প্রকাশ: সোমবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৩, ৬:২৮ অপরাহ্ন
হত্যা মামলার আসামীদের জামিন মঞ্জুর করায় ক্ষিপ্ত হয়ে বিচারকের প্রতি জুতা নিক্ষেপ করেছেন মামলার বাদী।
গতকাল সোমবার দুপুরে পঞ্চগড় আদালতে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (পঞ্চগড়-১) এই ঘটনা ঘটে। বিচারককে জুতা নিক্ষেপকারী মিনারা আক্তার (২৫) নামের ওই নারীকে পুলিশ আটক করেছে।
আইনজীবী ও বাদীর পরিবার জানায়, গত ৫ ডিসেম্বর পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে ছোট ভাই আব্দুল মমিনের (৬৫) কিলঘুষিতে বড় ভাই ইয়াকুব আলী (৮৩) মারা যান।
এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই নিহত ইয়াকুব আলীর মেয়ে মিনারা আক্তার বাদী হয়ে পঞ্চগড় সদর থানায় ১৯ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় সোমবার দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত পঞ্চগড়-১ এ ১৯ জনের মধ্যে ১৬ জন আসামী আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন।
আদালতের বিচারক অলরাম কার্জি শুনানী শেষে সকল আসামীকে অন্তবর্তীকালীন জামিনের আদেশ দিলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন বাদী। এ ঘটনায় আদালতে হট্টগোল শুরু হয়। এ সময় বাদী মিনারা আক্তার ক্ষিপ্ত হয়ে বিচারকের উদ্দেশ্যে জুতা নিক্ষেপ করেন। সে সময় মিনারা বেগমকে আটক করে হেফাজতে নেন পুলিশ সদস্যরা। পরিবেশ থমথমে হয়ে উঠলে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় দুই ঘন্টা পর আবার আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী হাবিবুল ইসলাম হাবিব বলেন, গত কয়েক দিন আগে বাদীনির বাবা মারা গেছেন। আজ (সোমবার) তাদের বাড়িতে কুলখানি হচ্ছে। এ অবস্থায় একটি হত্যা মামলায় জামিনের জন্য আবেদন করা সব আসামিকে জামিন দেয়া কোন ভাবে কাম্য নয়। বিচারকের এমন আদেশে আমরা আদালত ত্যাগ করে চলে এসেছি। এই মামলার বিজ্ঞ বিচারক সাধারন মামলাগুলোর আসামীদের জামিন দেয়না। কিন্তু ৩০২ ধারার জামিন অযোগ্য হত্যা মামলার আসামীদের কিভাবে কেন জামিন দিল? এটা বোঝা যাচ্ছেনা। হত্যাকান্ডের ৭ দিনের মাথায় আসামীরা জামিন পায় আইনজীবী হিসেবে এটা আমরা কখনো দেখি নাই।
এদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী রাকিবুত তারেক বলেন, আসামিদেরকে আগামী ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন আদালত। আর মামলার যারা মূল আসামী তারা আত্মসমর্পন করেননি। যারা আত্মসমর্পন করেছে তাদের অধিকাংশই ছিল নারী। এছাড়া আসামিদের বক্তব্য ছিল ওই ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়নি, তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। আর যেহেতু মামলার জব্দ তালিকায় এবং সুরতহাল রিপোর্টের নথিতে এই তথ্য নেই তাই হয়তো সার্বিক বিবেচনা করে আদালত তাদের জামিন দিয়েছেন। একটি হত্যা মামলার ১৯ আসামীর মধ্যে ১৬ আসামী হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে আদালত সবার জামিন মঞ্জুর করেন। এ সময় উত্তেজিত হয়ে মামলার বাদী মৃত ইয়াকুব আলীর মেয়ে বিচারকের উদ্দেশ্যে জুতা ছুঁড়ে মারেন। এ ঘটনার পরই আদালতের পুলিশ তাকে আটক করেছে।
এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী বলেন, আদালতে চলাকালীন একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনার খবর শুনেছি। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কেউ এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ করেনি। যার কারণে সমিতির পক্ষ থেকে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
আদালতের পরিদর্শক মো. জামাল হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মিনারা আক্তার এখন আদালত পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। আদালতের সিদ্ধান্ত পেলে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। সর্বশেষ সন্ধা ছয়টা পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত জানা যায়নি।