গাজীপুরের কালীগঞ্জ জনসেবা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষের অবহেলায় শিরিনা আক্তার (৩০) নামের প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনার ৪৭ দিন পর করব থেকে লাশ উত্তোলন করা হয়েছে।
শনিবার (০৮ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চুয়ারিয়াখোলা গ্রামের সামাজিক কবরস্থান থেকে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নাফিজ এলাহীর উপস্থিতিতে এ লাশ উত্তোলন করা হয়।
এর আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় গত ২১ আগস্ট রাতে ওই প্রসূতির মৃত্যু হয়। পরদিন ২২ আগস্ট তাকে সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
লাশ উত্তোলনের সময় অন্যদের মধ্যে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার উপ-রিদর্শক (এস.আই) মশিউর রহমান খান, স্থানীয় ইউপি সদস্য সাদিকুর রহমান, মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. রফিকুল ইসাম ছাড়াও থানার আরো কয়েকজন এস.আই উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, গত ২১ আগস্ট উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চুয়ারিয়াখোলা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী শিরিনা আক্তারের প্রসব বেদনা নিয়ে কালীগঞ্জে জনসেবা হাসপাতালে ভর্তি হন।
পরে সেখানে রক্তশূণ্য প্রসূতি শিরিনার এবি পজেটিভ রক্তের প্রয়োজন থাকলেও তাকে পুশ করা হয় বি পজেটিভ রক্ত। পরে প্রসূতির অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকায় প্রেরণ করেন। ঢাকায় নেওয়ার সময় রাস্তায় তার মৃত্যু হয়।
ওই ঘটনায় দেশের বিভিন্ন জাতীয় গনমাধ্যমগুলোতে সংবাদ প্রচার হয়। পরে ২৪ আগস্ট র্যাপিট এ্যাকশন ব্যাটিলিয়ন (র্যাব-১) ৬ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেন।
পাশাপাশি এ ঘটনায় স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে গাইনি বিভাগের চিকিৎসক সানজিদা পারভীনকে আহবায়ক এবং ডাক্তার মুনমুন আক্তার ও অ্যানেস্থসিয়া মো. এমরানের সমন্বয়ে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
২৪ আগস্ট রাতেই নিহতের স্বামী আব্দুর রাজ্জাক বাদী হয়ে ৯ জনের নামে ও ৭/৮ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা (নং ১৮) দায়ের করেন।
সেই মামলায় কালীগঞ্জ জনসেবা হাসপাতালের পরিচালক, নার্স ও কর্মচারীসহ গ্রেফতার ৬ জনকে গাজীপুরে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। গ্রেফতারকৃত ৬ আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে গত ২৫ আগস্ট আদালতে আবেদন করা হয়।
পরে আবেদন রিমান্ড শুনানি শেষে গাজীপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক রাগীব নূর গ্রেফতারকৃতদের ২ দিনের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।
২ দিন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মামলার তদন্ত অগ্রগতির জন্য গ্রেফতারকৃত আসামী বন্যা আক্তার (৩১) ও আশিকুর রহমানকে (২৫) আরো ৫ দিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গাজীপুর সিনিয়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
আদালত সেই আবেদন না মঞ্জুর করেন। পরে গত ১০ সেপ্টেম্বর কালীগঞ্জ থানার ওসি আনিসুর রহমানের সুপারিসসহ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মামলার অধিকতর তদন্তের জন্য গাজীপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এ শিরিনা বেগমের লাশ কবর থেকে উত্তোলনের আবেদন করেন।
সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই আদালতের সিনিয়র বিচারক ইসরাত জেনিফার জেরিন গত ১৮ সেপ্টেম্বর আবেদন মঞ্জুর করে লাশ উত্তোলনের নির্দেশ দেন।