চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও যুবদলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে জাহেদ হোসেন মুন্না (২২) নামে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৮ জন।
গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে মিরসরাই স্টেডিয়ামে চলা বাণিজ্য মেলায় পৌরসভা বিএনপির সদস্য সচিব জাহিদ হুসাইন ও মিরসরাই পৌরসভা যুবদলের আহবায়ক কামরুল হাসানের অনুসারীদের সংঘর্ষে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নিহত জাহেদ হোসেন মুন্না (২২) মিরসরাই পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের গোভনীয়া গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে এবং তিনি ৬ নং ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবকদলের আহ্বায়কের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি ইট-বালি সরবরাহের ব্যবসা করতেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমবার সন্ধ্যার পর মিরসরাই স্টেডিয়ামে চলা বাণিজ্য মেলায় মিরসরাই পৌরসভা বিএনপির সদস্য সচিব জাহিদ হুসাইনের অনুসারীদের সঙ্গে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মিরসরাই পৌরসভা যুবদলের আহবায়ক কামরুল হাসানের অনুসারীদের কথা কাটাকাটি হয়। পরবর্তীতে মেলা প্রাঙ্গণ থেকে বের হয়ে রাত সাড়ে ১০ টার দিকে মিরসরাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে কামরুলের অনুসারীরা জাহিদ হুসাইনের অনুসারীদের ওপর হামলা চালায়। এতে পৌরসভা স্বেচ্ছাসেবক দলের ৬ নং ওয়ার্ডের আহ্বায়ক জাহেদ হোসেন মুন্না (২২) নিহত এবং ৮ জন আহত হন।
আহতরা হলেন- সজিব (২৩), আরাফাত (২৩), আসিফ (২০), রাহাত (২০), হাসান (২৮), রাশেদ (১৯), হৃদয় (২৭), শাকিল (২০)। তারা মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও মিরসরাই সেবা আধুনিক হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
নিহত জাহেদ হোসেন মুন্না মিরসরাই পৌরসভা বিএনপির সদস্য সচিব জাহিদ হুসাইনের অনুসারী। মিরসরাই পৌরসভা বিএনপির সদস্য সচিব জাহিদ হুসাইন ও মিরসরাই পৌরসভা যুবদলের আহবায়ক কামরুল হাসান চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিনের গ্রুপ সমর্থন করেন।
সংঘর্ষে আহত সজিব বলেন, সোমবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে মিরসরাই স্টেডিয়ামে চলা বাণিজ্য মেলায় পৌরসভা বিএনপির সদস্য সচিব জাহিদ হুসাইন ভাইয়ের আমরা কিছু অনুসারী মেলা গেইটে সিএনজিচালিত অটোরিক্সার টোল আদায়সহ শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করছিলাম। এরই মধ্যে অতর্কিতে পৌরসভা যুবদলের আহ্বায়ক কামরুল হাসানের ২০-২৫ জন অনুসারী ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে।
এ বিষয়ে মিরসরাই পৌরসভা বিএনপির সদস্য সচিব জাহিদ হুসাইন বলেন, ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। এই ঘটনায় বিএনপির কোন সম্পৃক্ততা নেই। আমি আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। নিহতের পরিবারের পাশে থাকবো।
মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক তন্ময় জামশেদ আলম বলেন, মুন্না নামের একজনকে নিহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। এছাড়া আহত রাহাত, হৃদয় ও শাকিলকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে শাকিলের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সংঘর্ষের পর থেকে বাণিজ্য মেলায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সেখানে সংঘর্ষের কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিঘ্ন ঘটায় মঙ্গলবার মেলা বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রশান্ত চক্রবর্তী।
এদিকে এ ঘটনায় সোমবার রাতেই মামলা করেন জাহেদ হোসেন মুন্নার ভগ্নিপতি আরাফাত হোসেন। এর ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মিরসরাই পৌরসভা যুবদলের আহবায়ক কামরুল হাসান (৩৭), নাজমুস সাকিব মারুফ (২২), শাহ আলম (৪৭), আরমানকে (২৬) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আতিকুর রহমান জানান, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা নিহতের ঘটনায় ১১ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত ২০-২৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন নিহত জাহেদ হোসেন মুন্নার ভগ্নিপতি আরাফাত হোসেন। হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা হিসেবে মিরসরাই পৌরসভা যুবদলের আহবায়ক কামরুল হাসানসহ ৪ জন গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।