গতকাল রোববার রাত ২টার দিকে জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার চুয়াল্লিশের মোড় নামক এলাকা থেকে ওই যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় এক রাতে তিনটি মন্দিরের ১০টি প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় সনাতন ধর্মাবলম্বী সোনাই মালো (৪৫) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার সোনাই মালো আলফাডাঙ্গা পৌর সদরের মৃত নিতাই মালোর ছেলে।
আজ সোমবার দুপুরে ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শাহজাহান।
জানা গেছে, বিজয় দিবসের রাতে আলফাডাঙ্গা পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত কুশুমদী মহল্লার কেন্দ্রীয় হরি মন্দির, শ্রী বিষ্ণু পাগলের মন্দির এবং ৭ নম্বর ওয়ার্ডে আলফাডাঙ্গা মহল্লার শ্রীশ্রী দামুদর আখড়া মন্দিরে ভাঙচুর করা হয়। এর মধ্যে হরি মন্দিরের দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, মনসা ও মহাদেব; বিষ্ণু পাগলের মন্দিরের মহাদেব ও মনসা এবং দামুদর আখড়া মন্দিরের মহাদেব, শিবলিঙ্গ ও নারায়ণ ১০টি প্রতিমা ভাঙচুর করার ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে পরের দিন রোববার আলফাডাঙ্গা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।
এসপি মো. শাহজাহান বলেন, এ ঘটনার পরে বিষ্ণু পাগলের মন্দিরের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ওই রাতে ২টা ১৫ মিনিটের দিকে এক ব্যক্তি মন্দিরে প্রবেশ করে এবং রাত ২টা ৩৬ মিনিটের দিকে বের হয়ে আসে। পরে স্থানীয়দের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে তার নাম পরিচয় বেরিয়ে আসে। এরপর তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সোনাই মালোকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তারের পর আসামি সোনাই মালো এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে সোনাই মালো জানান, সাপে তাকে দুই বছর যাবত স্বপ্নে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। তাই তিনি বিভিন্ন পূজামণ্ডপে যেসব মূর্তি ও প্রতিমার সঙ্গে শিব বা মহাদেবের মূর্তি আছে সেগুলোর মুখমণ্ডল হাত দিয়ে ভেঙে ফেলেন। কারণ শিব বা মহাদেবের গলায় সাপ জড়ানো থাকে। পাশাপাশি মূর্তির সঙ্গে মাটির তৈরি যে সাপ থাকে সেগুলোও ভেঙে ফেলেন। সোনাই মালো আরও জানান, বিষ্ণু পাগলের মন্দিরে রক্ষিত দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষীর যে প্রতিমা আছে সেগুলো আসল না এবং তারাও সাপের রূপ ধারণ করে তাকে ভয় দেখায়। এ কারণে ওই মূর্তিগুলোর মুখ তিনি ভেঙে দেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইমদাদ হুসাইন (সদ্য এসপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) শৈলেন চাকমা (সদ্য এসপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) শেখ মো. আবদুল্লাহ বিন কালাম (সদ্য এসপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত), সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) মো. মিজানুর রহমান, আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজাসহ পুলিশ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা।
এদিকে, এ ঘটনায় প্রতিবাদে রোববার আলফাডাঙ্গা চৌরাস্তা এলাকায় মানববন্ধন করে উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-ঐক্য পরিষদসহ সনাতনী বিভিন্ন সংগঠন। এছাড়া গত শনিবার রাতে উপজেলা পূজা উদ্যাপন কমিটি ও হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়।