পাপ, পাপাচার, পাপ সম্পর্ক ও পাপ-চিন্তা মানুষের হৃদয়কে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ করে এবং তা থেকে আল্লাহর ভয় দূর করে দেয়। এমন কয়েকটি পাপের বর্ণনা দেওয়া হলো।
১. অবৈধ প্রেম ও ভালোবাসা : অবৈধ প্রেম ও ভালোবাসার সম্পর্ক মানুষের অন্তরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ করে এবং তাকে বহুবিদ পাপের পথে পরিচালিত করে। প্রকৃতপক্ষে মানুষের ভালোবাসা একমাত্র আল্লাহরই প্রাপ্য। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর মুমিনরা আল্লাহকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৬৫)
২. দুনিয়ামুখী মানুষের বন্ধুত্ব : দুনিয়ামুখী মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব মানুষকে পার্থিব জীবনের মোহ ও মায়ায় আচ্ছন্ন করে এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের কথা ভুলিয়ে দেয়। ইরশাদ হয়, ‘আজ বন্ধুরা পরস্পরের শত্রু, শুধু আল্লাহভীরুরা ছাড়া।’ (সুরা : জুখরুফ, আয়াত : ৬৭)
৩. জাগতিক মোহ : সীমাহীন জাগতিক মোহ মানুষকে আল্লাহ থেকে দূরে ঠেলে দেয়। অন্তর থেকে আল্লাহর স্মরণ বিলোপ করে। মানুষের চিন্তা ও কাজের ভারসাম্য নষ্ট করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, দুনিয়ার মোহ সব পাপের মূল। (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ১০৫০১)
৪. হারাম উপার্জন : হারাম জীবিকা মানুষের অন্তর থেকে আল্লাহর ভয় দূর করে দেয়। তাতে দূষণ ও কঠোরতা তৈরি করে। মানুষ যখন চুরি করা, ডাকাতি করা, চাপে ফেলে আদায় করা সম্পদ খায়; এমনকি বৈধ কাজে যখন অপচয় করে, তখন সে সৎকাজের সাহস হারিয়ে ফেলে। তার ওপর শয়তানের প্রভাব বাড়তে তাকে। তার অন্তরের নিয়ন্ত্রণ শয়তানের হাতে চলে যায়। অন্তর আল্লাহবিমুখ হওয়ার পরিণতি
যার অন্তরে আল্লাহর স্মরণ ও ভয় নেই সে ভালো কাজে অগ্রসর হতে পারে না, মোনাজাত ও ইবাদতের স্বাদ পায় না; বরং আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে সংকোচ বোধ করে। এ ছাড়া আল্লাহবিমুখ অন্তরে কোরআনের সুসংবাদ ও হুঁশিয়ারি, মানুষের মৃত্যু এবং কাফন-দাফন-কবর কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না। আল্লাহ এমন ব্যক্তিদের ব্যাপারে বলেছেন, ‘যখন তাদের ওপর আমার শাস্তি এলো, তারা কেন কাকুতি-মিনতি করল না, বরং তাদের অন্তর কঠোর হয়ে গেছে। শয়তান সুশোভিত করে দেখিয়েছে—যা তারা করেছে।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৪৩)
আল্লাহবিমুখ অন্তর আল্লাহমুখী করার উপায় হলো :
১. বেশি বেশি জিকির করা : আল্লাহর জিকির ও স্মরণ মানুষের অন্তরকে আল্লাহমুখী করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা মুমিন, তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা প্রশান্ত হয়। নিশ্চয়ই আল্লাহর স্মরণ অন্তরসমূহকে প্রশান্ত করে।’ (সুরা : রাদ, আয়াত : ২৮)
২. দুঃখী মানুষের পাশে থাকা : অন্ন-বস্ত্রহীন মানুষের পাশে দাঁড়ালে, এতিম-দুঃখীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে অন্তর আল্লাহমুখী হয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যদি তুমি তোমার অন্তরকে নরম করতে চাও, তবে মিসকিনকে খাবার খাওয়াও এবং এতিমের মাথায় হাত বুলিয়ে দাও।’ (আনিসু-সারি ফি তাখরিজি আহাদিসি ফাতহিল বারি, পৃষ্ঠা-৬২৩)
৩. কবর জিয়ারত : কবর জিয়ারত, কবর ও কিয়ামত দিবসের আলোচনায় মানুষের অন্তরে আল্লাহর স্মরণ ও ভয় জাগ্রত হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) কবর জিয়ারতে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেন, তোমরা কবর জিয়ারত করো, কেননা তা তোমাদের পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে।
(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১২৮৫)