কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে আজও উত্তাল দেশ। রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে দফায় দফায় চলছে সংঘর্ষ। আন্দোলনরতদের ডাকা কমপ্লিট শাটডাউনে সারা দেশ থমথমে।
অভিযোগ রয়েছে, আন্দোলনরতদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। একইসঙ্গে পুলিশের সঙ্গে এখনও চলছে সংঘর্ষ।
আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বিকেল ৫টা পর্যন্ত সারা সাতজনের মৃত্যুর খবর মিলেছে।
রাজধানীর উত্তরায় বিএনএস সেন্টারের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ-ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দুপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে তারা। হামলায় চার শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নার্সিং সুপারভাইজার শাহিদা আক্তার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শাহিদা আক্তার বলেন, হাসপাতালে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কারও কারও অবস্থা আশঙ্কাজনক। নিহত চার শিক্ষার্থীর মরদেহ হাসপাতালে রাখা রয়েছে। তবে, তাদের নাম জানা যায়নি এখনও। বিষয়টি থানায় জানানো হয়েছে।
ধানমনণ্ডির রাপা প্লাজার কাছে আহত হন কিশোর ফারহান ফাইয়াজ। রিকশায় আহত ফারহানকে নিয়ে হাসপাতালে ছোটে উদ্ধারকারীরা। বাঁচানোর চেষ্টা চললেও সাত মসজিদ রোডের সিটি হাসপাতালে মারা যান তিনি। তার মৃত্যুতে পাগলপ্রায় মা। বলেন, ‘সে এখন মৃত। আমি এর বিচার চাই।’
ফারহানের মা নাজিয়া খান তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে ছেলে হারানোর বিচার চেয়েছেন। তিনি লেখেন, ‘আমার ছেলে ফারহান। সে এখন মৃত। আমি এর বিচার চাই।’
নাজিয়া খান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুটি স্ট্যাটাস দেন। প্রথমটিতে ছেলের কয়েকটি ছবি আপলোড দিয়ে লিখেছেন, ‘তারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। তার বয়স এখনও ১৮ বছরও হয়নি। সে ২০০৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর জন্ম নিয়েছে। আমি চাই আপনারা সবাই সামর্থ্য অনুযায়ী আওয়াজ তুলুন। আমি এর বিচার চাই।’
মাদারীপুরে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনের সময় পুলিশের ধাওয়ায় শকুনি লেকে পড়ে নিখোঁজ শিক্ষার্থীর মরদেহ মিলেছে। উদ্ধার শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দুপুর দেড়টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. মনিরুজ্জামান ফকির মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে সাভারে গুলি চলেছে। এতে একজন নিহত হয়েছেন। আজ দুপুরে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, নিহত ওই শিক্ষার্থী এমআইএসটিতে অধ্যয়নরত ছিলেন।
সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার ইউসূফ আলী গণমাধ্যমে জানান, নিহত শিক্ষার্থীর শরীরে গুলির চিহ্ন রয়েছে। তাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, আহত আরও পাঁচজনকে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলায় ছয়জন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে ঢাকায় দুজন, চট্টগ্রামে তিনজন এবং রংপুরে একজন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে তিনজন শিক্ষার্থী। একজন ঢাকা কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমানে হকার বলে দাবি করা হয়।
কালো জিন্স ও নেভি ব্লু রঙের টি-শার্ট পরা এক যুবককে অ্যাম্বুলেন্সে করে সন্ধ্যা ৭টার দিকে আনা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত যুবকের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেন ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া। আর যুবককে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সের হেলপার শাকিল সাংবাদিকদের বলেন, তারা তাকে ধানমণ্ডির পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে নিয়ে এসেছিলেন। প্রাথমিকভাবে ওই যুবককে মাথায় গুরুতর আঘাত নিয়ে ঢামেক হাসপাতালে স্থানান্তরের আগে পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অ্যাম্বুলেন্স হেলপার জানান, তিনি কীভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন, সে বিষয়ে জানেন না। তিনি বলেন, ‘আমরা ধানমন্ডির পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তাকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।’
রংপুরে অবস্থান নিয়েছিলেন কোটা সংস্কারপন্থিরা। পরে দুপুরের দিকে শহরের লালবাগ এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের দিকে যান তারা। ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে বাধে সংঘর্ষ। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছোড়ে রাবার বুলেট। এতে নিহত হন আবু সাঈদ। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাঈদের মৃত্যু দেশবিদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে গতকাল তিনজন নিহত হন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পক্ষ থেকে নিহতের তথ্য নিশ্চিত করেন। যদিও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরির্দশক মো. আলাউদ্দিন দুজন নিহতের খবর নিশ্চিত করেন। জানা যায়, সংঘর্ষে চট্টগ্রাম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী ও দুই পথচারি নিহত হন। নিহত শিক্ষার্থীর নাম ওয়াসিম আকরাম, পথচারীদের নাম ফারুক ও ফিরোজ।