মোংলায় আশংকাজনক হারে বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত জুন মাসে এখানে মাত্র ২জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হলেও চলতি মাসের এ পর্যন্ত (২৭জুলাই) ২৭জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এখানে গড়ে প্রতিদিন একজন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। এরমধ্যে ডেঙ্গু উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসা এক শিশু চিকিৎসা নেয়ার আগেই মারা গেছেন। তাই ডেঙ্গু রোগীর চাপ বাড়ায় আগামী সপ্তাহে ডেঙ্গুর দ্বিতীয় ইউনিট চালু করতে যাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ জানান, মুলত গত জুন মাস থেকেই মোংলাতে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। ওই মাসে মাত্র ২জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেও পরবতীর্তে তা আশংকাজনক হারে বাড়তে থাকে। চলতি মাসের ২৭ জুলাই (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন ২৭জন।
এরমধ্যে ২৭জুলাই বৃহস্পতিবার সকালে ভর্তি হয়েছেন ৪জন। বর্তমানে হাসপাতালের ডেঙ্গু ইউনিটে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন ৬জন। আর বুধবার ২৬জুলাই থাকা ৬জনের মধ্যে ৪জন সুস্থ্য হয়ে বাড়ীতে ফিরে গেছেন। চলতি মাসের এ পর্যন্ত ২৭জনের মধ্যে ৪জন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা নিয়ে বাড়ীতে চিকিৎসারত রয়েছেন। বাকীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন এ হাসপাতালে। হাসপাতালে আসা ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে বেশির ভাগই শিশু-কিশোর, যাদের বয়স ১১মাস, ৩, ৬, ৮, ৯, ১০, ১৫, ১৭ ও ২১ বছর। এরপর রয়েছেন মধ্য বয়সী নারীরা। এ সপ্তাহেই ডেঙ্গু উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসা রোগী মারুফ (১২) চিকিৎসা সেবা নেয়ার আগেই মারা যান। মারুফের বাড়ী পৌর শহরের সিগনাল টাওয়ার এলাকায়। বর্তমানেও সিগনাল টাওয়ার এলাকার ৪জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। পৌর এলাকাতেই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি। এরমধ্যে পৌরসভার ৮ ও ৯নম্বর ওয়ার্ডের ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি লক্ষণীয়। কারণ এই দুই ওয়ার্ডের লোকজনই হাসপাতালে বেশি আসছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে।
সিগনাল টাওয়ার এলাকার বাসিন্দা মো: রুহুল আমিন বলেন, আমার নাতি জান্নাতুলের (১১মাস) তিন দিন ধরে জ্বর। এরপর বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালে আনার পর পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। এখন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
একই এলাকার সেলিনা বেগম বলেন, নাতির জ্বর ৭/৮দিন আর মেয়ের জ্বর দুইদিন বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালে এসে পরীক্ষা করলে দুইজনেরই ডেঙ্গু ধরা পড়েছে।
একই এলাকার লাভলি বেগম বলেন, বুধবার রাতে তার মেজো ভাবি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালে আনার পর ডাক্তার পরীক্ষা করে বলেছেন তার ডেঙ্গু হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো: শাহীন বলেন, মোংলায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়লেও মুলত হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার কীট সংকট রয়েছে। তাই কারো জ্বরের বয়স তিন চার দিন হওয়ার পর ডেঙ্গু পরীক্ষা করালে ভাল হয়। কারণ তাতে ডেঙ্গু সনাক্ত যেমন সহায়ক হবে, তেমনি কীটেরও অপচয় কম হবে। জ্বর হলেই যে ডেঙ্গু হয়েছে এমনটা ঠিক নয়। জ্বরের শুরুতেই পরীক্ষা করালে তাতে ডেঙ্গু নাও ধরা পড়তে পারে । তাই একটু দেরি করে অথার্ৎ তিন দিনের মাথায় করালে ডেঙ্গু সনাক্তে সহায়ক হয়। আর প্রথম দিনে করলে তাতে যদি ডেঙ্গু ধরা না পড়ে সেক্ষেত্রে ওই রোগী ও পরিবারসহ আশপাশে সংক্রমণ আরো বেড়ে যাওয়ার আশংকা থেকে যায়। তিনি আরো বলেন, এ হাসপাতালে প্রথমবারের মতে সেল কাউন্টারের মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগীদের প্লাটিনেট কাউন্ট পরীক্ষার কাজ শুরু করা হয়েছে বৃহস্পতিবার (২৭জুলাই) থেকেই। এ পরীক্ষার জন্য খরচ নেয়া হচ্ছে মাত্র ১শ টাকা। আর এ পরীক্ষা বাহিরে করালে তাতে ৩শ/৪শ টাকা খরচ হয়ে থাকে। আর ডেঙ্গু পরীক্ষায় হাসপাতালে কীটের খরচ নেয়া হচ্ছে মাত্র ৫০টাকা। এতে গরীর রোগীরা উপকৃত হচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ায় ৬বেডের প্রথম ইউনিটের পাশাপাশি আগামী সপ্তাহে নতুন করে আরো ১০বেডের ডেঙ্গু ইউনিট চালু করা হবে। তাই ডেঙ্গুকে ভয় না করে, করোনার মত ডেঙ্গু পরিস্থিতিও মোকাবেলায় সচেতনতার পাশাপাশি সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে একসাথে কাজ করার আহবাণ জানান তিনি।