চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভরতদের ওপর লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় বিক্ষোভকারীরা। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়নি। এর আগে, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় জামিন নামঞ্জুর হলে প্রায় ৩ ঘণ্টা বিক্ষোভকারীরা চিন্ময় কৃষ্ণকে বহনকারী প্রিজনভ্যান আটকে রাখেন। পরে তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা করে।
এই সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আইনজীবীদের সঙ্গে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিক্ষোভকারীরা এক আইনজীবীকে চেম্বারের নিচ থেকে ধরে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছেন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার পরপরই আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন চিন্ময় কৃষ্ণের অনুসারী এবং আইনজীবীদের একাংশ। বেলা ১২টা থেকেই শত শত নারী-পুরুষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে বহন করা প্রিজনভ্যান আটকে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল পরিমাণ সদস্য নির্বিকার দাঁড়িয়ে ছিল। প্রায় ৩ ঘণ্টা তারা প্রিজনভ্যান আটকে রাখার পর বিকেল ৩টার পর পুলিশ অ্যাকশনে যায়। বিক্ষোভরতদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে এবং লাঠিচার্জ শুরু করে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা একপর্যায়ে আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলায়ও আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেন। এ সময় আইনজীবীদের একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ছত্রভঙ্গ হয়ে বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ লালদিঘী এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। এতে পুরো এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।
এর আগে, বেলা ১১টার দিকে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে আদালতে হাজির করা হয়। তার পক্ষের আইনজীবীরা জামিন আবেদন করলে বেলা পৌনে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম ষষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক কাজী শরীফুল ইসলাম শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে আদালতে পাঠানোর আদেশ দেন। আদেশের পরপরই এজলাসের বাইরে বিক্ষোভ শুরু করেন ভক্ত-অনুসারীরা। এরপর প্রায় আধা ঘণ্টা এজলাসের বাইরেই অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন চিন্ময় কৃষ্ণের ভক্ত অনুসারীরা। দুপুর ১২টার দিকে তাকে এজলাস থেকে বের করে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে প্রিজনভ্যানে তোলা হলে প্রিজনভ্যানের সামনেই বসে বিক্ষোভ করতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা।
এদিকে চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মুক্তির দাবিতে আন্দোলনকারীদের হামলায় সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে এক আইনজীবী নিহত হয়েছেন। গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হামলার এ ঘটনায় আহত ৭-৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ অ্যাডভোকেট এনামুল।
তিনি বলেন, সাইফুল ইসলাম আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তিনি ২০১৮ সালে জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হন। পরে তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবেও নিবন্ধন পান। অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি এলাকার বাসিন্দা। তার বাবা নাম জালাল উদ্দিন। সম্প্রতি তিনি চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
অ্যাডভোকেট মোক্তার উদ্দিন সাগর নামে এক আইনজীবী জানান, আমার চোখের সামনে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে কোপানো হয়েছে। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বিকেল পৌনে ৪টার দিকে ইসকনের অনুসারীরা আদালত এলাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা শুরু করলে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ তাদের বাধা দেন। এর পর ভুক্তভোগীকে তুলে নিয়ে আদালতের প্রধান ফটকের বিপরীতে রঙ্গম টাওয়ারের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সাইফুলকে কুপিয়ে আহত করে ইসকন সদস্যরা। গুরুতর আহত অবস্থায় সাইফুলকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। চমেক হাসপাতালের নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, চট্টগ্রাম আদালতে সংঘর্ষের ঘটনায় ৭-৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে গতকাল সোমবার বিকেলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার সময় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা চিম্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করে। সড়কপথে আন্তর্জাতিক শ্রীকৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) আলোচিত এই সংগঠককে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পাঠানো হয়। সোমবার রাতে তাকে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা কার্যালয়ে রাখা হয়।
সর্বশেষ বিকেল ৫টার দিকে পাওয়া খবর অনুযায়ী চট্টগ্রাম আদালতসহ আশপাশের এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ওই এলাকায় বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। আইনজীবীদের একটি অংশ তাদের সহকর্মী হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছে। অন্যদিকে চিন্ময় কৃষ্ণের অনুসারীরা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুল কাদের বলেন, বিশৃঙ্খলাকারীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।