বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
 

‘নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে দেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে’    গৃহকর্মী হত্যার অভিযোগে বনশ্রীতে বাড়িতে আগুন    ২০২৩ সালে দেশে এইডসে ২৬৬ জনের মৃত্যু     নিউজিল্যান্ডে আরেকটি ঐতিহাসিক জয় টাগইগারদের     নির্বাচন বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞার আহ্বান ওবায়দুল কাদেরের    হবিগঞ্জের ডিসি ও তিন ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ ইসির    ভোট ঠেকানো গণতান্ত্রিক অধিকার নয়: ডিএমপি কমিশনার   
নওগাঁয় এতিম শিশুদের বরাদ্দ কৃত টাকা লুটপাট
রাসেল রানা ,নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ: শনিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২২, ৪:৪১ অপরাহ্ন

 
 বর্তমান সরকার এর সু-দৃষ্টি শুধু উন্নয়নে নয় পড়েছে অসহায় দুস্থ্য এতিম শিশুদের প্রতিও। সরকারি শিশু সদন এর পাশাপাশি বে-সরকারি শিশু সদনগুলোকেও নেওয়া হয়েছে সরকারি ভাতা ভোগীদের তালিকায়। আর এসব প্রতিষ্ঠানের আওতায় প্রতিটি অসহায় দুস্থ্য এতিম শিশুর জন্য দেওয়া হয় প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা।

 এর ধারাবাহীকতায় নওগাঁয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বে-সরকারি শিশু সদনগুলোতেও এ কার্যকম অব্যহত রয়েছে। তবে বেসরকারি এতিমখানা গুলো সমাজসেবা অধিদপ্তরের সরকারি বরাদ্দের টাকা সঠিক খাতে ব্যয় করছে না। 

মা-বাবা থাকলেও অনেক মাদ্রাসা ছাত্রদের এতিম বলে চালিয়ে দিচ্ছে। আবার কিছু এতিমখানা চালু কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে নেই। তবে বর্তমানে নানান অনিয়ম আর দূর্ণিতির অভিযোগে বেশ কয়েকটি এতিমখানার বরাদ্দ বন্ধ ও কমেয়ে দিয়েছে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর। 


জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, তাদের তালিকা অনুযায়ী জেলার ১১ টি উপজেলায় ১৬৮টি বেসরকারি এতিমখানা রয়েছে। এসব এতিমখানায় বাৎসরিক সরকারি বরাদ্দ ৮ কোটি ২৫লাখ ৬হাজার টাকা। এসব এতিমখানার অধিকাংশই মাদ্রাসাভিত্তিক লিল্লাহ বোর্ডিং।

 আর এসব এতিমখানায় সরকারি ভাতা ভোগী এতিম রয়েছে ৩ হাজার ৪শ ৪০জন। প্রতি মাসে তাদের ২ হাজার টাকা করে সরকারি বরাদ্দ দেওয়া হয়। জেলার সব থেকে বেশি এতিম ও এতিমখানা রয়েছে মহাদেবপুর উপজেলায়। 

কাগজে-কলমে এতিমের সংখ্যা ও সরকারি বরাদ্দ এ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি। তবে বাস্তব চিত্র একে বারেই উল্টো। এ উপজেলায় কাগজে-কলমে ৩৪টি বে-সরকারি এতিমখানা রয়েছে। যাতে এতিম শিশুর সংখ্যা দেখানো হয়েছে ১ হাজার ১শ ৫৪জন। 

জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর এর তথ্যমতে ভাতা ভোগী প্রতিটি এতিম শিশুর 
মহাদেবপুর উপজেলার বাশবারিয়া বে-সরকারি শিশু সদন ও মাদ্রাসায় ২০ জন এতিমের জন্য মাসিক বরাদ্দ ৪০ হাজার টাকা। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, এতিমখানার সাইনবোর্ড টাঙানো প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ। 

ঘরটির মধ্যে কিছুই নেই। জানালা-দরজা ভাঙা। মোবাইল ফোনে প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোহাম্মদ ইউসুফ আলী’র সাথে যোগাযোগ করে প্রতিষ্ঠান বন্ধের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিক্ষা শেষে ছাত্রদের ১০দিনের ছুটি দেওয়া হয়েছে।

 ছাত্র সংখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন তার প্রতিষ্ঠানটি নতুন তাই তেমন ছাত্র এখনও ভর্তি করাতে পারেননি। তবে ৩৭জন ছাত্র আছে। প্রতিষ্ঠানটিতে ২০জন ভাতাভোগী এতিম থাকলেও বাস্তবে তা পাওয়া যায়নি। সরকারি বিধিমোতাবেক প্রতি একজন ভাতাভোগী এতিম শিশুর বিপরিতে থাকতে হবে ২জন। 

অর্থাত ২০জন ভাতাভোগী থাকলে সেখানে থাকতে হবে ৪০জন এতিম শিশু। কিন্তু তার প্রতিষ্ঠানে সর্বমোট ৩৭জন শিক্ষার্থী রয়েছে। যদিও এই ৩৭ জন শিক্ষার্থীর সঠিক কোন তথ্য দিতে পারেন নি তিনি। তবুও কি ভাবে ২০জনের ভাতা পেলেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপজেলা কর্মকতা ও স্থানীয় এমপি মহদয়ের সুপারিষক্রমে এসব বরাদ্দ পেয়েছেন।

এ উপজেলার সবচেয় বেশি বরাদ্দের তালিকায় রয়েছে সফাপুর আখতার হামিদ সিদ্দিকী বেসরকারি শিশু সদন মাদ্রাসায়। এ মাদ্রাসায় ৯০ জন এতিম পান সরকারি ভাতা। এ মাদ্রাসায় খোঁজ নিয়ে দেখা যায় মাদ্রাসার কাগজে কলমে সর্ব মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২১০জন। তবে ব্যস্তব চিত্র ভিন্ন। 

উপস্থিত শিক্ষার্থী রয়েছে ৫০ থেকে ৬০ জন। কাগজ কলমের সাথে উপস্থিতির এত পার্থক্য হওয়ার কারন প্রতিষ্ঠান প্রধান আব্দুল ওহায়েদ সাহেবের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন মাদ্রাসায় আবাসিক অনাবাসিক ছাত্র রয়েছে। আবার অনেক ছাত্র ছুটিতে আছে। তাই উপস্থিতি কম। 

ভাতাভোগী এতিমদের বিষয়ে তিনি বলেন, তার মাদ্রাসায় ৯০জন ভাতাভোগী শিক্ষার্থী রয়েছে। নিয়ম অনুসারে ৯০ জনের বিপরিতে এতিম শিক্ষার্থী থাকার কথা ১৮০জন। কিন্তু তা তিনি দেখাতে পারেননি। এছাড়াও এ উপজেলার আরেকটি প্রতিষ্ঠান ঈশ্বর লক্ষিপুর মবেজ উদ্দীন বে-সরকারি শিশু সদন এখানে ভাতাভোগী এতিমের সংখ্যা ৬৫ জন। 

প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কাগজে কলমে ১০৭ জন। যদিও এ প্রতিষ্ঠানে এতিম থাকর কথা ১৩০ জন। বাস্তব চিত্র আরও ভায়াবহ। এমন চিত্রের সঠিক কোন উত্তর দিতে পারেননি প্রতিষ্ঠান প্রধান। এ সময় এতিমখানার কয়েকজন শিশুছাত্রের সঙ্গে কথা বললে তারা জানায়, তাদের সবার মা-বাবা আছেন।     

অপর দিকে বদলগাছী উপজেলার খোজাগাড়ী এতিমখানা  শিশু সনদ ও নূরানী মাদ্রাসায়  ১৯জন এতিমের জন্য মাসিক বরাদ্দ ৩৮ হাজার টাকা। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, এতিমখানাতে ৩৮ জন এতিম থাকার  কথা থাকলেও সেখানে ৬-৭জন এতিম ছাত্র দেখতে পাওয়া গেছে। 

এতিমদের সঠিক তথ্য দেখতে চাইলে প্রতিষ্ঠান প্রধান আতোয়ার হোসেন বলেন, এতিমখানার তালিকা ও কাগজপত্র কমিটির সাধারণ সম্পাদকের কাছে। তাঁর সামনেই এতিম হিসেবে দেখানো এক ছাত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার বাবা ও মা জীবিত আছেন। অপর এক শিশু ছাত্রও তার বাবা থাকার কথা জানিয়েছে। 

তিনি আরোও বলেন, তাঁদের এখানে অনেক এতিম আছে। সরকারি বরাদ্দ টাকায় এদের কিছু হয় না। তবে তাঁরা প্রচুর ব্যক্তিগত সাহায্য পান। তাঁদের প্রতিষ্ঠান ভালো চলছে বলে দাবি করেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যাক্তি জানান, এসব মাদ্রাসা ও এতিমখানার অধিকাংশ ছাত্ররা গ্রামের লোকজনের বাড়িতে লজিং থাকে।
এতিমদের খাবারের বরাদ্দকৃত টাকা শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা ভাগাভাগি করে খায়।

 সমাজসেবা অধিদফতরের নিয়মানুযায়ী যেসব শর্তে বরাদ্দ আসে তার ছিটেফোঁটাও নেই বেশির ভাগ এতিমখানায়। তারপরও বিভিন্ন তদবিরে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে এতিমখানাগুলোতে। এতিমদের টাকা যাতে নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় হয় সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা।

এবিষয়ে মহদেবপুর উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা রোকনুজ্জামন এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি এ উপজেলায় নতুন আমার আগের কর্মকর্তা সব কিছু করে গেছেন আমি শুধু ভাতা প্রদান করেছি। এবিষয়ে কোন অনিয়ম হলে তা আমি বলতে পারবনা। 

তবে এবার আমি তদন্ত সাপক্ষে সঠিক প্রতিবেদন পেরন করব। ইতি মধ্যে কয়েকটি এতিমখানা পরিদর্শন করেছি। কিছু অনিয়মও পেয়েছি। তা আমি উর্দ্ধোতম কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। 

জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক  নূর মহাম্মদ বলেন, তাঁদের নিয়ম অনুযায়ী, যাদের মা-বাবা বা শুধু বাবা নেই তারা বরাদ্দ পাবে। এ বিষয়টি মানবিক বলে বরাদ্দ দেওয়া অব্যাহত আছে। তিনি আরও বলেন আমাদর জাচায়-বাচায়ের পরও বিভিন্ন সময় এমপি মহাদয় সুপারিস  নিয়ে আসে তখন আমাদের আর কিছু করার থাকে না। 

সেই তালিকাও আমাদের সংযুক্ত করতে হয়।  যেসব এতিম খানার ছাত্রদের জন্য এমপি সুপারিস করে সেসব ছাত্রকে এতিম হিসাবে কাগজপত্র উপরে পাঠিয়ে দিয়ে থাকি এর পরেও সুনির্দিষ্ট ভাবে কোন অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. আক্তার হোসেন রিন্টু
বার্তা ও বাণিজ্যিক বিভাগ : প্রকাশক কর্তৃক ৮২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক (৩য় তলা) ওয়্যারলেস মোড়, বড় মগবাজার, ঢাকা-১২১৭।
বার্তা বিভাগ : +8802-58316172. বাণিজ্যিক বিভাগ : +8801868-173008, E-mail: dailyjobabdihi@gmail.com
কপিরাইট © দৈনিক জবাবদিহি সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft