রাশিয়া-ইরান উত্তেজনার প্রভাব জ্বালানি তেলের বিশ্ববাজারে। কিছুটা কমলেও তেলের দাম এখনও গত ২ সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়েই রয়েছে। এর মধ্যে শুধু গত সপ্তাহেই তেলের দাম বেড়েছে ৬ শতাংশ।
তেলের দামের এই নিম্নমুখি প্রবণতার জন্য বিশ্বের অন্যতম তেল উৎপাদনকারী দেশ রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে পশ্চিমাদেশগুলোর উত্তেজনাকে দায়ি করা হচ্ছে। এতে ঝুঁকি বাড়ছে তেল সরবরাহ নিয়ে।
২৫ নভেম্বর সোমবার ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেল প্রতি ২৬ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ কমে ৭৪ দশমিক ৯১ ডলারে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের দাম ২৭ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ কমে ৭০ দশমিক ৯৭ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
উভয় বেঞ্চমার্কের দাম গত সপ্তাহে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যায়। কারণ সে সময় রাশিয়ার অভ্যন্তরে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালানোর অনুমোদন দেয়া হয় ইউক্রেনকে। এর জবাবে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে কিয়েভে হামলা চালায় মস্কো। এ নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমাদেশগুলোর উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করে।
একইভাবে ইরানের সঙ্গেও পশ্চিমাদের উত্তেজনা বেড়েছে। কারণ আন্তর্জাতিক অটোমিক শক্তি সংস্থা ইরানের বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব পাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, পারমাণবিক ইস্যুতে তেহরান অসহযোগিতা করছে। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান নতুন ও অত্যাধুনিক সেন্ট্রিফিউজ স্বক্রিয় করার ঘোষণা দিয়েছে। ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থা ও ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই প্রস্তাব পাসের নিন্দা জানিয়েছে।
গত ২২ নভেম্বর, শুক্রবার ইরানের পারমাণবিক প্রধান মোহাম্মদ এসলামি নতুন ও উন্নত সেন্ট্রিফিউজ চালু করার আদেশ জারি করেছেন, যা দ্রুত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে সক্ষম।
আর্ন্তজাতিক তেলের বাজার বিশ্লেষনে দেখা যায়, গত ২১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার জানুয়ারি মাসের জন্য ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ২৮ সেন্ট বা ০.৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩.০৯ ডলারে। আর ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ২৮ সেন্ট বা ০.৪ শতাংশ বেড়ে অবস্থান করছে ৬৯.০৩ ডলারে।
মূলত গত ২০ নভেম্বর প্রথমবারের মতো রাশিয়ার অভ্যন্তরে যুক্তরাজ্যের তৈরি দূরপাল্লার স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইউক্রেন। যার প্রভাবে নতুন করে বেড়েছে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা। এতে বাড়তে শুর করেছে জ্বালানি তেলের দাম।
তবে সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা আগামী কয়েক বছরে কমতে পারে। এ সময় ওপেক ও সহযোগী দেশগুলো জ্বালানি তেল উত্তোলন হ্রাস করলেও যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশে উত্তোলন বাড়বে। ফলে আগামী বছর চাহিদার তুলনায় জ্বালানি তেলের সরবরাহ বেশি হতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর উত্তোলন হ্রাস অব্যাহত থাকলেও আগামী বছর চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত ১০ লাখ ব্যারেল তেল সরবরাহ হতে পারে। এর মূল কারণ হলো চীনের নিম্নমুখী চাহিদা। এতে তেলের দাম আরও কমে যেতে পারে।
মার্কিন বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগ্যান সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলেছে, আগামী বছরে তেলের দাম ব্যারেপ্রতি ৬০ ডলারে = নেমে আসতে পারে।