বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাইবান্ধা জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম আকাশ, মেহেদী হাসান ও যুগ্ন সদস্য সচিব শেফাউর রহমান শিপনের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় ৩ জনকে উদ্ধার করে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারী সোমবার রাত্রি সাড়ে ৮টার সময় শহরের স্বাধীণতা প্রাঙ্গনে মাসব্যাপী কুটির শিল্প ও পন্য মেলায় হামলার ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মেলার ভিতরে হঠাৎ করে একদল দুর্বৃত্ত ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের ওপর চড়াও হয়। এক পর্যায়ে হামলাকারীরা তাদেরকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করাসহ ধারালো ছুরি দিয়ে এলোপাতারি আঘাত করে। আঘাতে ৩ জনেই আহত হয়।
হাসপাতালে আহত মেহেদী হাসান ও শেফাউর রহমান জানান, ছাত্র আন্দোলনের জেলার যুগ্ন সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান তার পরিবার নিয়ে মেলায় যায়। এসময় মেলার এক দোকানের কর্মচারী আসাদুজ্জামানকে হেনস্তা করে। বিষয়টি জানতে পেরে আমরা কয়েকজন মেলায় যাই। সেসময় দোকান মালিকের সাথে কথা বলে ওই কর্মচারিকে মেলা থেকে বের করে দেই।
পরে মেলা থেকে আমরা বের হওয়ার সময় অপরিচিত দুই নারীকে কয়েকজন মিলে স্টিলের চামচ দিয়ে মারধর করতে দেখি। চুরির অভিযোগে তাদের মারধর করতে বাঁধা দিলে তারা ধারালো অস্ত্র হাতে আমাদের ওপর হামলা করে। এতে আকাশ, মেহেদী ও শিপন আহত হয়।
হাসপাতালে আহতদের সঙ্গে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাইবান্ধা জেলা শাখার সদস্য সচিব বায়োজিদ বোস্তামী জীম বলেন, আমাদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে। প্রথমে ধারালো ছুরি দিয়ে তারা আসাদুজ্জামান ও মেহেদীকে আঘাতের চেষ্টা করে। এসময় মেহেদীকে বাঁচাতে গেলে আকাশের বুকে ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়।
এসময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, ঘটনাটি সদর থানার ওসি ও সেনাবাহিনীকে জানানো হলেও তাদের কোন তৎপরতা ছিলো না। হামলার ঘটনাটি পরিকল্পিত, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ও সুবিধাবাদি বিএনপির একটি দল ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে হামলা চালিয়েছে।
এদিকে, হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে রবিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সদর থানায় অবস্থান নেয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। এছাড়া তাৎক্ষণিক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে হামলার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করাসহ দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।
ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহমুদ আল হাসান ও সেনাবাহীনির সদস্যরা সদর হাসপাতালে যান। এসময় তারা আহতদের খোঁজখবর নেন এবং তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
পরে ইউএনও মো. মাহমুদ আল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, হামলার ঘটনাটি তদন্তে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহীনির সদস্যরাও কাজ করছে। দ্রুতই জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আসিফ রহমান জানান, রাত ১১টার পর দুই যুবককে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাদের মধ্যে একজনের বুকের বাঁ পাশে গভীর ক্ষত চিহ্ন রয়েছে, যা ধারালো অস্ত্রের আঘাত বলে মনে হচ্ছে। আহতদের চিকিৎসা চলছে, তবে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হতে পারে।
গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর তালুকদার আজ মঙ্গলবার দুপুরে মুঠফোনে বলেন, আমরা ৩ জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। মামলার প্রক্রিয়া শেষে তাদের জেল হাজতে প্রেরণ করা হবে।
হামলার প্রতিবাদে আজ গাইবান্ধা সরকারি কলেজ মাঠে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।