ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিস ও রাফা শহরের কিছু অংশ থেকে বাসিন্দাদের সরে যেতে নতুন করে আদেশ জারি করেছে।
গতকাল সোমবার (২ জুলাই) এ আদেশ জারির পর অনেকেই ওই এলাকা ছাড়তে শুরু করেছেন বলে জানিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীরা।
ইসরায়েল জানিয়েছে, খান ইউনিস অঞ্চল থেকে দেশটিতে ২০টি "ক্ষেপণাস্ত্র" নিক্ষেপ করা হয়েছে। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই আল-কারারা, বনি সুহাইলা এবং দুটি প্রশাসনিক অঞ্চলের অন্যান্য শহরগুলোর বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার আদেশ জানিয়ে অফিসিয়াল বিবৃতি দেয় ইসরায়েল।
গত কয়েকদিন ধরে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠনের হামাসের মধ্যে নেটজারিম করিডোরে ব্যাপক সংর্ঘষ চলছে। ইসরায়েল হামাসকে লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালাচ্ছে। খান ইউনূস এলাকায় ইসরায়েলের বোমা হামলায় একজন নিহত ও ছয়জন আহত হয়েছে। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী খান ইউনূস, রাফা ও শুয়াজা থেকে মানুষ পালিয়ে যাওয়ার সময় ট্যাংকের সামনে আটকে রাখার ঘটনা ঘটেছে।
ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন ইসলামিক জিহাদের যোদ্ধারা ইসরায়েলের সৈন্যদের লক্ষ্য করে পাল্টা বোমা হামলা চালিয়েছে। গতকাল থেকে ইসরায়েল বারবার বিমান হামলা চালাচ্ছে। হামলায় ব্যবহৃত বোমা ও গোলা বারুদের ধোঁয়ায় ফিলিস্তানের আকাশে ঘন ঘন মেঘে ঢাকা পড়ছে।
বনি সুহাইলার বাসিন্দা আহমদ নাজ্জার বলেন, ‘সরে যাওয়ার আদেশ জারির পর মানুষের মধ্যে ভয় ও চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। কোথায় আশ্রয় নেবে, কেউ তা জানেন না। লোকেরা প্রতিদিনই বাস্তুচ্যুত হচ্ছে।’
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন, ইসরায়েলের চরম নৃশংসতা গাজায় আর কোনো জায়গা নিরাপদ নয়। বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য আমাদের সবার মিলেমিশে কাজ করা দরকার। গাজার মানুষ প্রতিদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে, বাস্তুচ্যুতি তাদের সঙ্গে নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
এদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খান ইউনিসের পূর্বাঞ্চল থেকে বাসিন্দাদের অবিলম্বে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এতে খান ইউনিসে বাস্তুচ্যুতদের জন্য ইউরোপীয় হাসপাতাল ও তাঁবু শিবিরগুলো থেকে মানুষ পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
স্থানীয় খবর অনুযায়ী, খান ইউনিসের পূর্বাঞ্চলে একটি বাড়িতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গোলাবর্ষণে কমপক্ষে একজন নিহত এবং ছয়জন আহত হয়েছেন।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের হামলার মধ্য দিয়ে নতুন করে শুরু হওয়া এ যুদ্ধে ৩৭ হাজার ৯০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৮০ হাজার ৬০ জন আহত হয়েছে। হামাসকে ধ্বংসের অভিপ্রায়ে ২৭ অক্টোবর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় স্থল আক্রমণ শুরু করে। এরপর থেকে ফিলিস্তানের পুরো অঞ্চল তারা ধীরে ধীরে ধ্বংস করছে। বার্তা সংস্থা এএফপির তথ্যমতে, চলমান যুদ্ধে ১ হাজার ১৯৫ জন ইসরায়েলি নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, হামাস ২৫১ জনকে বন্দি করেছে, যাদের ১১৬ জন এখনও গাজায় রয়েছে এবং বন্দিদের মধ্যে ৪২ জন মারা গেছে।