প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৬ জুন, ২০২৪, ৮:০৫ অপরাহ্ন
৫ বছর বয়সী জিসান কখনো নানুর কোলে আবার কখনো কোল থেকে নেমে হাঁটছেন। কিন্তু তার দুচোখ যেন কাকে খুঁজছে। নানু তাকে পরম আদরে আগলে রেখেছেন। আর বলছে এইত আর একটু সময় এখনি চলে আসবে মা। অবুঝ জিসানের যেন তর সইছে না। সে বুঝাতে চাচ্ছে আর কত অপেক্ষা নাকি অন্য সময়ের মত এখনো মিথ্যা আশ্বাস। শুধু শুধু বলছে তার মা আসবে। দুপুর সাড়ে ১২ টা সীমান্তে ওপারে দেখা যাচ্ছে কয়েকজন পুরুষের সাথে এক নারী এগিয়ে আসছে বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে। এতেই প্রায় আড়াই বছরের অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় জিসানের। দুই দেশের আনুষ্ঠানিকতা শেষে জিসানের নানু মোছাঃ ঝর্ণা খাতুন নাতিকে বলেন এই তোমার মা। ছোট্ট জিসান তখন এক লাফে মায়ের কোলে উঠে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলেন আমাকে রেখে এতদিন কোথায় ছিলে। আমি আর তোমাকে যেতে দিব না। মা-ছেলের এমন আবেগময় মূহুর্তে উপস্থিত কারো চোখের পানি আটকাতে পারেনি।
আজ বৃহস্পতিবার (৬ জুন) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরেছেন এক নারী।
তিনি দুই হাজার ২২ সালের মার্চে কাজের সন্ধানে দালালের মাধ্যমে অবৈধ পথে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়ে ওই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়।
ভারতের ত্রিপুরায় নিযুক্ত বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের মাধ্যমে তাকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
দেশে ফেরত আসা ওই নারী সিরাজগঞ্জ জেলা সদরের কৃষ্ণপুর ভুঁইয়াপাড়ার আবু বক্কর সিদ্দিকের মেয়ে সীমা আক্তার (২৩)। তিনি একসন্তানের জননী।
দেশে ফেরত আসা সীমা আক্তার জানান, তার এক বান্ধবী তাকে পার্লারে কাজের কথা বলে ভারতে পাঠিয়ে ছিলেন। সিরাজগঞ্জ থেকে বাসে করে ফেনী পর্যন্ত বান্ধবী সাথে করে নিয়ে আসেন।পরে রাতের বেলায় এক দালাল তাকে অবৈধ পথে কাঁটাতারের বেড়া পার করে ভারতীয় এক দালালের হাতে দিয়ে চলে যায়। ওখান থেকে তাকে আগরতলা বিমানবন্দর নিয়ে এসে ব্যঙ্গালুরের একটি বিমান টিকিট দিয়ে ভারতীয় দালাল সরে যায়। বিমানবন্দরেই তিনি ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়। পরে তাকে আদালতে নেওয়া হলে আদালত তাকে দুই বছরের সাজা দেন। সাজা শেষে চার মাস আগে তাকে ত্রিপুরা রাজ্যের নরসিংগড় ডিটেনশন সেন্টারে নেওয়া হয়। এই চার মাস তিনি ওখানেই অবস্থান করছিলেন। ত্রিপুরাস্থ বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের মাধ্যমে তিনি আজ দেশে ফিরলেন। আড়াই বছর পর পরিবার ও সন্তানকে কাছে পেয়ে তার ভালো লাগছে।এজন্য তিনি ত্রিপুরাস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনকে ধন্যবাদ জানান।
সীমা আক্তারের মা মোছাঃ ঝর্ণা খাতুন জানান, আড়াই বছর আগে আমার নাতীকে রেখে কাজের জন্য ঢাকা যাচ্ছে বলে বাড়ি থেকে বেড় হয়।আমরা অনেক খুঁজা-খুঁজির পর মেয়ের কোন সন্ধান না পেয়ে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় একটি নিখোঁজ জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করি। ৮ মাস আগে থানা পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারি আমার মেয়ে ভারতের জেলে আছে। এই ক'বছর আমি আমার নাতীকে বুকেপিঠে আগলে রাখি।মেয়ের জামাইও মেয়ের জন্য অপেক্ষায় আছে। মেয়েকে নিতে মেয়ের জামাই আসেনি কেন জানতে চাইলে ঝর্ণা খাতুন বলেন গার্মেন্সে চাকরি করে ছুটি পায়নি তাই আসতে পারেনি। এতদিন পর মেয়েকে পেয়ে তার খুব ভালো লাগছে।
ত্রিপুরায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের কর্মকর্তা (কনস্যুলেট) ওমর শরীফ বলেন, একজন বাংলাদেশী নারীকে নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করেছি। তিনি কাজের সন্ধ্যানে পাসপোর্ট ছাড়া সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে। পরে ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়। ভারতের আদালতের মাধ্যমে তিনি সাজা ভোগ করেন। বিষয়টি বাংলাদেশ হাই কমিশন জানতে পেরে আমরা সেখানে গিয়ে খোঁজ খবর নিই। ওই নারীর নাম ঠিকানা বাংলাদেশে পাঠাই। দুই দেশের প্রক্রিয়া শেষে আজ তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হলো। সবমিলিয়ে তার কাটে প্রায় আড়াই বছর।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, আখাউড়া ইমিগ্রেশন ইনচার্জ মোঃ খাইরুল আলম, উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম, আখাউড়া আইসিপি ক্যাম্প কমান্ডার হাবিলদার রুহুল আমিন প্রমুখ।