পদত্যাগকারী দুই নেতা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হল শাখা ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা রেজওয়ান আহমেদ রোহান এবং মাদার বখ্শ হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত আল ফারাবি।
গতকাল বুধবার তারা নিজেদের ফেসবুক টাইমলাইনে পোস্ট দিয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি ছাড়েন। পদত্যাগের কারণ হিসেবে তারা জানান শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে যৌক্তিক এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহিংস আচরণের কারণে তারা পদত্যাগ করেছেন।
এ বিষয়ে ফারাবি বলেন, আমি ভালোবেসে ছাত্রলীগে এসেছি। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক ছিল। ছাত্রসংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগের উচিত ছিল সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো। কিন্তু কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ যে সহিংস আচরণ দেখিয়েছে এটি আমার ভালো লাগেনি।'
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি লিখেন, ভেবেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি করে দেশের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারব। ইতিহাসে ছাত্ররাজনীতি সম্পর্কে যেভাবে অধ্যয়ন করেছি বা মহান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের নিয়ে যা যা পড়েছি ও জেনেছি সেভাবেই রাজনীতি চর্চা করার ইচ্ছা ছিল। ছাত্রদের যৌক্তিক অধিকার আদায়ের জন্য একটি ছাত্র সংগঠনের সর্বদা পাশে থাকাটা কর্তব্য। কিন্তু সাধারণ ছাত্রদের দুঃসময়ে যদি কোনো ছাত্র সংগঠনের কর্মী হয়ে পাশে থাকতে না পারি তাহলে সেই ছাত্ররাজনীতি কল্যাণকর নয় বলে মনে করি।
তিনি আরও লিখেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পেছনে ও ৫২’র ভাষা আন্দোলনের পেছনে ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। সংগঠনকে ঘৃণা করতে পারবো না। যেদিন বাংলাদেশে আবারো সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি চর্চা হবে ছাত্রলীগে সেদিন আবারো ফিরে আসবো। ততদিন পর্যন্ত ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে ইতি টানলাম।' আল ফারাবি ছাত্রদের আন্দোলনকে যৌক্তিক উল্লেখ করে বলেন, ‘ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলন সফল হোক, সার্থক হোক।’
উল্লেখ্য মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মাদার বক্স হলে এই ফারাবি'র কক্ষ ভাঙচুর করেন। এরপর থেকে তাকে আর ক্যাম্পাসে দেখা যায়নি বলে জানা গেছে।
পদত্যাগের বিষয়ে বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব বলেন, ‘তাদের বিভিন্নভাবে ব্ল্যাকমেল করা হচ্ছে। শিবিরের নেতা-কর্মীরা বাড়িতে ফোন দিয়ে বিভিন্ন কথা বলছে। ক্লাসের বন্ধুরা তাদের বয়কট করতেছে। মোটামুটি ব্ল্যাকমেলের শিকার হয়ে তারা রাজনীতি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে।’
এদিকে, দেশে চলমান কোটা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ এবং ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপিড়ন বিরোধী ছাত্র-শিক্ষকরা। আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করে এ মানববন্ধন আয়োজন করা হয়।
মানববন্ধনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব বলেন, সুবিচারের পক্ষে যারা দাড়ানোর সাহস রাখেন তাঁরা প্রতেকেই এই সময়ের মুক্তিযোদ্ধা। ৭১ এ গিয়ে আর মুক্তিযুদ্ধ করার সুযোগ নেই। তাই এই সময়ে মানুষের অধিকার আদায়ে যারা দাঁড়িয়েছে তারা মুক্তিযোদ্ধা। আর এই সময়ে মানুষের অধিকার হরণের পক্ষে যারা দাড়িয়েছে তারা প্রত্যেকে এই যুগের রাজাকার।
তিনি আরো বলেন, আমি সারাজীবন লেখাপড়া ও গবেষণা নিয়ে থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাকে এখানে এসে দাঁড়াতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের উপেক্ষা করে এই রাষ্ট্র চলবে না। শিক্ষার্থীরা সেটি বুঝিয়ে দিয়েছে। আমাদের রাজনীতি সচেতন হওয়া দরকার।
এসময় মানববন্ধনে রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আব্দুল মজিত অন্তরের সঞ্চালনায় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা ও শিক্ষকরা যখনই তাদের অধিকারের বিরুদ্ধে কথা বলে তখনই তাদেরকে রাজাকার বলা হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে দূরে সরানোর জন্য পরিকল্পিতভাবে প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের সন্ত্রাসীলীগ দ্বারা শিক্ষার্থীদের উপর নির্যাতনের নমুনা রংপুরের আবু সাইদ থেকে আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই।
আরবি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইফতেখার আলম মাসুদ বলেন, এই ফ্যাসীবাদি সরকার শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি থেকে দূরে সরানোর জন্য ইউজিসিকে ব্যবহার করেছে। তাদের পেটুয়াবাহিনী দ্বারা শিক্ষার্থীদের উপর অন্যায়ভাবে নির্যাতন করেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের বুকের উপর তারা গুলি চালিয়েছে। এমনকি দলের সাধারণ সম্পাদক তার বক্তব্যে স্পষ্ট বলেছেন, শিক্ষার্থীদের দমিয়ে রাখতে আমার সন্ত্রাসীলীগই যথেষ্ট। সন্ত্রাসী লীগের এমন কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।'
নিপীড়ন বিরোধী ছাত্র-শিক্ষক ঐক্যের ব্যানারে এই মানববন্ধনে দুই শতাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।