রাজমিস্ত্রির প্রেমে পড়ে কোটিপতি স্বামীকে হত্যা, তারপর...
ঘটনাটি ভারতের। দেশটির উত্তরপ্রদেশের কানপুরের প্রাইমারি স্কুলশিক্ষক রাজেশ গৌতম গত ৪ নভেম্বর সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। কিন্তু ঘটনার নেপথ্যে কাহিনী প্রকাশ্যে আসার হতবাক সবাই। সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে তদন্তের পর জানা যায়, ঘটনার পেছনে রয়েছে তার স্ত্রীর পরকীয়া প্রেম।
এদিকে, এরই মধ্যে রাজেশের খুনের ঘটনায় তার স্ত্রী উর্মিলা কুমারি পিঙ্কি, তার প্রেমিক শৈলেন্দ্র সোনকার ও সহযোগীকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়েছে পুলিশ।
জানা গেছে, পিঙ্কি তার প্রেমিক শৈলেন্দ্র সোনকারের সাথে ৪ নভেম্বর তার স্বামীকে খুন করে। সেদিনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়- ভোর সাড়ে পাঁচটায় বাড়ি থেকে হাঁটতে বের হন রাজেশ গৌতম। যাওয়ার আগে পিঙ্কি তার স্বামীকে এমনভাবে হত্যা করার পরিকল্পনা করে।
পিঙ্কি তার প্রেমিককে বলেছিল, “স্বামী বাড়ি থেকে বের হলেই তোমাকে ফোন করব।” মূলত দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে ধাক্কা মেরে রাজেশকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন পিঙ্কি।
গত ৪ নভেম্বর পুলিশ রাজেশ গৌতমের মৃতদেহ খুঁজে পায়। সে সময় ধারণা করা হয়েছিল যে তিনি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। কিন্তু, সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে যায়। দেখা যায়- রাজেশ গৌতম হাঁটার জন্য বের হচ্ছেন। এরপর সামনে থেকে তাকে পিষে দেওয়া ইকো গাড়ি এবং খুনিদের নিয়ে পালিয়ে যাওয়া ওয়াগনআর গাড়ি দুটি একই সঙ্গে তার পাশ দিয়ে চলে যায়।
রাজেশ হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর ইকো গাড়িটি আবার তাকে অনুসরণ করে। সুমিত এগিয়ে গিয়ে এই গাড়ি দিয়ে রাজেশকে পিষে দেয়। কিন্তু, তার গাড়িটি একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা খায়। এরপর তিনি গাড়িটি সেখানে রেখে শৈলেন্দ্র এবং তার কাজিন বিকাশ সোনকারের সাথে ওয়াগনআরে পালিয়ে যান। এই সিসিটিভি ফুটেজই, রাজেশকে হত্যায় তার স্ত্রী পিঙ্কি জড়িত থাকার তথ্য প্রকাশ্যে এনেছে।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ ঘটনাটিকে দুর্ঘটনা হিসেবেও বিবেচনা করলেও রাজেশের ভাই খুনের সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন।
অন্যদিকে, রাজেশের ভাই ব্রহ্মদত্ত বলেছেন, এটি একটি খুন। তদন্ত শুরু হলে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ পায় এবং বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। রাজেশের ৪৫ কোটি রুপির জমি এবং ৩ কোটি রুপির বীমার উপর নজর ছিল পিঙ্কির।
পুলিশ বলছে, পিঙ্কি জানিয়েছে- তার স্বামী রাজেশ তার এবং শৈলেন্দ্রের সম্পর্কের কথা জানতে পেরেছিলেন। তাই তাকে পথ থেকে সরানোর পরিকল্পনা করা হয়। রাজেশের নামে ৩ কোটি রুপির বীমা ছিল। তাই রাজেশের হত্যাকে দুর্ঘটনা দেখিয়ে ওই অর্থ পেতে চেয়েছিলেন তিনি। তিনি রাজেশের ৪৫ কোটি রুপির জমিও পেতে চেয়েছিলেন। এরপর শৈলেন্দ্রকে বিয়ে করে একসঙ্গে থাকতে চেয়েছিলেন পিঙ্কি। পিঙ্কির দুটি ছোট বাচ্চাও আছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ২০১২ সালে রাজেশ গৌতমের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল পিঙ্কির। শিক্ষকতার পাশাপাশি জমি-বাড়ির ব্যবসাও করতেন রাজেশ। শুধু তাই-ই নয়, তার পৈতৃক সম্পত্তিও রয়েছে প্রচুর। ২০২১ সালে কানপুরের কয়লা নগরে একটি আবাসন তৈরির কাজ শুরু করেন। সেই নির্মাণকাজের জন্য তার পরিচিত এক রাজমিস্ত্রি শৈলেন্দ্র সোনকারকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কাজের সূত্রে প্রায়ই রাজেশের বাড়িতে যাতায়াত করতেন রাজমিস্ত্রি শৈলেন্দ্র। আর সেই সুবাদেই রাজেশের স্ত্রী পিঙ্কির সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, পিঙ্কি বিএড করেছিলেন। তার সৌন্দর্যের প্রেমে পড়েন রাজমিস্ত্রি শৈলেন্দ্র। এক সময় তাদের মাঝে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু বিষয়টি যখন রাজেশ জানতে পারেন, তখন তিনি শৈলেন্দ্রকে কাজ থেকে সরিয়ে দেন। এরপর থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি শুরু হয়। পিঙ্কির দুটি সন্তান থাকলেও তাদেরকে ছেড়ে শৈলেন্দ্রর সঙ্গে ঘর বাঁধার পরিকল্পনা করেন তিনি। কিন্তু ‘পথের কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন স্বামী রাজেশ। পিঙ্কি চেয়েছিলেন স্বামীর মৃত্যুর পর তার তিন কোটি রুপির বীমা দাবি করবেন। শুধু তাই-ই নয়, ৪৫ কোটি রুপি জমির মালিকানার অধিকারীও হবেন তিনি।
তাই স্বামীকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য সুপারি কিলারকে চার লাখ রুপি দেন পিঙ্কি এবং শৈলেন্দ্র। পুলিশ জানিয়েছে, সুপারি কিলার দিয়ে খুন করানোর আগে রাজেশের খাবারে বিষ মিশিয়ে দিয়েছিলেন পিঙ্কি। কিন্তু সময় মতো হাসপাতালে ভর্তি করানোয় সে যাত্রায় বেঁচে গিয়েছিলেন। তারপর সুপারি কিলার দিয়ে খুন করানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু সুপারি কিলাররা রুপি নিয়ে পালিয়ে যায়।
দু’বার বেঁচে ফেরায় তৃতীয়বার রাজেশকে খুনের পরিকল্পনা করেন পিঙ্কি এবং শৈলেন্দ্র। গত ৪ নভেম্বর ভোর সাড়ে ৫টায় হাঁটতে বের হন রাজেশ। সেই সময় তাকে গাড়ি চাপা দিয়ে খুন করানো হয়। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, আজতাক