শুক্রবার ২৫ অক্টোবর ২০২৪ ৮ কার্তিক ১৪৩১
 

‘নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে দেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে’    গৃহকর্মী হত্যার অভিযোগে বনশ্রীতে বাড়িতে আগুন    ২০২৩ সালে দেশে এইডসে ২৬৬ জনের মৃত্যু     নিউজিল্যান্ডে আরেকটি ঐতিহাসিক জয় টাগইগারদের     নির্বাচন বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞার আহ্বান ওবায়দুল কাদেরের    হবিগঞ্জের ডিসি ও তিন ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ ইসির    ভোট ঠেকানো গণতান্ত্রিক অধিকার নয়: ডিএমপি কমিশনার   
চেয়ারম্যানের নাম মুছার হুমকি দেওয়ায় এম.পি'কে অনুসন্ধান কমিটির তলব
আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়ীয়া) প্রতিনিধি:
প্রকাশ: রোববার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৩, ৬:১৭ অপরাহ্ন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিনের নাম নাসিরনগর থেকে মুছে ফেলার হুমকি দেওয়া সংসদ সদস্য বদরুদ্দোজা মো. ফরাহদ হোসেনকে ‘তলব’ করেছেন নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। 

আজ রবিবার দেওয়া এক ব্যাখা প্রদান নোটিশে আজ সোমবার বিকেল পাঁচটায় জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে লিখিত ব্যাখা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র সহকারি জজ ও নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির মোহাম্মদ রেজাউল হক স্বাক্ষরিত এ চিঠি রবিবার দুপুরে এ প্রতিবেদকের কাছে আসে। ওই চিঠিটি ফরহাদ হোসেনের কাছে পৌঁছানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। কালের কণ্ঠের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত খবরের সূত্র ধরে ব্যাখা চাওয়ার কথা উল্লেখ করে এ চিঠি দেওয়া হয়। 

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত ২৩ ডিসেম্বর দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে ‘চেয়ারম্যানের নাম মুছে দিতে চান এম.পি, হাত ভাঙার হুমকি আ. লীগ নেতার’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, যা এই কমিটির গোচরিভুত হয়েছে। সংবাদে উল্লেখিত বক্তব্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর ৭৭ (১) অনুচ্ছেদ ও সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর ১১ বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন মর্মে কমিটির নিকট প্রতীয়মান হয়। এমতাবস্থায় আপনার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য কেন নির্বাচন কমিশনকে সুপারিশ করা হবে না তৎমর্মে ২৪ ডিসেম্বর বিকেল পাঁচটায় জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনে নিন্ম স্বাক্ষরকারির কার্যালয়ে স্বশরীরে হাজির হয়ে লিখিত ব্যাখা প্রদানের জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর ৯১ এ (৫) (এ) অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে নির্দেশ প্রদান করা হলো। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিনের নাম নাসিরনগর থেকে মুছে ফেলার হুমকি দিয়েছেন সেখানকার সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বদরুদ্দোজ্জান মো. ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। শুক্রবার বিকেলে নাসিরনগরের কুন্ডা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে হওয়া নির্বাচনী জনসভায় এ হুমকি দেওয়া হয়।

এ ঘটনার পর থেকে নাসির উদ্দিন নিরাপত্তহীনতায় ভুগছেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘আমার নাম নাসিরনগর থেকে মুছে ফেলা হবে বলে প্রকাশ্য জনসভা থেকে ঘোষণা দিয়েছেন এম.পি। স্বতন্ত্র প্রার্থীর (তিনি যার হয়ে নির্বাচনে মাঠে কাজ করছেন) সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’  

এদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মো. লতিফ হোসেন একই দিন পৃথক আরেকটি নির্বাচনী সভায় বলেছেন, ‘নৌকা ভাঙ্গলে কেউ আখেরাতে যেতে পারবেন না।’ কেউ যদি হুমকি দেয়, হাত উঁচু করে তাহলে তার হাত ধরে ভেঙ্গে দেওয়ার নির্দেশনা দেন 
তিনি।  

লতিফ হোসেন তাঁর বক্তব্যের ব্যাখা দিতে গিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে বলেন, ‘যারা নৌকা করে তাদের তো ঈমান ঠিক থাকতে হবে। তাই আমি এটা বলেছি।’ তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘আরেক প্রার্থী (সৈয়দ একরামুজ্জামান) মন্দির ভাঙার আসামীদের নিয়ে ঘুরছেন, সভা করছেন এটা আপনারা লিখেন না কেন। আপনাদের উপর তো আস্থা রাখতে পারছি না।’

এম.পি’র দেওয়া বক্তব্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন মূলত বিএনপি করতেন। তবে নিজে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘেঁষেন। সব সুযোগ সুবিধা নিয়ে এখন তিনি আবার সাবেক বিএনপি নেতার হয়েই নির্বাচনে লড়ছেন।’

নাসিরনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সোহাগ রানা সাংবাদিকদেরকে জানান, এম.পি’র একটি বক্তব্য ফেসবুকে থেকে তিনি শুনেছেন। তবে এ বিষয়ে কেউ কোনো ধরণের অভিযোগ করেনি। সংসদ সদস্যও এ বিষয় নিয়ে থানার আসার বিষয়টি গুজব।  
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনে বিএনপি থেকে বহিস্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামানের পক্ষে কাজ করছেন নাসির উদ্দিন। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন। এ আসনে মোট পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। একরামুজ্জামানের পক্ষে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত দুই প্রার্থীসহ স্থানীয় অনেক নেতা কাজ করছেন। দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে ভোটের মাঠে লড়ার অভিযোগে একরামুজ্জামানকে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পদ থেকে বহিস্কার করে দলটি। 
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক থেকে পাওয়া ভিডিওতে চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন ভূইয়াকে উদ্দেশ্য করে সংসদ সদস্যকে বলতে শুনা যায়, ‘এই নাসিরনগর থেকে তোমার নাম মুছে যাবে।’ জনসভার ওই বক্তব্যের ছয় মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

বক্তব্যের ওই ভিডিওতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলেন, ‘নাম বলতেও আমার লজ্জা লাগে। নিজেকেই আমার প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করে, আমি কি মানুষ এত কম চিনলাম। আমি কিভাবে মানুষ চিনলাম। আমি নাম ধরেই বলছি। নাসির (কুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান), আপনাদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। আমি খুব অবাক হয়ে গেছি। আগের দিন আমার সঙ্গে সে মিছিল করেছে নৌকার। হঠাৎ কি হলো। আমি তো জানতাম নাসির, তোমার ভাইয়েরা শিক্ষিত। তোমার বড় ভাইয়েরা শিক্ষিত। তুমি একজন শিক্ষিত পরিবারের সন্তান। এত কথা, কাজের অমিল। কিন্তু তুমি মনে রেখো, তুমি খালি কুন্ডাবাসী নয়, এই নাসিরনগর থেকে তোমার নাম মুছে যাবে। আমি আজকে বলে দিয়ে গেলাম। নড়চড় মানুষকে কেউ পছন্দ করে না। এটা আমি বলছি এবং নাসিরের বড় ভাইদেরকে বলছি, আপনারা যে স্বপ্ন দেখছেন, সেই স্বপ্নেও গুড়েবালি। আপনাদেরকে নিয়েও মানুষ কথা বলবে।’ 

নাসির উদ্দিনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘তোমার বক্তব্য থাকতে পারে। আমি তো তোমাকে ডাকিনি। তুমিই এসেছিলে। তুমি স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচন করেছিলা ভালো কথা। আমি বলেছিলাম তুমি কাজ করো। তোমাকে সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে। এর মানে এই নয় তুমি নৌকা উঠে নৌকার পিঠে ছুরি মারবা। তুমি বোকার স্বর্গে বাস করছো নাসির।’ 

পরে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ একরাম্জ্জুামানের কড়া সমালোচনা করেন। বিশেষ করে তিনি এলাকায় আসতেন না বলে অভিযোগ তুলেন। গত ২৪ বছরে ৪৮টি ঈদে কেন তিনি এলাকার মানুষের সঙ্গে ছিলেন না সেই প্রশ্নটি একরামুজ্জামানকে করার জন্য আহবান জানান। 

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. আক্তার হোসেন রিন্টু
বার্তা ও বাণিজ্যিক বিভাগ : প্রকাশক কর্তৃক ৮২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক (৩য় তলা) ওয়্যারলেস মোড়, বড় মগবাজার, ঢাকা-১২১৭।
বার্তা বিভাগ : +8802-58316172. বাণিজ্যিক বিভাগ : +8801868-173008, E-mail: dailyjobabdihi@gmail.com
কপিরাইট © দৈনিক জবাবদিহি সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft