মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় টানা বৃষ্টিতে ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ধলাই নদীতে সৃষ্ট বন্যার পানিতে বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক বিধস্ত কাঁচা ও আধা কাঁচা বাড়ী-ঘর বিধস্ত হয়। বন্যার পানি নেমে গেলে ও বিধস্ত বাড়ী-ঘরের মালিকরা এখন ও বসবাস করছেন খোলা আকাশের নিচে। মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আর্থিক সংকটের কারনে বিধস্ত ঘর মেরামত করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেকেই ঘর নির্মানের জন্য বিত্তবানদের ধারে-ধারে ধর্না দিচ্ছেন।
জানা যায়, বন্যার পানিতে ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ১৪টি স্থানে ভাঙ্গন দিয়ে প্লাবিত হয় উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা। পানিতে নিমজ্জিত হয় ১৪৫টি গ্রাম। পানিবন্দি হয় ৪১ হাজার ৬শ ৬১টি পরিবারের লক্ষাধিক মানুষ। পানিতে তলিয়ে যায় সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর আমন ও আউশ ফসল। পানিতে ভেসে যায় ২ হাজার পুকুর,ফিশারি ও জলাশয়ের সব মাছ। পানির তোড়ে ভেঙ্গে যায় আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশাপাশি গ্রামীণ জনপদের রাস্তা। এলজিইডি আওতাধীন ৮০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রত্যন্ত এলাকার প্রায় শতাধিক কাঁচা বাড়ী-ঘর বিধ্বস্ত ও ভেঙে গেছে। তিনদিন পর পানি নেমে গেলে ভেসে উঠেছে এই ক্ষতের চিত্র।
আরো জানা যায়,বন্যায় বেশী বাড়ী-ঘর বিধস্ত হয়েছে,উপজেলা ইসলামপুর ও আদমপুর ইউনিয়নের গ্রাম সমুহ। এখানে কমপক্ষে ৫৫টি পরিবারের টিনশেডের মাটির কাঁচা বসতঘর বানের স্রোতের আঘাতেই লন্ডভন্ড হয়েছে। আদমপুর ইউনিয়নের বনগাঁও এলাকার সুন্দর মিয়া,সাবিহা বেগম, আজাদ মিয়া, আনোয়ার মিয়া, তাজ মিয়া, নাজমা বেগম, রজব আলী সহ কমপক্ষে ২০টি বসতঘর ভেঙে পড়েছে। চাম্পারায় চা বাগানের গহুর বুনার্জী, অছয় সূর্যবংশী, অনিরুদ্ধ তংলা, দেওয়ান মুন্ডা, সুমেশ রায়, উত্তম রাজভর, গুপেশ গড়,সুবাস কর্মকার, রাজু গড়,ইছামতির দুলাল কর্মকার সহ কমপক্ষে ২৫ বসতঘর ভেঙে পড়েছে। একইভাবে কুরঞ্জি এলাকায় গকুল রজক ও নকুল রজকসহ কমপক্ষে ১০ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।
এছাড়া বন্যায় উপজেলার শমসেরনগর, আলীনগর, পতনঊষার ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নে অসংখ্য ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তাজ মিয়ার বসতঘর বন্যার পানিতে ভেঙে পড়েছে। এতে স্ত্রীকে নিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন তিনি। থাকছেন ভেঙে পড়া ঘরে ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে।
সাবিয়া বেগম বলেন, মাথা গোঁজার শেষ সম্বল বন্যার পানিতে ভেঙে গেছে। আমরা এখন কোথায় যাবো? যেখানে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে ঘর ঠিক করবো কী করে ?
নাজমা বেগম বলেন,এমনিতেই তিন বেলা খেতে পারিনা,এর মধ্যে বন্যায় ঘর ভেঙ্গে ফেলেছে। এখন পেটে ভাত দিবো না ঘর মেরামত করবো এই চিন্তায় আছি। কেউ যদি সাহায্য করতো,তাহলে কোন রকম জান বাঁচাতে পারতাম।
উত্তম রাজভর বলেন,বাগানে কাজ করে যা রোজী করি তা তো সংসার চালানোই দায় পড়ে। এখন আবার বন্যা পানিতে ঘর ভেঙ্গে গেছে। ঘর কিভাবে বানাবো এই চিন্তায় রাতে ঘুমাতে পারছিনা।
আদমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদাল হোসেন ও ইসলামপুর ইউপি চেয়ারম্যান সুলেমানের সাথে আলাপ করলে তারা বলেন, বন্যায় অসংখ্য ঘরবাড়ি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানি নেমে গেলেও দুর্ভোগ বেড়েছে মানুষের। বন্যায় বসতঘরের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় গৃহহীন হয়েছেন অনেক পরিবার। বসতঘর হারানো এসব মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর দিনযাপন করছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আমরা পর্যাপ্ত ত্রাণ বরাদ্দ পেয়েছি। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ বাড়িঘরের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। তালিকা তৈরি করে দ্রুত পুনর্বাসন শুরু করা হবে।’