শেরপুর-নালিতাবাড়ী সীমান্তবর্তী এলাকায় পাহাড়ি বন্যার ভয়াবহতা: ক্ষতিগ্রস্ত হাজারো মানুষ!
শেরপুর, নালিতাবাড়ী, হালুয়াঘাট এবং ধোবাউড়া সীমান্তবর্তী এলাকায় সম্প্রতি পাহাড়ি ঢল ও বন্যার কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। টানা বর্ষণ ও ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্টি হওয়া এই বন্যায় লক্ষাধিক মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ত্রাণ সহায়তা চালু থাকলেও পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি।
প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ পর্যন্ত প্রায় ২৫,০০০ মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৮,০০০ এরও বেশি পরিবার তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছে। বেশিরভাগ ঘরবাড়ি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে এবং কিছু জায়গায় পানির উচ্চতা ৬-৮ ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে হাজার হাজার মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্র, স্কুল এবং অন্যান্য উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
প্রায় ১৫,০০০ গবাদিপশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগি বেশি সংখ্যক। বহু পশু খাদ্যাভাবে মারা গেছে, আবার কিছু প্রাণী পানিতে ভেসে গেছে। বন্যার কারণে গবাদিপশুর খাদ্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে, ফলে অনেকেই পশুসম্পদ রক্ষায় ব্যর্থ হচ্ছেন। স্থানীয় পশুপালকরা পশুদের আশ্রয় দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
বন্যার ফলে এই এলাকার অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ বিশাল। কৃষিক্ষেত্রে ধান, সবজি, মাছের খামার এবং অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৭০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমির পরিমাণ প্রায় ১৫,০০০ হেক্টর। কৃষকরা ফসলের সঙ্গে সঙ্গে তাদের জীবিকা হারিয়েছেন।
প্রশাসন এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে ত্রাণ বিতরণ করছে। তবে প্রত্যন্ত এলাকায় রাস্তা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় অনেক জায়গায় ত্রাণ পৌঁছানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০ মেট্রিক টন চাল, শুকনা খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করা হয়েছে। তবে, অনেকেই অভিযোগ করছেন যে, প্রয়োজনের তুলনায় ত্রাণ পর্যাপ্ত নয় এবং অব্যবস্থাপনার কারণে অনেকের কাছে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না।
আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, আরো ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে নতুন করে পাহাড়ি ঢল আসতে পারে। এর ফলে বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। প্রশাসন পানি নিষ্কাশনের জন্য ব্যবস্থা নিলেও, বড় আকারের বন্যা প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপের প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এমতাবস্থায়, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন এবং আর্থিক সহায়তার জন্য সরকারের কাছে স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।