ময়মনসিংহ ভৈরব রেলপথে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রয়েছে তিনটি রেলস্টেশন। এই তিনটি স্টেশন হলো ঈশ্বরগঞ্জ সোহাগী ও আঠারবাড়ি। ২০১৯ সালে করোনাকালীন সময়ে ঈশ্বরগঞ্জ ও সোহাগী এ দুটির স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এ স্টেশন দুটি এখন সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। নেই কোনো জনবল। আবাসিক কোয়াটার গুলো তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে স্টেশনের অনেক মূল্যবান সম্পদ বিনষ্ট ও বেহাত হয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন স্টেশন দুটির দায়িত্বে থাকা আঠারবাড়ি স্টেশন মাস্টার মিজানুর রহমান।
ময়মনসিংহ ভৈরব রেলপথে ঐতিহ্যবাহী স্টেশন হিসেবে রেল বিভাগে এ দুটি স্টেশনের ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। এককালে যাত্রী ছাউনি, আবাসিক কোয়াটার, স্টেশন মাস্টার, অফিস কক্ষ, সিগন্যাল ব্যবস্থা সহ দুটি স্টেশনেই ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ। কালক্রমে জনবল সংখ্যা হ্রাস পেতে পেতে বর্তমানে শূন্যের কোটায় পৌঁছেছে।
সরেজমিন স্টেশন দুটিতে গিয়ে দেখা যায় কয়েকজন গেইট ম্যান দিয়ে চলছে ঈশ্বরগঞ্জ ও সোহাগী রেল স্টেশনের কার্যক্রম। করোনা মহামারীর আগে এ রেলপথে ময়মনসিংহ থেকে ভৈরব ভায়া ঢাকায় চলতো ঈশাখা এক্সপ্রেস ট্রেন এবং ময়মনসিংহ থেকে ভৈরব পর্যন্ত ২৪১-২৪২ ও ২৪৩-২৪৪ নং দুই জোড়া লোকাল ট্রেন চলাচল করত। বর্তমানে ট্রেনগুলো বন্ধ রয়েছে। ফলে যাত্রী দুর্ভোগ সহ ব্যবসায়ী মহল পড়েছেন চরম বিপাকে। বর্তমানে এ রেলপথে নাসিরাবাদ ও বিজয় এক্সপ্রেস দুটি মেইল ট্রেন চলাচল করছে। বিজয় এক্সপ্রেস এ লাইনে চললেও ঈশ্বরগঞ্জ ও সোহাগী স্টেশনে কোন যাত্রা বিরতি নেই। ফলে নাসিরাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনটি ওই দুটি স্টেশনের যাত্রীদের একমাত্র ভরসা। এ রেলপথে ট্রেন সংকটের কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি ও পণ্য পরিবহন ব্যাহত হওয়ায় বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। জনবল সংকট নিরসন হলে স্টেশন দুটি ফিরে পাবে তাদের হারানো ঐতিহ্য, বাড়বে রাজস্ব আয়, এমন দাবি ঈশ্বরগঞ্জ ও সোহাগী এলাকাবাসীর।
ঈশ্বরগঞ্জ রেল স্টেশনে সোলাইমান নামে একজন (টিম্যান) রক্ষণাবেক্ষক দিয়ে চলছে স্টেশনের সকল কার্যক্রম। অপরদিকে শহিদুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম ও রাজু মিয়া নামের তিনজন গেইটম্যান দিয়ে চলছে সোহাগী রেল স্টেশনের কার্যক্রম।
সোহাগী রেল স্টেশনের লেবার উমেশ চৌহান ও ব্যবসায়ী মানিক মিয়া জানান, স্টেশনে সরকারি স্টাফ না থাকায় সিগন্যাল রুমের তার গুলো চুরি হয়ে গেছে। ফলে সিগনাল ব্যবস্থা না থাকায় এ স্টেশনে এখন আর ট্রেন ক্রসিং হয় না। আঠারবাড়ি স্টেশন মাস্টার মিজানুর রহমান মিজানুর রহমানকে দুটি স্টেশনের চার্জে দেওয়া হলেও একার পক্ষে সব বিষয় সামাল দেওয়া সম্ভব হয় না বলে তিনি জানান।
ময়মনসিংহ ভৈরব রেলপথে ঈশ্বরগঞ্জের চরাঞ্চলের সবজি, ডিম ও সোহাগী বাজারের কোটি টাকার চাটাই রেলপথে ভৈরব চট্টগ্রাম ও সিলেট সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি হতো। স্টেশন দুটিতে কর্মকর্তা কর্মচারী না থাকায় এবং ঈসাখা ও লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে সড়ক পথে তাদের পণ্য পরিবহন করতে বাধ্য হচ্ছে।
ঈশ্বরগঞ্জ বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলাল মিয়া জানান, সড়ক পথে পণ্য পরিবহনে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তাদের আয় হচ্ছে কম। বহুগুণে বেড়ে গেছে ভোগান্তি। ঈশ্বরগঞ্জ ও সোহাগী বাজারের ব্যবসায়ীদের দাবি ষ্টেশন দুটিতে জনবল নিয়োগ দিলে যাত্রী ও পণ্য বুকিং সেবা বৃদ্ধি পাবে এবং ব্যবসায়ীরা সড়ক পথের পরিবর্তে রেলপথে পণ্য পরিবহনে উৎসাহিত হবে। এতে ব্যবসায়ীদের যেমন পরিবহন সুবিধা বৃদ্ধি পাবে তেমনি রেলের রাজস্ব আয় বাড়বে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে মহা ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম জানান, জনবল সঙ্কটের কারণে স্টেশন গুলো বন্ধ রয়েছে। অবিলম্বে জনবল নিয়োগ দিয়ে পর্যায় ক্রমে স্টেশন গুলো চালু করা হবে।