কক্সবাজার সমুদ্র উপকূল থেকে গত তিন দিনে পাঁচটি সামুদ্রিক প্রাণীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া প্রাণীদের মধ্যে তিনটি ডলফিন, একটি শুশুক ও একটি কচ্ছপের মৃতদেহ। শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে উখিয়ার সোনারপাড়া সৈকতে ও ইনানী সৈকত এলাকায় দু’টি মৃত ডলফিন ভেসে আসে।
শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহের পর মৃত ডলফিন দু’টিকে সৈকতের বালিয়াড়িতেই মাটি চাপা দেয়া হয় বলে জানান বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম।
তিনি জানান, সোনারপাড়া সৈকতে পাওয়া মৃত ডলফিনটি ইরাবতি প্রজাতির। এর দৈর্ঘ্য ছিল ৪ ফুট ৩ ইঞ্চি। ইনানী সৈকতে পাওয়া ডলফিনটি ইন্দো প্যাসিফিক হ্যাম্পব্যাক প্রজাতির। এই ধরনের স্তন্যপায়ী ডলফিনের শরীরে একটি কুঁজ এবং একটি দীর্ঘ, সরু চঞ্চু থাকে।
তিনি বলেন, বাসস্থানের ক্ষতি, জল দূষণ, উপকূলীয় উন্নয়ন, অতিরিক্ত মাছ ধরা এবং এর পরিসরের মধ্যে সামুদ্রিক যানবাহনের বৃদ্ধির কারণে হুমকির সম্মুখীন ইন্দো-প্যাসিফিক হাম্পব্যাক ডলফিন।
ধারণা করা হচ্ছে আবাসস্থলের অবক্ষয় এবং মাছ ধরতে যাওয়া ট্রলার-জাহাজ বা জালে আটকা পড়ে আহত বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে এসব প্রাণী মারা গেছে। এর আগে বৃহস্পতিবার হিমছড়ি সৈকতে ভেসে এসেছিল আরো একটি ইরাবতী ডলফিন।
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার ভেসে আসা ডলফিনটি দুই সপ্তাহ আগে শরীরে রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা পড়েছে। ৬ ফুট দৈর্ঘ্যের ডলফিনটির ওজন ছিল ১০০ কেজি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে উপকূলে ঘোরাঘুরির সময় ডলফিনটি জেলেদের জালের রশিতে আটকা পড়ে। এতেই সেটির মৃত্যু হয়। বুধবার কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে ভেসে এসেছিল মৃত একটি শুশুক। সেটির ওজন ছিল ৩ দশমিক ৮৮ কেজি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. তৌহিদা রশীদ বলেন, এটি সদ্য প্রসব হওয়া বাচ্চা হতে পারে। এর স্পেসিমেন মিউজিয়ামে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম জানান, কক্সবাজারে শুশুক বা পরপয়েস উদ্ধারের ঘটনা এই প্রথম। এটি ইন্দোপ্যাসিফিক ফিনলেস পরপয়েস হিসেবে পরিচিত। বৈজ্ঞানিক নাম নিওফোকেনা ফোকেনয়েডস। দেখতে ইরাবতী ডলফিনের মতো হলেও পরপয়েস ছোট জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী। মাছ ধরার জালে আটকে পড়ে, নৌকার সঙ্গে সংঘর্ষে, শব্দ ও জলদূষণে এবং বাঁধ, পোতাশ্রয়সহ অন্যান্য নির্মাণ কাঠামোর কারণে এদের জীবন হুমকিতে পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর যেকোনো কারণে এটি মারা যেতে পারে।
এছাড়া বৃহস্পতিবার সৈকতের রেজু নদীর মোহনায় একটি অলিভ রিডলি বা জলপাই রঙের সামুদ্রিক মা কচ্ছপের মৃতদেহ ভেসে আসে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, ১০ থেকে ১২ দিন আগে কচ্ছপটির মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর অন্তত ২০টি মা কচ্ছপের মৃতদেহ পাওয়া গেল।
অলিভ রিডলি প্রজাতির এই মা কচ্ছপটি সৈকতের বালিয়াড়িতে ডিম পাড়তে যাওয়ার সময় জেলেদের জালে আটকা পড়ে কিংবা অন্য কোনোভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা গেছে বলে ধারণা করছেন তরিকুল ইসলাম। কচ্ছপটির পেটে ১০২টি ডিম পাওয়া গেছে বলেও জানান তিনি।