গত শনিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সবগুলো আসনে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হবে। তবে সারাদেশের তিনশ সংসদীয় আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের সক্ষমতা নেই নির্বাচন কমিশনের। সব আসনে ইভিএমে ভোট করতে হলে আগামী নির্বাচনের আগে ইসিকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। বিশ্নেষকরা বলছেন, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছ থেকে তিনশ আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত আসতে হবে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিলেই হবে না।
জানাগেছে, ইসির হাতে এ মুহূর্তে মাত্র দেড় লাখ ইভিএম মেশিন রয়েছে। যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে ২০ শতাংশ মেশিন অকেজো হয়ে পড়েছে। ফলে এখন যে মেশিন ইসির হাতে রয়েছে, এ দিয়ে অর্ধেক আসনেই ইভিএম ব্যবহার সম্ভব হবে না। ইভিএম ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কও রয়েছে। বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করছে। বর্তমান নতুন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই অংশীজনের সঙ্গে যে সংলাপ শুরু করেছে, সেখানেই ইভিএম নিয়ে আপত্তি আসছে।
ইভিএম ব্যবহারের জোরালো বিরোধিতা করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনোভাবেই ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না। কারণ, এটি একটি অনির্ভরযোগ্য নিকৃষ্ট যন্ত্র। এই যন্ত্র ব্যবহার করে ডিজিটাল কারচুপির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। ভারতের চেয়ে ১১ গুণ বেশি দামে এই মেশিন ক্রয় করা হয়েছিল। আগামী নির্বাচনে এই যন্ত্র কোনোভাবেই যাতে ব্যবহার না করা হয়, তা নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।
সব আসনে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এ ঘোষণা দেওয়ার এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর নেই। এটি নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিষয়। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিলেই হবে না। অনেক দল এ নিয়ে আপত্তিও করেছে। এখন নির্বাচন কমিশন যদি ইভিএম ব্যবহারে আগ্রহী থাকে, তাহলে তারা সেটা করতে পারে। তবে সব আসনে ইভিএম ব্যবহারের সক্ষমতা বর্তমানে ইসির নেই। নির্বাচনের আগে তারা সেই ব্যবস্থা করতে পারবে কিনা, আবার সেটা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কিনা সেসব অনেক বিষয় রয়েছে।
ইসি-সংশ্নিষ্টরা জানান, দেশে বর্তমানে ভোটার ১১ কোটি ৩২ লাখ। আগামী নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা হালনাগাদে এই সংখ্যা আরও ৫০ লাখ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইসির হিসাব অনুযায়ী, ৫০০ পুরুষ ভোটারের জন্য একটি পুরুষ বুথ ও ৪০০ নারী ভোটারের জন্য একটি নারী বুথ এবং কমবেশি ২৫ হাজার ভোটারের জন্য একটি ভোটকেন্দ্র তৈরি করা হয়। সে হিসাবে আগামী নির্বাচনে পোলিং বুথের সংখ্যাই হবে আড়াই লাখের বেশি এবং ভোটকেন্দ্র হবে প্রায় ৫০ হাজার। প্রতিটি বুথে সম্ভব না হলেও প্রতিটি কেন্দ্রে একটি করে ইভিএম মেশিন ব্যাকআপ রাখতে হয়। সেই হিসাবে তিনশ আসনের সবক'টিতে ভোট করতে হলে ইভিএমের প্রয়োজন পড়বে তিন লাখের মতো। এর বাইরে ভোটারদের মক ভোটিংসহ ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের জন্য আরও দুই লাখ মেশিনের প্রয়োজন হবে। সব মিলিয়ে সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ মেশিনের প্রয়োজন হবে। ইসির হাতে এখন মেশিন রয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫৩৫টি। এর মধ্যে যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে ২০ ভাগ, অর্থাৎ ৩০ হাজার মেশিন অকেজো হয়ে পড়েছে। সব আসনে ইভিএমে ভোট করতে হলে আরও অন্তত সাড়ে তিন লাখ নতুন মেশিনের প্রয়োজন পড়বে।
ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার কর্মকর্তারা জানান, ইভিএম ব্যবহারের জন্য এ পর্যন্ত মাত্র ১৩ হাজার প্রশিক্ষিত জনবল রয়েছে। কিন্তু সারাদেশে একই সঙ্গে ইভিএমে নির্বাচন করতে হলে এক লাখের মতো প্রশিক্ষিত জনবলের প্রয়োজন হবে। আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে এই মেশিন প্রস্তুত করতেই ইসিকে বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।
জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, নির্বাচন ব্যালটে হবে, না ইভিএমে হবে- এ সিদ্ধান্ত আসতে হবে ইসির বৈঠক থেকে। ইসি সিদ্ধান্ত নিলে নতুন করে ইভিএম ক্রয়ের উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, ইভিএমের জন্য ইসির এখন যে প্রকল্প রয়েছে, সেখানে নতুন করে মেশিন কেনার মতো অর্থ নেই। নতুন মেশিন কিনতে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ইসির হাতে এখন যে দেড় লাখ মেশিন রয়েছে, তার পুরো মূল্য পরিশোধ করা হয়নি। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের এখনও ইসির কাছে টাকা পাওনা রয়েছে।