বেগম খালেদা জিয়াকে বাংলাদেশের মানুষ আপসের নেত্রীর খেতাব দিয়েছে। কিন্তু কেন তাকে এই উপাধি দেওয়া হল তা হয়তো জানেন না এখনকার প্রজন্ম, জানার কথাও না৷
বিগত ১৬ বছরে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছিল বাংলাদেশে ইতিহাস থেকে যে পরিবারের ভূমিকা মুছে ফেলা চলুন এক নজরে দেখে আসি কেন বেগম জিয়াকে বলা হয় আপসের নেত্রী।
প্রায় ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয় এবং তিনি দেশে ফিরে হাল ধরেন দলটির একই বছর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি লেফটেন্যান্ট জেনারেল জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়।
এরপর ক্ষমতা দখল করেন আরেক সেনাপ্রধান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। এরশাদের শাসনামলে একযোগে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি । সে সময় আওয়ামী লীগ ছিল দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল ৮৬ সালে এরশাদ এক নির্বাচনের আয়োজন করলেন।
আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামাত সিদ্ধান্ত নিল যে তারা নির্বাচন বর্জন করবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আওয়ামি লিগ ও জামাত এরশাদের আয়োজিত 86 নির্বাচনে অংশ নেয়। আর সে সময় অনেকে আওয়ামী লীগের জাতীয় বেইমান বলেও আখ্যায়িত করেন।
অনেক সূত্র থেকে জানা যায়, সেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য শেখ হাসিনা তৎকালীন সরকার প্রধান থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছিলেন। জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগ বা জামাত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও বিএনপি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করল না করলে হয়ত শেখ হাসিনার মতো বেগম জিয়া মোটা অঙ্কের টাকা পেতেন। সেই সময় থেকেই তাঁর নাম দেওয়া হল আপসহীন নেত্রী। ৮৬ নির্বাচনে অংশ না নিলেও খালেদা জিয়া তথা বিএনপির জনপ্রিয়তা উঠে গেল তুঙ্গে ৯১ সালে এরশাদের পতন হল।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার আয়োজনে অনুষ্ঠিত হল নির্বাচন আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল এমন বিশ্বাস থেকে শেখ হাসিনা নির্বাচনের আগে মন্ত্রিসভা ঠিক করে রেখেছিলেন। কিন্তু জিতে গেলেন বেগম খালেদা জিয়া ও তার দল বিএনপি। অনেক বিশ্লেষকের মতে, ছিয়াশি নির্বাচনের সাথে সাথে আপোস না করার কারণেই এত জনপ্রিয়তা পেয়েছিল বিজেপি ।
১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে পূর্ণ মেয়াদের শাসন করলেন বেগম খালেদা জিয়া। মেয়াদ শেষে তিনি দলীয় সরকারের অধীনেই ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে দিলেন। অনেক বিশ্লেষকের মতে, এটি ছিল একটি রাজনৈতিক ভুল, একই ভুল ২০১৪ সালে শেখ হাসিনা করেছিলেন, কিন্তু বেগম জিয়া যখন দেখলেন এই নির্বাচনের পক্ষে জনগণের সমর্থন নেই, তখন তিনি ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে বসে থাকলেন না কোনও আন্দোলনকারীদের উপর গুলি চালালেন তিনি। তাঁর ভুল শুধরে নিলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন করে নির্বাচন দিলেন।
২০০৯ সালে বিডিআর হত্যাকাণ্ড ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে ঘটনা। এ সব নিয়ে ১৪ নির্বাচনের আগে অনেকটা দুর্বল হয়ে গিয়েছিল আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনা সেটা বুঝতে পেরেছিলেন। আর তাই তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিলেন না। এমনকী এই প্রথায় বাতিল করে দিলেন। বেশ কিছু সূত্র থেকে জানা যায় যে, সেসময় শেখ হাসিনা বেগম জিয়াকে ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিনিময়ে বেশ কিছু মন্ত্রণালয় দেওয়ারও প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু এবারও আপস করবেন না খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। এই দাবিতে অনড় ছিলেন তিনি। ফলাফল, বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করল।
২০১৪ একতরফা নির্বাচনে যখন আওয়ামি লিগ জিতল সেসময় বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, আওয়ামী লীগকে আমাদের কিছু করতে হবে না৷ ওরা নিজেরাই একদিন পোচ পেয়ে পচে দুর্গন্ধ ছড়াবে।