
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে দিনের বেলা গরম অনুভূত হলেও রাতে গরম কাপড় ব্যবহার করতে হচ্ছে। আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত এমন কারণে ডায়রিয়া, পেটের ব্যথা, জ্বর-সর্দিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন স্থানীয়রা। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বয়স্ক ও শিশুরা। ধারণ ক্ষমতার বেশি রোগীর বাড়তি চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল, বেশি করে পানি এবং নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
স্থানীয়রা জানান, শীত বিদায় নিলেও ফুলবাড়ীতে এখনও রাতে বেশ ঠান্ডা অনুভুত হচ্ছে। আবার দিনের বেলা মাঝেমধ্যেই প্রচন্ড গরম থাকছে আবহাওয়া। আবহাওয়ার এমন পরিবর্তনের কারণে হঠাৎ করেই বেড়েছে ডায়রিয়া, পেটের ব্যথা জ্বর-সর্দি-কাশিসহ নানা রোগীর সংখ্যা। শিশুরা এসব রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ঘন ঘন পাতলা পায়খানা ও বমি হয়ে শরীর দুর্বল হওয়ায় চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে হচ্ছে তাদের। রোগীদের বাড়তি চাপের কারণে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা। অনেকে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিলেও, কেউ কেউ চিকিৎসক দেখিয়ে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে বাড়ি ফিরছেন।
হাসপাতালে মেয়ের চিকিৎসা নিতে আসা কৌশিল্লা রানী বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই দিনে প্রচন্ড গরম ও রাতে ঠান্ডা লাগছে। দিনের বেলা ফ্যান চালাতে হচ্ছে আর রাতের বেলা গায়ে গরম কাপড় দিতে হচ্ছে। এই গরম ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে আমার মেয়ে কয়দিন ধরে পেটের ব্যথা ও পাতলা পায়খানা জন্য দুইদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখন অনেকটাই ভালো।
হাসপাতালে শিশুকে নিয়ে আসা আরেক মা রত্না বেগম বলেন, আমার বাচ্চা গত তিন দিন ধরে পাতলা পায়খানা করছে, কোন কিছু খাচ্ছে না। এ কারণে হাসপাতালে নিয়ে আসায় হাসপাতালে ভর্তি করে ডাক্তাররা চিকিৎসা দিচ্ছেন।
হাসপাতালে আসা রোকেয়া বেগম বলেন, পেটের ব্যথার সাথে বমি-পাতলা পায়খানা শুরু হয়। এজন্য শারীরিক অবস্থা খারাপ। নিজ গ্রামের ওষুধের দোকান থেকে স্যালাইন ও ট্যাবলেট কিনে খাওয়ার পরও কাজ হওয়ায় হাসপাতালে এসেছেন। এখন অনেকটাই সুস্থ।
ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে। তবে ডায়রিয়া, পেটের ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, জ্বর-সর্দি-রোগীর সংখ্যা হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। ৫০ শর্যার ফুলবাড়ী উপজেলা হাসপাতালটি হলেও রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ধারণ ক্ষমতার বেশি রোগীকে অন্তঃবিভাগে চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তার, নার্সসহ সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১ এপ্রিল থেকে আজ রবিবার (৬ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত ফুলবাড়ী উপজেলা হাসপাতালের অন্তঃবিভাগে ২৭১ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এরমধ্যে এরমধ্যে শুধুমাত্র ডায়রিয়া রোগী রয়েছে ১১৩ জন। অবশিষ্ট ১৫৮জন রোগীর মধ্যে পেটের ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি-কাশিসহ দুর্ঘটনাজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্তমান আজ রবিবার (৬ এপ্রিল) সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত অন্তঃবিভাগে ৫৭ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। সন্ধ্যা নাগাদ এর সংখ্যা আরো বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। একইভাবে গত ২৯ মার্চ থেকে গতকাল রবিবার (৬ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত বহিঃবিভাগে ডায়রিয়া, পেটের ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি ও কাশিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ১ হাজার ৫৮৬ জন রোগী।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মশিউর রহমান বলেন, রোগীর সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেশি বেড়েছে। বিশেষ করে ডায়রিয়া, পেটের ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি-কাশির রোগীর সংখ্যা হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। এর একটা বড় কারণ আবহাওয়ার পরিবর্তন। এখন ধুলাবালি বেশি হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। ৫০ শর্যার হাসপাতাল হলেও এখানে প্রায় সময় শতাধিক রোগীকে অন্তঃবিভাগে ভর্তি করে বাধ্য হয়ে মেঝেতে রেখেই চিকিৎসাসেবা দিতে হচ্ছে। এরপর রয়েছে চরমভাবে জনবল সংকট। এই স্বল্প সংখ্যক জনবল নিয়ে চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।