বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জাপানে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধার পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে বাংলাদেশ ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে দেশটির সঙ্গে ইকোনমিক পার্টনারশীপ এগ্রিমেন্ট (ইপিএ) বা অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্ন করবে। উভয় দেশ এই সময়ের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে অঙ্গীকারাবদ্ধ।
বুধবার সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ একথা বলেন। বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি সম্পাদনের লক্ষ্যে পরিচালিত জয়েন্ট স্টাডি গ্রুপ প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন।
বাণিজ্য সচিব জাপানকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতের দেশ এবং বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশিদার উল্লেখ করে বলেন, ‘প্রথমবারের মত আমরা বড় অর্থনীতির একটি দেশের সঙ্গে এ ধরনের অর্থনৈতিক চুক্তি করতে যাচ্ছি। জাপানের সঙ্গে ইপিএ স্বাক্ষর হলে কেবল শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা পাবো না, এর সঙ্গে বিদেশী বিনিয়োগ, শিল্প উপযোগি অবকাঠামো পাবো এবং বৈশ্বিক সরবরাহ কাঠামোর সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারবো।’
জাপানের সঙ্গে ইপিএর চূড়ান্ত স্বাক্ষরের বিষয়ে তিনি আরো বলেন, ‘ইপিএ স্বাক্ষরের ব্যাপারে আমি কোন জটিলতা দেখি না। আমরা খুব বেশি আশাবাদী। যেহেতু আমরা ২০২৬ সালে এলডিসি উত্তোরণ করবো, তাই ২০২৫ সালের ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারি ২০২৬ এর মধ্যে ইপিএ স্বাক্ষর করা হবে। জাপান যেহেতু বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ করেছে এবং অনেক দেশে তাদের বিনিয়োগ রয়েছে, তাই ইপিএ হলে আমাদের বৈশ্বিক সরবরাহ কাঠামোতে যুক্ত হওয়ার নতুন সুযোগ তৈরি হবে।’
তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘আমরা জাপানে পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে আসছি এবং আগামী ২০২৬ সাল পর্যন্ত পাবো। গতবছর জাপানে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ছিলো ৪৫ শতাংশ, যা যে কোনো উন্নত দেশের চেয়ে বেশি। পণ্য ছাড়া সেবা ও বিনিয়োগ খাতেও জাপানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে।’ ইপিএ স্বাক্ষর হলে সেই সম্ভাবনা বাস্তবে রুপ দেওয়া সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি জানান, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরকালে উভয় দেশ দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ককে ‘স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশীপ’ হিসেবে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দু'দেশের মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ হিসেবে সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষরিত হয়। পরে জাপানের বাণিজ্যমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে এলে আরও একটি সমঝোতা স্বাক্ষর হয়।
তিনি বলেন, জয়েন্ট স্টাডি গ্রুপ প্রতিবেদন প্রকাশ মানেই ইপিএর কাজ শেষ নয়। ইপিএর চূড়ান্ত রুপ দেয়ার লক্ষ্যেই দুই দেশ যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনার বিষয়ে ঘোষণা দেয় এবং তিন রাউন্ডের সভা শেষে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন, যা আজ প্রকাশ করা হলো।
জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ইপিএ বাংলাদেশ এবং জাপান উভয়ের জন্য উইন-উইন পরিস্থিতি তৈরি করবে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের উন্নয়নে ইপিএ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।’ তিনি বলেন, ইপিএর স্বাক্ষরের জন্য উভয় দেশ প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাংলাদেশের যেহেতু ২০২৬ সালে এলডিসি উত্তোরণ ঘটবে, সুতরাং এর আগে ইপিএ সম্পাদন করতে হবে।
উল্লেখ্য, প্রস্তাবিত ইপিএ সম্পাদনের লক্ষ্যে উভয় দেশ যৌথভাবে অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্র হিসেবে ১৭টি খাতকে চিহ্নিত করেছে।