রাজধানীর উত্তরখান থানা এলাকায় উত্তরা আনোয়ারা মডেল কলেজ নির্মাণ করতে দখল করা হলো ষাট বছর বয়সী ভুক্তভোগী শেখ আব্দুল মজিদের জমি। আর ওই জমিতেই সরকারি অনুমোদন নিয়ে রাতের আঁধারে ভবন নির্মাণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
ভুক্তভোগী শেখ আব্দুল মজিদ ঢাকার উত্তরা সংলগ্ন দক্ষিণ খানের বাসিন্দা। নানা রোগে জর্জরিত শরীর যেকোনো সময় না ফেরার দেশে চলে যেতে পারেন। কথা বলা শুরু করতেই কেঁদে উঠলেন মজিদ। অনেকটা আক্ষেপ করেই বললেন, ‘আনোয়ারা ডিগ্রী কলেজ নির্মাণে জোর করে দখলে নেয়া তার ১৫ শতাংশ জমি মৃত্যুর আগে তিনি ফেরত পেতে চান’।
শেখ আব্দুল মজিদের অভিযোগ উত্তরা আনোয়ারা মডেল কলেজ তার জমি দখল করে সরকারি অনুমোদন নিয়ে রাতের আঁধারে ভবন নির্মাণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে এতদিন বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন বিচার পাননি। এখন অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বিচার না পাই তা হবে তার জন্য এক ধরণের মৃত্যুর শামিল।
তিনি আরও বলেন, তার পৈত্রিক নিবাস হারিয়েছেন. তার ছেলে ও ভাইকে হারিয়েছেন। এত কিছু হারানোর বেদনার থেকে তিনি মরে গেলে হয়তোবা আরো ভালো থাকতে পারতেন বলতে বলতে আবারো ‘উচ্চস্বরে’ কেঁদে ওঠেন শেখ মজিদ।
মজিদ অভিযোগ করে জানান, বিগত ২৫ বছর যাবত ওই জমি নিয়ে তাদের নানা ধরণের সমস্যা চলে আসছে এখনো পর্যন্ত এর কোন সমাধান করতে পারেননি। তার ধারণা, অফিসে যোগাযোগের ও তাদের সাথে দেখা করার পর থেকেই নির্মাণাধীন ভবনের কার্যক্রম আরো বাড়িয়ে দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ। জমি প্রসঙ্গে বারবার অধ্যক্ষের সাথে দেখা করার চেষ্টা করে তার সাথে আলোচনা করার পরও তাকে কোন সমাধান দিতে পারেনি তারা। বার বারই আশ্বস্ত করে তাকে দিন শেষে খালি হাতে বাড়ি ফিরে আসা ছাড়া কোনো গতি তার কাছে থাকে না।
গত ১৯৮৯ সালের জুন মাসে তৎকালীন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম মোজাম্মেল হক উত্তরা আনোয়ারা মডেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের সাথে সম্পৃক্ত থেকে এই প্রতিষ্ঠানকে সামনে রেখে নানা প্রকার ভূমি দখল ও বিভিন্নভাবে এলাকার বাসিন্দাদের অতিষ্ঠ করে আসছেন এসএম মোজাম্মেল হকের পরিবার-পরিজন ও তার আপন ছোট ভাই তোফাজ্জল হোসেন।
জানা যায়, এ বিষয়ে থানায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকমের অভিযোগ ও মামলা হলেও পরবর্তীতে বিভিন্নভাবে কূটকৌশলে মোজাম্মেল হক ও তোফাজ্জল হোসেন অভিযোগ থেকে বের হয়ে আসেন। ভুক্তভোগী মজিদ বিভিন্ন সময় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান নির্বাহীর সাথে কথা বললে প্রধান নির্বাহী তাকে কয়েকটা প্রস্তাব দিয়ে আশ্বস্ত করেন কিন্তু ওই আশ্বস্ত করার বিষয়টি মৌখিক হলেও এখনো পর্যন্ত কাগজে-কলমে কিছুই এগোইনি।
ভুক্তভোগী ইতিমধ্যে মহাপরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, পরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তর কলেজ শাখা ও প্রধান প্রকৌশলী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ঢাকা মেট্রো সার্কেল বরাবর তার অভিযোগপত্র দায়ের করা ও তাদের সাথে কথা বলার পরও তারা এই বিষয়টিকে কোন প্রকার গুরুত্ব দিয়ে দেখেননি।
গত ১৩ নভেম্বর বুধবার মজিদ তার জমির কাছে গেলে ওই স্থানে থাকা কর্তব্যরত এক ব্যক্তি ‘হুমকি ধামকি’ প্রদান করে। এই অবস্থায় তার জীবন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। কলেজ প্রিন্সিপালের কাছে এ বিষয়ে আবেদন করা হলে তিনি কোন প্রকার কথা বা কোন ধরণের অঙ্গীকার করতে রাজি হননি বলে জানা যায়।
অবৈধভাবে জমি দখলে নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাস নির্মাণের বিষয়ে উত্তরা আনোয়ারা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মো মুজিবুর রহমানের মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।