প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর, ২০২২, ৩:২৯ অপরাহ্ন
মাদারীপুরে গ্রাম থেকে শহর সবখানেই বেড়েছে কিশোর গ্যাংয়ের আধিপত্য। বর্তমানে মাদারীপুরে এক আতঙ্কের নাম কিশোর গ্যাং। চুরি-ছিনতাই ও আধিপত্য ধরে রাখতে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর দলের সদস্যরা। এমনকি নিজেদের সংঘর্ষের ভিডিও মোবাইল ফোনে ধারণ করে আপলোড করছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এসব ঘটনায় মামলা হলেও রাজনৈতিক ছত্র-ছায়ার কারণে এ অপরাধীরা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। বিচার পাচ্ছে না ভুক্তভোগীরা। ফলে বেড়ে চলছে অপরাধ।
ভুক্তভোগীরা জানান, তাদের সঙ্গে জড়িত আছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের রাজনৈতিক নেতারা। পুলিশ বলছে, তাদের দমনে আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেশ কয়েকদিন আগে রাস্তি এলাকার মনজিলা বেগম (৩০) এবং একই এলাকার রনি হাওলাদার (২৫) নামের দুই ব্যক্তি এ কিশোর গ্যাংয়ের অত্যাচারের শিকার হয়। কিন্তু থানায় অভিযোগ করেও কোনো ফল পাননি তারা। শুধু মনজিলা আর রনি নয় কিশোর গ্যাংয়ের অত্যাচারের বলি একই এলাকার অনেকে। রীতিমতো করছে চাঁদা দাবি, দিতে অপারগ হলে হতে হয় অপমানিত। স্থানীয়দের দাবি দ্রুত কিশোর গ্যাং সদস্যদের প্রতিহিত না করতে পারলে আতঙ্কের ভিতরে দিন কাটতে হবে পুরো এলাকাকে।
অনুসন্ধান করে জানা যায়, জোরে হর্ণ বাজিয়ে মোটরসাইকেল চালানোর প্রতিবাদ করায় গত ২৬ অক্টোবর মাদারীপুর শিবচরের সরকারি বরহামগঞ্জ কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী হাসিব মাহমুদ দিপুকে রাস্তা থেকে তুলে নেয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। পরে লোহার রড দিয়ে মেরে তাকে আহত অবস্থায় উপ-শহর এলাকায় ফেলে রাখে। রাহুল, ফাহাদ, হামজা ও আব্দুল্লাহসহ বেশ কয়েকজনের নামে অভিযোগ দেওয়ার সাতদিন পরে মামলা হয়। তবে এখনও গ্রেপ্তার হয়নি কোনো আসামি।
শিক্ষার্থী হাসিব মাহমুদ দিপু বলেন, আমি কলেজে লেখাপড়া করি, তাদের সাথে কোনো সময় শত্রুতা ছিল না। শুধুমাত্র মোটরসাইকেলে জোরে হর্ণ বাজানোর প্রতিবাদ করায় আমার ওপর হামলা চালানো হয়েছে। ৮-৯ জন মিলে লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করেছে। আমি এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করার পর অভিযুক্তদের এখনো পুলিশ গ্রেপ্তার করেনি। পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে আমার একটা দাবি দ্রুত তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হোক। তারা যেন আর কারো সাথে এমন না করতে পারে। আমি এ ঘটনার উপযুক্ত বিচার চাই।
জানা যায়, রাজনৈতিক ছায়ায় থেকে এসব কিশোর গ্যাং সদস্যরা নিজেদের পরিচিতি বাড়ানো জন্য মারামারি ও সংঘর্ষের ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এমন বেশকিছু ভিডিও ভাইরালও হয়েছে ফেসবুকে। এ ভিডিও দেখে অনেকের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এদিকে গত ৫ নভেম্বর শহর থেকে বাড়ি ফেরার পথে হামলার শিকার হন সদর উপজেলার দক্ষিণ দুধখালীর দিনমজুর শামীম আকন। তার অভিযোগ, আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে পূর্ব রাস্তি এলাকার শাকিব হাওলাদার, রমিজ ও তুষারসহ গ্যাংয়ের সদস্যরা তাকে হাতুড়িপেটা করে।
দিনমজুর শামীম আকন বলেন, আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করি আমি দিন আনি দিন খাই,আমি কোনো সময় কারো সাথে তর্কে জড়াই না। একদিন কাজ শেষে দুধখালী এলাকায় ঘুরতে গিয়ে প্রথমে কিশোর গ্যাং সদস্য শাকিব হাওলাদার, রমিজ, তুষার ও তাদের বন্ধুদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এর জেরে শহরের কাঠপট্টি এলাকায় তারা আমার ওপর হামলা চালায়। সবাই মিলে আমাকে হাতুড়িপেটা করে। পরে চিৎকার চেঁচামেচির একপর্যায়ে আমাকে রাস্তার ওপর ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। আমি তাদের বিচার চাই।
নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক একাধিক স্কুল শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, স্কুলে যাওয়ার পথে কিশোর গ্যাংরা খারাপ প্রস্তাব নিয়ে আমাদের রাস্তা অবরোধ করে। মাঝে মাঝে তাদের ভয়ে স্কুলে যেতে পারি না।
একাধিক অভিভাবকরা বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের কারণে আমাদের ছেলে-মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয়। যে কখন রাস্তায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা কি করে ফেলে। প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি কিশোর গ্যাং থেকে আমাদের রক্ষা করুন।
মাদারীপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি ইয়াকুব খান শিশির বলেন, মাদারীপুর জেলাজুড়ে এক আতঙ্কের নাম কিশোর গ্যাং। চুরি-ছিনতাই ও নিজেদের আধিপত্য দেখাতে গ্যাং সদস্যরা জড়িয়ে পড়ছে সংঘর্ষে। এদের হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না শিক্ষক-শিক্ষার্থী কিংবা পথচারী। এ গ্যাংদের দমনে প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি ও অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ সুধিজনদের।
মাদারীপুরের থানা পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, এ অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। অভিভাবকদের পাশাপাশি স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে সামাজিক আন্দোলন ও কাউন্সিলের মাধ্যমে কিশোর গ্যাংয়ের প্রভাব কমিয়ে আনা হবে।
-জ/অ