নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই জ্বালানি তেল ক্রয়-বিক্রয় ও মজুদ করে আসছিলো কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের মথুরাপুর এলাকার মীম এ্যান্ড জীম এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটর হাসিবুর রহমান। ব্যবসায় অনিয়ম করায় ও কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করায় ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পড়তে হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে, এমন উদাহরণ সহ অভিযোগ স্থানীয়দের।
মথুরাপুর বড়বাজার গরুর হাট সংলগ্ন মীম এ্যান্ড জীম এন্টারপ্রাইজে গেল বুধবার রাতে জ্বালানী তেলের বড় মজুদে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে এতে গুরুতর ভাবে দগ্ধ হয় অন্তত ৩জন। এসময় দোকানঘর সহ প্রায় দুই কোটি টাকার তেল পুড়ে যায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাতে মারা গেছে এক শ্রমিক। ভয়াবহ এমন দুর্ঘটনার আভাস জানিয়ে এর আগে স্থানীয় ও জাতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলেও তেমন কোনো সুরাহা আসেনি সেসময়। ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে অনিয়মে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলো মীম এন্ড জীম এন্টারপ্রাইজ।
খবর নিয়ে জানা গেছে, ঐদিন রাত ১১ টার পর মীম এ্যান্ড জীম এন্টারপ্রাইজের ঝুঁকিপূর্ণ তেল মজুদের স্থানে কুষ্টিয়া স্টোরের একটি তেলবাহী গাড়ি থেকে তেল আনলোড করার সময় হঠাৎ করে আগুন লেগে যায় টিনের ছাউনি দেয়া মজুদাগারে।
মুহুর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গুলোতেও টিনের ছাউনি দেয়া ঘরে মজুদ রাখা তেল ভর্তি প্লাস্টিক ও লোহার কন্টেইনার একে একে বিস্ফোরিত হতে থাকে, ওই এলাকায় তীব্র আগুনে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে । এতে কুষ্টিয়া স্টোরের তেলবাহী গাড়ির কর্মী মিলন হোসেন ও জীম এ্যান্ড মীম এন্টারপ্রাইজের কর্মী হোসেন আলী সহ অপর আরও দুই ব্যক্তি অগ্নিদগ্ধ হয়, তারা সকলে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মৃত্যু হয় হানিফ মন্ডলের ছেলে হোসেন আলীর। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নিহতের বাবা।
ঘটনার দিন কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থেকে দু'টি এবং পরে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা থেকে আরও তিনটি, মোট পাঁচটি ফায়ার সার্ভিস ইউনিট টানা আড়াইঘন্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সম্পূর্ণ অনিয়মে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটির সত্বাধীকারী হাসিবুর রহমান জানান, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ড হতে পারে। এতে আমার প্রায় দুই কোটি টাকার মত ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে ।
ভেড়ামারা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার শরীফুল ইসলাম বলেন, আগুনের সুত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে তদন্তের পর বলা যাবে। গোটা দোকানটিই পুড়ে গেছে।
কাগুজে অনুমতিপত্র দেখালেও প্রকৃতপক্ষে মানা হয়নি যথাযথ নিয়ম, নির্দেশনায় সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি দেখিয়ে সংরক্ষণ ও কেনা-বেচা করার কথা বলা হলেও এসবের কোন ছাপ ছিল না সেখানে। পেট্রোলের কন্টেইনার ঘেঁষে ইলেকট্রিক লাইন, মজুদাগারেই বৈদ্যুতিক সংযোগ, বিশেষ ধরনের অবকাঠামোর ঘর সহ কন্টেইনার রাখার দুরত্বের কথা গুরুত্ব দিয়ে বলা হলেও মানা হয়নি এসব নিয়ম। এমন কি ঝুঁকি জেনেও সেখানে নির্দেশনা অনুসারে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও ছিল না।
এর আগে তেল ক্রয়-বিক্রয় ও মজুদে ব্যাপক অনিয়মের সুস্পষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
দৌলতপুর থানার ওসি আওয়াল কবির জানান, এ ধরনের জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের পদক্ষেপে যাবতীয় সহযোগিতার জন্য দৌলতপুর পুলিশ সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ওবায়দুল্লাহ্ বলেন, এধরণের বেশকিছু ঝুঁকিপূর্ণ স্থান আছে বলে তথ্য পেয়েছি। পরিদর্শন করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।