প্রকাশ: বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০২৪, ৫:২০ অপরাহ্ন
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় সরকারি অর্থায়নে নির্মিত একটি গ্রোথ সেন্টারে দোকান বরাদ্দের নামে দোকানিদের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
কাটলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের কাটলা ইউনিয়ন শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক এমপি শিবলী সাদিকের ঘনিষ্ট সহচর ইউনুছ আলীর বিরুদ্ধে গত মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অর্থায়নে গ্রামীণ হাটবাজার উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০২৪ সালের এপ্রিলে ২ কোটি ৬৯ লাখ ৯ হাজার ৮০০ টাকা ব্যয়ে কাটলা বাজারে গ্রোথ সেন্টারের ভবন নির্মাণ করা হয়। গ্রোথ সেন্টারের নিচ তলায় ৫টি শেডে ৩৮টি উন্মুক্ত দোকান ও দ্বিতীয় তলায় ২৪টি দোকানঘর রয়েছে। স্থানীয় ইউনিয়ন হাট-বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে গ্রোথ সেন্টারের দোকানগুলো স্থানীয় খুচরা ব্যবসায়ীদের জন্য বরাদ্দ দেয়ার কথা ছিল। গ্রোথ সেন্টার নির্মাণের পূর্বে সেখানে স্থানীয় ৫৪ জন খুচরা ব্যবসায়ীর শাকসবজি, মুদিদোকানসহ বিভিন্ন দোকান ছিল। তাঁদের অগ্রাধিকারভিত্তিক দোকান বরাদ্দ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গ্রোথ সেন্টারের ভবনটি নির্মাণের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এটি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এবং সাবেক এমপি শিবলী সাদিকের ঘনিষ্ট সহচর ইউনুছ আলীর নিকট হস্তান্তর করেন।
চেয়ারম্যান গ্রোথ সেন্টারের নিচতলায় বিভিন্ন শেডে দোকান বরাদ্দের জন্য ৩৮ দোকানদারের কাছ থেকে অবৈধভাবে দোকানপ্রতি দেড় থেকে ৩ লক্ষ টাকা করে নিয়েছেন। এছাড়া গ্রোথ সেন্টারের দ্বিতীয় তলায় নির্মিত ২৪টি দোকান বরাদ্দ দিতেও তিনি বিভিন্ন অঙ্কের টাকা নেন। চেয়ারম্যান নিজে ও তাঁর আস্থাভাজন কামরুজ্জামান ও সোহেল রানার মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এভাবে দোকান বরাদ্দের নামে কোটি টাকার বেশি ঘুষ নিয়েছেন। এতে গ্রোথ সেন্টার নির্মাণের আগে যে সকল দোকানদাররা নতুন শেডে দোকান বরাদ্দ নিতে ইউপি চেয়ারম্যানকে মোটা অঙ্কের ঘুষ দিতে পারেননি, তাঁদের ওই গ্রোথ সেন্টারে দোকান বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে ব্যবসায়ীরা তাঁদের কাছ থেকে চেয়ারম্যানের অন্যায়ভাবে নেওয়া টাকা ফেরত চেয়ে চেয়ারম্যান ও তাঁর সহযোগীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে কাটলা হাটবাজার বণিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক সামসুল মিয়া বলেন, বাজারে সরকারিভাবে গ্রোথ সেন্টার নির্মাণের আগে দোকানদারেরা যে জায়গায় ছিলেন তাঁদেরকে সেই জায়গায় দোকান বরাদ্দের কথা ছিল। কিন্তু গ্রোথ সেন্টার নির্মাণের পর মার্কেট উদ্বোধনের আগেই চেয়ারম্যান বিভিন্ন দোকানদারের কাছে অবৈধভাবে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে পছন্দমতো জায়গায় দোকান বরাদ্দ দিয়েছেন। ফলে যাঁরা চেয়ারম্যানকে টাকা দিতে পারেননি, তাঁদের দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়নি। এতে অনেক দোকানদার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদাররা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান ইউনুছ আলীর সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি।
বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং উপজেলা হাটবাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নুজহাত তাসনীম আওন বলেন, কাটলা বাজারের সরকারি গ্রোথ সেন্টারে দোকান বরাদ্দের নামে মোটা অঙ্কের টাকা নেওয়ার বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইউনুছ আলীর বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীরা একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং গ্রোথ সেন্টার বন্দোবস্ত নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবসায়ীদের মধ্যে দোকানের বরাদ্দ নিশ্চিত করা হবে।