বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
 

‘নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে দেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে’    গৃহকর্মী হত্যার অভিযোগে বনশ্রীতে বাড়িতে আগুন    ২০২৩ সালে দেশে এইডসে ২৬৬ জনের মৃত্যু     নিউজিল্যান্ডে আরেকটি ঐতিহাসিক জয় টাগইগারদের     নির্বাচন বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞার আহ্বান ওবায়দুল কাদেরের    হবিগঞ্জের ডিসি ও তিন ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ ইসির    ভোট ঠেকানো গণতান্ত্রিক অধিকার নয়: ডিএমপি কমিশনার   
নতুন আশ্রয়ের খোঁজে সাগর পাড়ি দিচ্ছে রোহিঙ্গারা
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৩, ৫:১৩ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: মঙ্গলবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৩, ৫:১৬ অপরাহ্ন

বেশ কিছুদিন ধরেই কাঠের নৌকায় সাগর পাড়ি দিতে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের। গন্তব্য ইন্দোনেশিয়ার আচেহ বন্দর। এই আচেহ প্রদেশ সুমাত্রার উত্তর প্রান্তে অবস্থিত। বাংলাদেশ থেকে যে বন্দরের দূরত্ব প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার।

মিয়ানমারের রাখাইনে থাকতেন তাঁরা। দেশটির সরকারের রোষাণলে ছিলেন অনেকদিন ধরেই। অত্যাচার আর নিপীড়ণের পর সেখানে টিকে থাকাই কঠিন ছিল মুসলিম সম্প্রদায়ের এসব মানুষের। পালিয়ে আসতে থাকেন প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে। দ্য ইকোনোমিস্ট বলছে, ২০১৭ সালে ৭ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।

বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় রিফিউজি ক্যাম্প কুতুপালংয়ে। এখানে ১০ লাখ রোহিঙ্গার বাস। এবার এখান থেকেও পালানোর চেষ্টা করছে তারা। এর অন্যতম কারণ হিসেবে নিরাপত্তার অভাব ও খাদ্যে সংকটের কথাই বলছেন তাঁরা।

দ্য ইকোনোমিস্ট বলছে, বাস্তবতাও এসব অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ করছে। প্রথম প্রথম বিশ্বের মানবিক সংস্থাগুলো এখানে একের পর এক সহায়তা দিতে থাকে। বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য ২০১৭ সালে সাড়ে ৩৪ কোটি মার্কিন ডলারের সহায়তা আসে। কিন্তু কয়েক বছর যেতে না যেতেই সে সহায়তা কমতে শুরু করে।

এ বছর বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএইচও) ঘোষণা দিয়েছে, কুতুপালংয়ের প্রত্যেক বাসিন্দার জন্য এখন আর তারা প্রতি মাসে ১২ মার্কিন ডলার করে খরচ করবে না। এখন থেকে প্রতি মাসে প্রত্যেকে ১০ মার্কিন ডলারের রেশন পাবেন। এতে আগের চেয়ে সহায়তা কমে গেল ৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

আগের সহায়তায় শিশুদের কিছুটা হলেও উপকার হলেও এবার আর সেই সুযোগ নেই। এরই মধ্যে সেখানে তাদের শরীরে দেখা দিয়েছে অপুষ্টি।

এ ছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরও বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ইকোনোমিস্ট। থাকার জন্য বাঁশ ও ক্যানভাস দিয়ে যে তাঁবু বানানো হয়েছে, সেটি বেশি দিন বসবাসের যোগ্য নয়। এরই মধ্যে সেখানে এখন বস্তি হয়ে গেছে। এ কারণে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বেড়ে গেছে। ক্যাম্পের পাঁচভাগের দুভাগ স্ক্যাবি রোগে ভুগছে।

এর বাইরে কুতুপালংয়ে নিরাপত্তা ঘাটতি তো আছেই। ক্যাম্পে পতিতাবৃত্তি ও বাল্যবিবাহ বেড়েই চলেছে। গড়ে উঠেছে বিদ্রোহী গ্যাং। একের পর এক অপহরণ ও ধর্ষণ হচ্ছে। এ বছরের শুরু থেকেই হত্যাকাণ্ড হতে থাকে। বেশির ভাগ সময় এসব গ্যাংয়ের টার্গেট থাকে রোহিঙ্গা নেতারা। এ বছরের প্রথম ৬ মাসে ক্যাম্পে বিভিন্ন হামলায় অন্তত ১৬ জন নিহত হয়। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকারা অর্থের বিনিময়ে এসব হত্যাকাণ্ডে পরোক্ষ মদত দিচ্ছে বলে অভিযোগ।

আর এসব কারণেই আর ক্যাম্পে থাকতে চাইছে না রোহিঙ্গারা। গত মাসে পরিবার নিয়ে এই ক্যাম্প ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন আবদুর রহমান নামের ৩৬ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা। তিনি ও তাঁর কয়েকজন আত্মীয় মিলে ৩ হাজার ডলার দিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

গত ২১ নভেম্বর নৌকায় করে যাওয়ার জন্য তারা যখন সাগরপাড়ে যায়, সেখানে তখন আরও ৩০০ রোহিঙ্গা ছিল। এরা সবাই মালয়েশিয়া অথবা ইন্দোনেশিয়া যাওয়ার জন্য এখানে এসেছে। বেশির ভাগই অবিবাহিত নারী। কিন্তু পরদিনই একটি সশস্ত্র গ্যাং তাদের আটকে দেয়। এ সময় মুক্তিপণও দাবি করা হয়। পরে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। নিয়ে আসা হয় ক্যাম্পে। আবদুর রহমান বলছেন, ওই গ্যাংয়ের লোকেরা তাদের ওপর আবার হামলা চালাতে পারে।

এ বছর কুতুপালং ক্যাম্প থেকে পালিয়ে গেছে ৩ হাজার ৭০০ রোহিঙ্গা। আন্দামান পেরিয়ে তারা ইন্দোনেশিয়া গেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। গত নভেম্বর থেকে অন্তত ৮টি নৌকায় করে আরও প্রায় শতাধিক রোহিঙ্গা বেশ কয়েকবার পালানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু আচেহ বন্দরে তাদের আর স্বাগত জানানো হচ্ছে না। ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে সাগরে। এ কারণে এরা এবার মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু সেখানে যাওয়াও কঠিন।

এ বছর বেঁচে থাকার তাগিদে এভাবে সমুদ্র পাড়ি দিতে চাওয়া অন্তত ২২৫ জন নিহত হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এই সংখ্যা দ্বিগুণ। হিসাবের বাইরে আছে আরও অনেকে।

রোহিঙ্গারা যে একের পর এক অবজ্ঞার শিকার হচ্ছে- আন্দামানে এই সংকটই এর আরেক উদাহরণ। কুতুপালং ক্যাম্প থেকে বের হয়ে বাইরে কোনো কাজ করার অনুমতি রোহিঙ্গাদের দেয়নি বাংলাদেশ সরকার। এমনকি ভেতরে কোনো স্কুলও নেই। আর এ কারণেই সেখানে একের পর এক সহিংসতা হয়েই যাচ্ছে।

দ্য ইকোনোমিস্ট বলছে, এভাবে একটি বড় জনগোষ্ঠীকে কাজে যুক্ত না করা, জনবলের বিরাট অপচয়। মনে করা হচ্ছে, এসব রোহিঙ্গা আবার তাদের নিজ এলাকায় ফিরে যেতে পারবে। হয়তো এ কারণে এদের কাজে লাগানো হচ্ছে না। যদিও মিয়ানমারের জান্তা সরকার বলছে, এদের ফিরিয়ে নেওয়া হতে পারে। কিন্তু তারা কোনো প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে না।

প্রতিবেদনটিতে এই সংকট নিরসনে কিছু সুপারিশও করা হয়। সেখানে বলা হয় বিশ্বের ধনী দেশগুলোর উচিত রোহিঙ্গাদের শিক্ষা ও কাজের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান জানানো, চাপ প্রয়োগ করা। এ ছাড়া এসব রোহিঙ্গাদের ভাগ করে এসব দেশ নিয়ে নিতে পারে। এর আগে কয়েক শ রোহিঙ্গাকে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ইউরোপ নিয়েছে প্রায় ৩ হাজার রোহিঙ্গা। এই সংখ্যা যথেষ্ট নয়। এমনকি বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির উচিত রোহিঙ্গাদের সহায়তায় তহবিল বাড়ানো।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. আক্তার হোসেন রিন্টু
বার্তা ও বাণিজ্যিক বিভাগ : প্রকাশক কর্তৃক ৮২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক (৩য় তলা) ওয়্যারলেস মোড়, বড় মগবাজার, ঢাকা-১২১৭।
বার্তা বিভাগ : +8802-58316172. বাণিজ্যিক বিভাগ : +8801868-173008, E-mail: dailyjobabdihi@gmail.com
কপিরাইট © দৈনিক জবাবদিহি সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft