বন্যার পানি কমে গেলে বিলের খালে জমে থাকা পানিতে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মাছ ধরার নাম বাউত উৎসব।
সিরাজগঞ্জের চলনবিল-অধ্যুষিত তাড়াশ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, রায়গঞ্জ উপজেলা গুমানি, বড়াল, গোহালা, ফুলজোড়, ইছামতি নদী সহ চলনবিলের সগুনায় কাটাবাড়ি বির ও গুমানী নদীর মোহনায় সহ পাবনার চাটমোহর ও নাটোরের সিংড়া গুরুদাসপুর উপজেলার বিভিন্ন নদ-নদী, খাল-বিল থেকে বর্ষার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী বাউত উৎসব শুরু হয়েছে।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারেও ঢাকঢোল পিটিয়ে উপজেলার বিভিন্ন বিলের পানিতে নেমে ঠেলাজাল,তৈরাজাল,পলো (স্থানীয় ভাষায়) দিয়ে সৌখিন মাছ শিকারিরা মাছ শিকারে মত্ত হয়ে উঠেছেন।
স্থানীয় ভাষায় এসব মাছ শিকারি দলকে বলা হয় বাউত। প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার চলন বিলাঞ্চলের বিভিন্ন নদ-নদী ও বিলের পানিতে মাছ শিকারে সবাই দলবেঁধে নেমে পড়ছে।
তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার মাছের আনাগোনা কম হওয়ায় বেশির ভাগ বাউতে অংশ গ্রহণ কারিদের ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে। তাদের খালোই থাকে ফাকা।
সরজমিন চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ,রায়গঞ্জ,গুরুদাসপুর,সিংড়া,চাকমহর,ভাঙ্গুরার বিভিন্ন বিলে,করতোয়া নদীতে শত শত সৌখিন মাছ শিকারি মাছ শিকারে নেমে পড়েছেন।
কেউ মাছ পাচ্ছেন আবার কেউবা ফিরছেন খালি হাতে। উল্লেখিত উপজেলা ছাড়াও বিভিন্ন স্থান থেকে বাউতরা এসেছেন মাছ শিকারে।
বিলে নেমে মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠছেন শিশু-কিশোর, যুবক থেকে শুরু করে বৃদ্ধরা। পলো, চাক পলো, নেট পলো, ঠেলা জাল তৈরা জাল, বাদাই জাল, লাঠি জালসহ মাছ ধরার নানা সরঞ্জাম নিয়ে মাছ শিকার করছেন বাউতরা।
জালে ধরা পড়ছে শোল, বোয়াল, গজার, দেশি মাগুর, রুই, কাতলাসহ হরেক রকমের মাছ। তবে স্থানীয় মৎস্যজীবীরা কারেন্ট জাল এবং কীটনাশক দিয়ে মাছ ধরার ফলে মাছের সংখ্যা কমে গেছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
উল্লেখ্য, মাছ পাওয়া না পাওয়া বড় কথা নয়, ব্যতিক্রমী এ উৎসবে যোগ দিয়ে আনন্দ উপভোগ করাটাই যেন তাদের কাছে মুখ্য বিষয়।
তাড়াশের বারুহাস গ্রামের সোনা মিয়া রায়গঞ্জের নীমগাছি মোতালেব, নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চন্দ্রপুর এলাকার রাজ্জাক খান, সিংড়া উপজেলার কলম এলাকার আলাউদ্দিন, চাটমোহরের আগশৈয়াইল গ্রামের মাহমুদ আলী, ভাঙ্গগুড়ার ভবানীপুর গ্রামের আক্কেল সেখ সহ বেশ কয়েকজন বাউতে আসা ব্যাক্তিরা বলেন, (সৌখিন মৎস্য শিকারি) প্রতি বছর এই সময়টার অপেক্ষায় থাকেন তারা।
মোবাইলের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলনবিল এলাকার বিভিন্ন বিলে পলো নিয়ে মাছ শিকারে নেমে পড়ছেন। দলবদ্ধ হয়ে মাছ ধরা এক ধরনের উৎসবে পরিণত হয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে।
এছাড়া বাউত উৎসব গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে প্রতি বছরই বাউত উৎসবে যোগ দেন বলে জানালেন তারা।
অতীতে বাউত উৎসব অনেক হলেও এখন তেমনি আর হয়না। বর্তমানে জলাশয় ভরাট, বিলের তলায় পলি জমে তা আবাদী জমিতে পরিণত হওয়ায় বাউত উৎসব করে মাছ শিকার করার স্থানও কমে এসেছে।
এজন্য সরকারের যথাযথ ভুমিকা রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতন মহল।