মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের মদনমোহনপুর, মাধবপুর ও পাত্রখোলা চা বাগানে চা শ্রমিকদের সাপ্তাহিক মজুরি প্রদান না করায় ১ ঘন্টা কর্মবিরতি পালন করে চা শ্রমিকরা। আজ বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯ টা থেকে সকাল ১০ টা পর্যন্ত চা বাগানে শ্রমিকদের এ কর্মবিরতি চলে। পরে শ্রমিক নেতাদের অনুরোধে শ্রমিকরা কাজে ফিরে যায়।
কর্মবিরতি চলাকালে চা শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত বুধবার সাপ্তাহিক মজুরি প্রদান করার দিনে চা বাগান কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের মজুরি দিতে পারে নি। দুই সপ্তাহ ধরে সাপ্তাহিক মজুরী দিতে পারছেনা চা বাগান কর্তৃপক্ষ। আজ বৃহস্পতিবার সকালে মদনমোহন চা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, চা বাগানের শ্রমিকরা বাগানের কাজ বন্ধ রেখে চা-বাগানের ম্যানেজার অফিসের সামনে জড়ো হয়ে কর্মবিরতি পালন করছেন।
সেখানে চা শ্রমিক রাম সেবক দাস, সীতারাম করি, নারী শ্রমিক আদরী বাক্তি, শীলা দুষাদ, কুনতলা কুর্মী বলেন, আমরা তলব, রেশন পাই না। দুই সপ্তাহ ধরে হামাদের মজুরী বন্ধ, সারা সপ্তাহ কাম করে যদি মরদ (স্বামী) শাউরী (শাশুড়ী) বাচ্চাদের উপোস রেখে জল কাকে কামমে কয়দিন যায়ে সেকব, কোম্পানি যখন লাভ করেলা তখন কি হামদের বলেলা? তব হামনি কাজ করকে কাহে উপোস রহব যা ? হামদের কামকে সাপ্তাকে তলব (মজুরী) সাপ্তামে দেহেপরি, নতুবা হামনি আন্দোলনে নামব।
এদিকে স্থানীয় ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও চা শ্রমিক সাবিদ আলী, বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি ঊমাশংকর গোয়ালা, সম্পাদক অযোদ্ধা প্রসাদ কৈরী বলেন, আজকে দুই সপ্তাহ ধরে শ্রমিকদের মজুরী ও রেশন বন্ধ থাকায় শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সারা সপ্তাহ যদি কাজ করে শ্রমিকরা অপোস দিন কাটাতে হয়, তবে তো মানুষের মাথা ঠিক থাকার কথা নয়। চা শ্রমিকরা তাদের সাপ্তাহিক মজুরীর উপর নির্ভরশীল, সাপ্তাহিক মজুরীর টাকা দিয়েই তাদের সারা সপ্তাহের বাজার সদাই করে থাকেন। দুই সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও আমাদের শ্রমিকদের মজুরী দেয়া হয়নি। বলা হয়েছে পরে দিবেন। মজুরী না পেয়ে অনেক কষ্ট করে দিন কাটাচ্ছে তারা। আমরা বাগান কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবী জানাচ্ছি, দ্রুত চা শ্রমিকদের মজুরীর ব্যবস্থা গ্রহণ করুন, নতুবা চা-শ্রমিকরা আন্দোলন করতে বাধ্য হবে। আজ আমরা তাদেরকে বুঝিয়ে কাজে ফিরিয়েছি।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের দলই ভ্যালী সভাপতি ধনা বাউরী বলেন, আমরা বাগান শ্রমিকদের সাথে কথা বলেছি। তারা মজুরী না পেয়ে অনেক কষ্টে চলছেন। যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে মজুরী না দেওয়া হয় তাহলে শ্রমিকরা কঠোর আন্দোলনে নামবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। শ্রমিকদের এই আন্দোলনের সাথে আমরা চা শ্রমিক ইউনিয়ন নেতারা অবশ্যই পাশে থাকবো।
মদনমোহন চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো: হুমায়ূন কবীর বলেন, আমাদের চা বাগান গুলো চা উৎপাদন খরছ ২৪০ টাকার উপরে হয়, কিন্তু চা নিলামে বিক্রি হয় ১৬০/১৭০ টাকা ধরে, এটা বড় একটা ঘারতি বাগান গুলোর জন্য। বর্তমানে চা বাগান গুলি চলছে কৃষি ব্যাংকের লৌন এর উপর। তবে কৃষিব্যাংক লৌন সেনশন না করার কারণে সঠিক সময়ে শ্রমিকদের মজুরী দেয়া যাচ্ছে না। আমি বিষয়টি আমার ঊর্ধ্বতনদের জানাবো। আশা করছি দ্রুতই শ্রমিকরা তাদের মজুরী পাবেন।
এদিকে বুধবার সকালে মদনমোহন পুর চা বাগান ছাড়াও মাধবপুর ও পাত্রখোলা চা বাগানের চা শ্রমিকরা এক ঘন্টা করে কর্মবিরতি পালন করে।