জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় যুক্তরাজ্যে গেল মাসে ২০ লাখের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি অন্তত একদিন সারাদিন না খেয়ে থেকেছেন। খাবারের ব্যয় বহন করতে না পারায় তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফুড ফাউন্ডেশনের এক জরিপের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ান এসব তথ্য জানিয়েছে।
গার্ডিয়ান জানায়, ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় খাবারসহ গৃহস্থালির খরচ ৫৭ শতাংশ কমিয়ে এনেছেন দেশটির বাসিন্দারা। চলতি বছর এই হার আগের বছরের তুলনায় আরো বেড়েছে। জানুয়ারিতে ৪৭ লাখ মানুষ খাদ্য অনিরাপত্তায় ভুগলেও গেল তিন মাসে তা ৭৩ লাখ ছাড়িয়েছে। ব্রিটেনের বৃহত্তম জ্বালানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে আসছে শীতে দেশটির জ্বালানি ব্যয় ১ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত বাড়তে পারে। শুধু প্রাপ্তবয়স্করা ছাড়াও ২৬ লাখের বেশি শিশু আগের থেকে কম খাবার গ্রহণ করে বা ক্ষুধা লাগলেও খাবার পায়না।
বিপর্যয়কর এই পরিস্থিতির জন্য বরিস জনসনের সরকারকে দায়ী করছেন বিরোধীরা।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাজ্যের বার্ষিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ। মার্চে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ শতাংশ—১৯৯২ সালের পর সর্বোচ্চ। তবে অনেক অর্থনীতিবিদের মতে, মূল্যস্ফীতির হার আরও বাড়বে।
গাড়ির জ্বালানি থেকে শুরু করে খাদ্য ও আসবাবের মূল্যবৃদ্ধি এই মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কারণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। যুক্তরাজ্যের সরকারি তথ্যানুসারে, মার্চ মাসে খাদ্য, জ্বালানি, অ্যালকোহল ও তামাকের মূল্য ৫ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাসে যে হার ছিল ৫ দশমিক ২ শতাংশ।
যুক্তরাজ্য সরকারের তথ্যানুসারে, এই বাস্তবতায় ১৯৫০ সালের পর ব্রিটিশ পরিবারগুলো জীবনযাত্রার ব্যয়ে সবচেয়ে বড় ধরনের সংকোচনের মুখোমুখি হচ্ছে। এই মূল্যস্ফীতি সরকারের জন্য বড় দুঃসংবাদ।
ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি জানি, দেশের মানুষ এখন কী অবস্থায় আছে, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটছে তাদের। সে জন্য মানুষকে অর্থসহায়তা দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’
তবে পরিস্থিতি ঋষি সুনাকের জন্য খুব একটা ভালো নয় বলেই মনে করেন অর্থনীতিবিদেরা। জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি, চীনসহ বিভিন্ন স্থানে নতুন করে সরবরাহ–সংকটের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি আবারও চাপের মুখে পড়েছে। গত মাসে যুক্তরাজ্যের বাজেট কার্যালয়ের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২২ সালের শেষের দিকে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠবে, ৮ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত। আর তা হলে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়াবে গত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো যা করে, ব্যাংক অব ইংল্যান্ডও তাই করবে বলে জানা গেছে। মে মাসের মধ্যে নীতি সুদহার আরও একবার শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হবে বলে জানা গেছে। কিন্তু এতে মূল্যস্ফীতির রাশ টানা যাবে না বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। মূল্যস্ফীতির রাশ টানতে নীতি সুদহার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আরও আক্রমণাত্মক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদেরা।