অপরূপ সুন্দর ও সৌন্দর্যের প্রতিক বিরল প্রজাতির জলময়ূর পাখির দেখা মিলছে শেরপুর জেলার বিভিন্ন জলাভূমিতে। অনেকের কাছে এ পাখিকে প্রেমের পাখি বলেও পরিচিতি।
এ পাখির প্রজননকাল জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এ সময়ই সাধরণত. বেশি দেখা মেলে জোড়ায় জোড়ায়
জল-ময়ুর পাখির।
বিভিন্ন খালবিল ও জলাশয়ে যেখানে জলজ উদ্ভিদ বিশেষ করে কচুরিপানা, শাপলা, পদ্মবন এবং ঘন জলজ ঘাসের দাম বা জাং রয়েছে, সেখানেই প্রজননের সময় জল-ময়ুরের ভিড় পরিলক্ষিত হয়।
বড় বড় শাপলা অথবা পদ্মপাতার ওপড় শুকনো ঘাস ও আগাছার জড়ো করে এ পাখি বাঁসা বাঁধে। সাধারণত. স্ত্রী পাখি ৪টি ডিম দেয়ার পর পুরুষ পাখিই নূন্যতম ২৫ দিন ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়।
আবার ডিম ফোটার সাথে সাথেই পাখির বচ্চাগুলো হাঁটা-চলা ও সাঁতার কাটতে পারে। দেড় মাস বয়সেই বাচ্চাগুলো উড়তে শেখে।
এ ব্যাপারে শেরপুর জেলার পাখি গবেষক, প্রবিণ সাংবাদিক মুগনিউর রহমান মনি দৈনিক জবাবদিহিকে বলেন, জল-ময়ুর পাখিকে অনেকেই নেউ, নেউ পিপি, পদ্মপিপি বা মেওয়া পাখি বলে থাকেন।
তিনি এ পাখি সমন্ধে বলেন, জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এ পাখি বংশবৃদ্ধির জন্য স্ত্রী পাখি পুরুষ পাখির সাথে মিলিত হয়ে দইুবারে ৪টি করে ডিম দেয়।
প্রজননকালে এসব পাখির লম্বা পুচ্ছ দেখা যায়। কিন্তু আশ্চার্য জনক হলেও সত্য শীতকালে এ পাখি পুচ্ছহীন হয়ে যায়। শেরপুরের আঞ্চলিক ভাষায় জল-ময়ুর পাখিকে নেউয়া পাখি বলা হয়।
শেরপুর জেলা উত্তর গারো পাহাড়ের ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার বিলাঞ্চলে ও এসব পাখির দেখা মেলে কালে-ভর্দ্রে। এ ছাড়া জেলার রৌহা বিল, কেউটা বিল, নকলার কুরসা বিল ও ঝিনাইগাতী উপজেলার বগাডুবি বিলসহ শ্রীবরদী ও নালিতবাড়ীর বিলাঞ্চলে এ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে।
পূর্ণবয়স্ক পুরুষ পাখির দৈর্ঘ্য ২০ থেকে ৩২ সেন্টিমিটার ও প্রসারিত ডানা ৫০ থেকে ৫৫ সেন্টিমিটার। পুরুষ পাখির ওজন ১৫০ থেকে ২০০ গ্রাম। স্ত্রী পাখির ওজন একটু কম। সাধারণত. ২২০ থেকে ২৫০ গ্রাম হয়ে থাকে।
পাখির মাথা, ঘাড় ও দেহের নিচের পালক চকচকে নীলচে বেগুনি কালো রংয়ের। ডানা ব্রো সবুজ। লেজের তলা খয়েরি লাল। চোখের ওপড়ে চওড়া লম্বা সাদা টান থাকে। চোখ কালো। চুল হলুদ। পা ও পায়ের আঙুল লম্বা। এ পাখির জীবনকাল মাত্র ৪ থেকে ৫ বছর।
এ পাখি জলজ উদ্ভিদের কঁচিপাতা, গুল্ম, বীজ, অঙ্কুর, পোকা, শুককীট, শালুক ইত্যাদি খেয়ে বেঁচে থাকে। এ ব্যাপারে শেরপুরের ওই পাখি গবেষক আরো বলেন, একশ্রেণির লোক মৎস্য চাষের নামে বা অবৈধভাবে দখলের উদ্দেশ্যে জলজ উদ্ভিদ সমৃদ্ধ খাল, বিল, জলাশয় যে সব স্থান জল-ময়ুর, কালিম, কোড়া, দলপিপি, পানমুরগি, গুরগুরি, ঝিল্লি, ডাহুক, পানকৌড়িসহ বিভিন্ন জলনির্ভর পাখির অভয়াশ্রম হিসেবে পরিচিত সে সব স্থানে মৎস্য চাষ করে জলাভূমি ধংসের কারণে পাখির আবাসস্থল দখলে নেয়ায় পাখির সংখ্যা আশঙ্কাজনক ভাবে কমে
যাচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রশাসরে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।
পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিন ভয়েসের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মারুফুর রহমান ফকির জবাবদিহিকে বলেন, আমরা বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় জীব বৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করছি। এ সব বিরল পাখির দেখাই মেলে না। ভাগ্যক্রমে আমাদের শেরপুর জেলায় দেখা মিলছে।
এ পাখিগুলো রক্ষায় সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের ও সচেতনার প্রয়োজন। সেই সঙ্গে এগুলোকে রক্ষায় সব মহলের এখনই সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।’
জানা যায়, বর্তমাণে পৃথিবীতে খুবই অল্প সংখ্যায় পাখিটির দেখা মেলে। যা পরিবেশের জন্য বিপদজনক। ’ ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও ) মো: ফারুক আল মাসুদ দৈনিক জবাবদিহিকে বলেন, অপরূপ সুন্দর এবং সৌন্দর্য্যের প্রতিক বিরল প্রজাতির জল-ময়ুর পাখির দেখা মিলছে গারো পাহাড়ের বিলাঞ্চলে যাকে সৌভাগ্যই বলতে হয়। এসব পাখি নিধনে তৎপরদের যে কোন মূল্যে দমন করা হবে।’