দীর্ঘ ২২ বছর পর আবারো ভারতের সংসদে হামলা হয়েছে। আজ বুধবার (স্থানীয় সময়) লোকসভায় শীতকালীন অধিবেশন চলাকালীন দর্শক গ্যালারি থেকে অধিবেশন কক্ষে লাফিয়ে পড়েন দুই যুবক। তাদের মুখে ছিল "স্বৈরতন্ত্র চলবে না" এবং "জয় ভীম" স্লোগান।
যদিও বড় কিছু ঘটার আগেই সংসদের নিরাপত্তারক্ষীরা দ্রুত তাদের ধরে ফেলেন। পরে তাদেরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এদিন জিরো আওয়ার চলার সময় এই ঘটনা ২২ বছর আগে সংসদে জঙ্গি হামলার স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। সংসদের ভিতরে- বাইরে রীতিমত চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। রেড এলার্ট জারি করা হয় পার্লামেন্ট চত্বরে।
দিল্লি পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় ওই দুজনকে আটক করা হয়েছে। আটক দুজনের একজনের নাম আমন শিন্ডে আর অপরজন হলেন নিলম সিনহা, তারা দুজন যথাক্রমে মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানার বাসিন্দা।
অন্যদিকে দিল্লির পরিবহন ভবনের সামনেও একই রকম ক্যান খুলে ধোঁয়া ছাড়তে দেখা যায় এক যুবক ও এক মহিলাকে। তাদেরকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্ত ধারণা চারজন পরিকল্পনা করে একসঙ্গে এসেছিলেন। তবে তাদের এমন ঘটনা ঘটানোর পেছনের উদ্দেশ্য এখনো জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সংসদ চলাকালীন লোকসভার দর্শক আসন থেকে দুজন প্রথমে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারপর ছুটে গিয়ে স্পিকারের আসনের সামনের খোলা জায়গায় নিজেদের জুতো থেকে বার করে এমন কিছু জ্বালান যা থেকে ধোঁয়া ছড়াতে শুরু করে। বুধবার দুপুরে হামলার পর সংসদ মুলতুবি ঘোষণা করা হয়। পরে আবার অধিবেশন শুরু হলে স্পিকার ওম বিড়লা জানান, পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, এক বেঞ্চ থেকে অন্য বেঞ্চে লাফিয়ে লাফিয়ে হামলাকারীরা হলুদ রঙের গ্যাস ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন। এই ঘটনার পরেই নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে এই দাবি তুলে প্রতিবাদে সরব হন সাংসদরা। কংগ্রেসের সাংসদ ভেবেছিলেন গ্যালারি থেকে কেউ পড়ে গিয়েছে। তারপরে তিনি দেখেন স্পিকারের আসনের দিকে একজন ছুটে যাচ্ছেন। হাতের ক্যান থেকে ছড়িয়ে পড়ছে ধোঁয়া। নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ডিএমকে সংসদ সিন্থিলি কুমারও। তার দাবি, এতে সংসদের নিরাপত্তা সাংঘাতিকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে।
এদিকে ঘটনার পর সমাজবাদী পার্টির সাংসদ দানিস আলী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল থেকে একটি ভিজিটরস পাস উদ্ধার করা হয়েছে। পাস বা সংসদে প্রবেশের অনুমোদন পত্রটি মাইসুরুর বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সিংহের অফিস থেকে দেওয়া হয়েছিল। দানিশ এদিন বলেন, অনুমোদন পত্র পেলেই সংসদে প্রবেশ করা যায় না। তার আগে পাঁচ ধাপে নিরাপত্তা বেষ্টনী পর করতে হয়।
প্রসঙ্গত আজ বুধবারই ভারতে সংসদ হামলার ২২ বছর পূর্তি। ২০০১ সালে ১৩ই ডিসেম্বর আচমকাই পুরনো সংসদ ভবনের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে সংসদ ভবন চত্বরে ঢুকে পড়ে পাঁচ জন সশস্ত্র জঙ্গি। নিরাপত্তা রক্ষীদের বাঁধায় সে সময় সংসদের ভেতরে ঢুকতে না পারলেও সংসদ চত্বরে এলোপাথাড়ি গুলি ছুটতে শুরু করে তারা।