মো. লিটন হোসেন লিমন ,নাটোর প্রতিনিধি
সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে থোকায় থোকায় ঝুলছে চায়না জাতের হলুদ রঙয়ের কমলা। কমলা ভাবে গাছের ডাল মাটিতে নুয়ে পড়েছে।
কমলার চাষ যে শুধু পাহাড়ী অঞ্চলেই হয় এমন ধারণা পাল্টে দিয়ে এখন সমতল ভূমিতে বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করে রীতিমত তাক লাগিয়েছেন নাটোরের জাকির আহমেদ উজ্জল।
পেশায় একজন শিক্ষক হলেও তিনি সমতল ভূমিতে চায়না জাতের কমলা চাষ করে সফল হয়েছেন।
জানা গেছে, ২০১৯ সালে নাটোর সদর উপজেলার গাজীপুর বিল এলাকায় আড়াই বিঘা জমিতে চায়না জাতের কমলা চাষ শুরু করেন তিনি। দীর্ঘ তিন বছরের পরিচর্যা আর পরিশ্রমে এ বছর প্রতিটি গাছে পর্যাপ্ত পরিমানে কমলা এসেছে।
এসব কমলা দেখতে প্রতিদিন বাগানে দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন। জাকির আহমেদ উজ্জল নাটোর সদর উপজেলার গাজীপুর বিল এলাকার বাসিন্দা এবং হয়বতপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আড়াই বিঘা জমিতে প্রায় ২০০টি কমলা গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে চায়না জাতের হলুদ কমলা।
বাগান মালিক জাকির আহমেদ উজ্জল কমলা গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। কমলার ভারের গাছ নুয়ে পড়েছে। কোন কোন গাছে লাঠির সাহায্যে বেঁধে রাখা হয়েছে। হলুদ রংয়ের কমলা গুলো সবাইকে যেন কাছে ডাকছে।
চোখ জুড়ানো হলুদ কমলার সৌন্দর্যের সমারোহ দেখতে প্রতিদিন শত শত উদ্যােক্তা ও দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন। অনেকে কমলা দেখে মুগ্ধ হয়ে ছবি ও সেলফি তুলতে দেখা গেছে।
এসব কমলা খেতে সুমিষ্ট এবং আকারেও বেশ বড়। কয়েক দিনের মধ্যই এসব কমলা বাজারে বিক্রির জন্য উপযোগী হবে।
বাগান দেখতে আসা দর্শনার্থী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, নাটোরের মাটিতে যে বিদেশের ফল চাষ হচ্ছে তা দেখতে এসেছি।
এসে দেখি এত পরিমানে ফল এসেছে যা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। উজ্জল ভাইয়ের অসাধারণ এ উদ্যোগ দেখে আমি অনেক মুগ্ধ হয়েছি। বাংলাদেশের মাটিতে এমন কমলা উৎপাদন করা সম্ভব তা এ বাগানে না আসলে বুঝতাম না।
তিনি কমলা চাষে সফল হয়েছে। ভবিষৎতে তার বাগান দেখে এলাকার অনেকে এ ফল চাষে আগ্রহী হবেন বলে আশা করছি।
বাগান পরিদর্শনে আসা আরেক দর্শনার্থী রফিক হোসেন বলেন, উজ্জল ভাই শিক্ষকতার পাশাপাশি এত সুন্দর কমলা বাগান তৈরি করেছেন।
যা দেখে সবাই মুগ্ধ হচ্ছেন। অনেকের মুখে শুনে আমরা বাগান পরিদর্শনে এসেছে। কমলা দেখে আশ্চার্য হয়েছি, দেশের মাটিতে এত ফল কি ভাবে উৎপাদন করা সম্ভব। প্রতিটি গাছের ডালে ডালে প্রচুর ফল এসেছে। আমরা বাগানের ফ্রেস কমলা খেলাম।
কমলার যে স্বাদ ও সুমিষ্ট তা বাজারের কমলার চেয়ে কোন অংশে কম নয়। আমরা বাজার থেকে যে বাহিরের কমলা কিনে থাকি হুবুহু একই স্বাদ ও সুমিষ্ট। যা না খেলে বিশ্বাস হতো না।
বাগান মালিক জাকির আহমেদ উজ্জল জানায়, তাঁর অনেক দিনের স্বপ্ন ফলের বাগান করবেন। পরিবারের কেউ কৃষিকাজ না করলেও তিনি কৃষি কাজ করতে আগ্রহী হন।
পারিবারিক অনেক বাঁধা পেরিয়ে এরপর ২০১৯ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে ২০০টি কমলার চারা সংগ্রহ করে জমিতে রোপন করেন। তারপর তিনি দীর্ঘ কয়েক বছরের পরিচর্যায় কমলা চাষে সফল হয়েছে। প্রতিটি গাছের ডালে ডালে ঝুলছে হলুদ পাকা সুমিষ্ট কমলা। এখন তিনি সবার কাছে একজন কৃষি উদোক্তা হিসেবে পরিচিত পেয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আমার কমলা বাগান দেখতে বহু দুর থেকে প্রতিদিন দর্শনার্থীরা আসছেন। সবাই বাগান দেখে মুগ্ধ হয়ে প্রশাংসা করছেন।
অনেক চারা কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন। প্রতিদিন বাগান থেকে চারা বিক্রি করছি। আমাদের দেশের অনেক বেকার যুবক রয়েছে। যারা চাকুরির আশায় বাড়িতে বসে থাকে।
আমি বলতে চাই, বাড়িতে বসে না থেকে নিজস্ব জমিতেই ফল চাষ শুরু করতে পারেন। এতে যেমন আর্থিক ভাবে লাভবান হবেন। অন্যদিকে দেশে পুষ্টি চাহিদা মিটবে।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, পাহাড়ি জাতের কমলা নাটোরে চাষাবাদ শুরু হয়েছে।
জেলার বেশ কয়েকজন কৃষক এই ফল চাষ শুরু করেছেন। এতে করে একদিকে যেমন দেশে পুষ্টি চাহিদা মিটাবে অন্যদিকে কৃষকরা আর্থিক ভাবে লাভবান হবেন।
তরুণ কৃষি উদোক্তারা কমলা চাষে আগ্রহী হবেন। ফল চাষে কৃষি বিভাগ থেকে প্রতিনিয়তই কৃষি উদ্যোক্তাদের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।