আজ মঙ্গলবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গণভবনে যান জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ।
এ সময় সঙ্গে ছিলেন তাঁর দলীয় মুখপাত্র মামুনুর রশীদ ও ছেলে সাদ এরশাদ। জি এম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগ যেন জোট না করে, সে বিষয়ে শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করেছেন রওশন এরশাদ।
রওশন এরশাদ বলেন, ‘জোট করতে হলে আমাদের সাথে জোট করতে হবে। বর্তমান জাতীয় পার্টির সাথে আওয়ামী লীগ যেন জোট না করে, সেই ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচন যেন সুষ্ঠু হয়, সেই ব্যাপারে কথা হয়েছে।’
রওশন এরশাদ আরো বলেন, ‘জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আমাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেননি। আমার ছেলের জায়গায় উনি ইলেকশন করছেন। ওর কথা তাঁর মনে নাই। আমাদের ইচ্ছা করে বাদ দিয়েছে। কেন তাদের প্রতি সমর্থন থাকবে?’
এ ব্যাপারে জাপার সাবেক মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘জিএম কাদেরের সাথে আমরা নাই। তারা আমাদের দলের অনেককেই মনোনয়ন দেয়নি, বহিষ্কার করেছে। তাদের সাথে জোট নয়, জোট করতে হবে আমাদের সাথে।’ গণভবনে তিনিও রওশন এরশাদের সঙ্গে ছিলেন।
মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘বৈঠকে রওশন এরশাদ বলেছেন, আমি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের পত্নী, বিরোধী দলীয় নেতা, আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। আমার ও এরশাদের ছেলেকে (সাদ) তারা মনোনয়ন দেয়নি। ওই জায়গায় তিনি (জিএম কাদের) নিজে দাঁড়িয়েছেন। চেয়ারম্যান যদি বৈষম্য করে, সাদ কী দোষ করেছে যে, তাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। এরকম আরও দেড় শ কর্মীকে মনোনয়ন দেওয়া হয় নাই। সুতরাং আপনি কার সঙ্গে অ্যালায়েন্স করবেন, আমার সঙ্গে করবেন না ওদের সঙ্গে? প্রধানমন্ত্রী তখন বলেছেন, ঠিক আছে, ব্যাপারটি নিয়ে আমরা ভাবব, আমরা দেখব।
গণভবনের বৈঠকের ব্যাপারে রাঙ্গা আরও বলেন, তিনি (রওশন) হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের পত্নী, তিনি দল পরিচালনা করেছেন, তিনি জেল খেটেছেন আড়াই বছর। সাদ আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে, সেও আড়াই বছর জেলে ছিল। ছোটবেলা থেকে জেলে ছিল। এমপি হওয়ার অধিকার তো এরশাদ সাহেবের সন্তানের রয়েছে। সে (জিএম কাদের) তো চাচা হিসেবে তাকে (সাদ) ভাতিজাই মনে করে। সুতরাং সেই আসনে তিনি যে নিজে দাঁড়িয়েছেন, এটা তো একটা নেতৃত্বসূলভ আচরণ হলো না। তিনি আত্মীয়র সঙ্গে সমস্যা করলেন। তার ভাবির সম্পর্কেও তিনি কুমন্তব্য করেন। তার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, তিনিও করেন। আমার সম্পর্কেও অনেক গীবত তারা করেন। করুক, রাজনীতি করতে গেলে আমাদের শুনতে হয় এগুলো।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিলেও রওশন এরশাদ নির্বাচনে না যাওয়ার কথা সাফ জানিয়ে দেন। এবার এ নিয়েই গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত মাসে ২৮৮ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে জাতীয় পার্টি। এবার জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের দুটি আসন ঢাকা-১৭ এবং রংপুর-৩ থেকে দলটির মনোনয়ন পেয়েছেন চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
এরশাদের মৃত্যুর পর ২০১৯ সালের অক্টোবরে রংপুর-৩ আসনে হওয়া উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন তাঁর ছেলে রাহগির আলমাহি সাদ এরশাদ। ধারণা করা হয়েছিল, এবারও তিনি এই আসনে মনোনয়ন পাবেন।
প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের জন্য ময়মনসিংহ-৪ আসন খালি রাখা হয়। কিন্তু পছন্দের আসনে মনোনয়ন না পেয়ে নির্বাচন করতে অস্বীকৃতি জানান রওশন এরশাদ ও সাদ এরশাদ।
গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী ভোট হবে আগামী ৭ জানুয়ারি।