তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ মানুষ। গরমে অস্থির পথচারীদের এক মুহূর্তের জন্য হলেও তৃষ্ণা স্বস্তি এনে দিচ্ছে কচি তালের শাস। গরম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের পিপাসা চাহিদা বেড়েছে। এদিকে ডাবের দাম বেড়ে যাওয়ায়, ডাবের পানির পরিবর্তে কচি তালের শাঁস খেয়ে পানির চাহিদা পুরণ করছে। বছরের শুরুতে মৌসুমি এ ফলের চাহিদা বেড়েছে। মিষ্টি ও রসালো পানির কারনে বিক্রিও হচ্ছে ভালো দামে।
চলছে মধুমাস জৈষ্ঠ্য। এই মাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে হরেক রকমের সুস্বাদু ফল। ফলের তালিকায় রয়েছে- আম, জাম, কাঠাল, লিচু ছাড়াও অন্যতম আরেকটি ভিন্নধর্মী ফল তালের শাস। তালের শাসের নরম অংশটি খুবই সুস্বাদু। প্রচণ্ড গরমে তালের এই শাঁস মানুষের কাছে খুবই প্রিয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সামনে সহ বিভিন্ন স্থানে এখন বিক্রি হচ্ছে কচি তাল শাঁস। ছোট বড় প্রকার ভেদে চারটি তাল শাস প্রতিটির দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি করছে বিক্রেতারা।
মেহেরপুর সদর উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের খুচরা তাল শাস বিক্রেতা মহিবুল বলেন, বছরের অন্য সময় ইটভাটাসহ বিভিন্ন কাজ করলেও তালের মৌসুমে তিনি এই ব্যবসা করে থাকেন। ১০ বছর ধরে তিনি এই ব্যবসায় যুক্ত আছেন।
এবার ১২০টি তালের গাছ কিনেছেন। গাছ থেকে নিজেরাই তাল পেড়ে শহরে এনে বিক্রি করেন। প্রতিদিন তিনি তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকার তাল শাঁস বিক্রি করে থাকেন।
মহিবুল আরো বলেন, তালগাছ থেকে ফল কেটে আনা একটি কষ্টকর বিষয়। একটি গাছে ৩০০ থেকে ৩৫০ ফল পাওয়া যায়। জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম দিকে বিক্রি শুরু হয়, চলে পুরো মাস জুড়ে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এলাকায় খুচরা কচি তাল শাঁস বিক্রেতা লিটন বলেন, গরম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে এখন তালের শাসের ভালো চাহিদা রয়েছে। প্রতি পিচ চার পিস তাল শাঁস ২০ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি করছি। বিক্রিও বেশ ভালো।
তাল শাঁস ক্রেতা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক তৌফিকুর রহমান বলেন, গ্রীষ্মের অন্যতম একটি আরামদায়ক ফল হচ্ছে তালের শাঁস। গরমে তালের শাঁস খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার হিসেবে পরিচিত। তালের শাঁস খেতে অনেকটা নারকেলের মতই। নরম ও সুস্বাদু হওয়ায় পরিবারের সকলেই তাল শাঁস খেতে খুবই ভালোবাসে। কেবল খেতেই সুস্বাদু নয়, এর রয়েছে পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা।
ক্রেতা নজরুল ইসলাম বলেন, বিষমুক্ত ফল হিসেবে তাল একমাত্র ফল। নরম রসালো তাল শাঁস খেতে সুস্বাদু। চলার প্রায় প্রতিদিনই বাড়ির জন্য কিনে নিয়ে যায়। পরিবারের সকলেই খেতে ভালোবাসে।
ডা. সৈয়দ আমিরুল হক শামীম বলেন, তালের শাসের পুষ্টি গুণ অনেক। প্রচণ্ড গরমে কচি তালের শাস এবং এর ভেতরের মিষ্টি পানি তৃষ্ণা মিটিয়ে শরীরে এনে দেয় আরামদায়ক অনুভূতি। তিনি আরো বলেন, তালের শাসে আশ থাকায় এটি হজমে সহায়ক। তালের শাস হাড় গঠনেও দারুণ ভূমিকা রাখে। কচি তালের শাস রক্তশূন্যতা দুর করে। মুখের রুচি বাড়ায়। এতে সুগার কম থাকায় ডায়াবেটিক রোগিরাও খেতে পারে।