক বা নার্স আসেন। মাঝে মাঝে নার্সরাও বিরক্ত হন। হাসপাতালের খাবারের মান নিয়েও রয়েছে অভিযোগ।

রোগীদের অভিযোগ, তালিকায় থাকলেও অনেক খাবার সরবরাহ করা হয় না। আবার অতিরিক্ত রোগী দেখিয়ে খাবারের বিল লোপাটের অভিযোগ রয়েছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহসিন আলী ফরাজী দৈনিক জবাবদিহিকে বলেন, ‘জনবল সংকটের বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে অচল যন্ত্রপাতি দ্রুত মেরামতের চেষ্টা করা হচ্ছে।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: আক্তার হোসেন রিন্টু
বার্তা ও বাণিজ্যিক বিভাগ : প্রকাশক কর্তৃক ৮২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক (৩য় তলা) ওয়্যারলেস মোড়, বড় মগবাজার, ঢাকা-১২১৭।
বার্তা বিভাগ : +8802-58316172, বাণিজ্যিক বিভাগ : +8802-58316175,+8801711443328, E-mail: info@jobabdihi.com , contact@jobabdihi.com
কপিরাইট © দৈনিক জবাবদিহি সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft