শুক্রবার (৮ মার্চ) তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পটুয়াখালীর গলাচিপায় কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় নিহত হয় জিসান (১৮) নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী। গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মৃত্যুবরণ করেন শিক্ষার্থী জিসান।
কলেজ ছাত্র জিসান হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত ‘বাইক বাপ্পি’ গ্রুপের গ্যাং সম্রাট বাপ্পি এবং তার অন্যতম সহযোগী মাহিন’কে শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের মাধ্যমে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৮।
আজ রবিবার বেলা ১ টায় র্যাব-৮ এর পটুয়াখালী কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব-৮ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী যুবায়ের আলম শোভন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে ঘটনার বিবরণ দিয়ে র্যাব জানায়, পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা থানাধীন দক্ষিন চর বিশ্বাস গ্রামের বাসিন্দা জৈনক মোঃ মশিউর রহমান এর ছেলে ভিকটিম মৃত জিসান (১৭), কেরামত-আলী ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর একজন ছাত্র ছিল। ঘটনার দিন গত ০৮ মার্চ ২০২৪ ইং তারিখ আনুমাকি সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ভিকটিম জিসান তার বন্ধু শামীকে নিয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল।
এ সময় এক কিশোর রাস্তায় ধুলা উড়িয়ে দ্রুত মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলো। ভিকটিম জিসান তাকে ধুলা না ওড়ানোর জন্য অনুরোধ করলে ভিকটিমের সাথে ০১ নং অভিযুক্ত মোঃ বাপ্পি চৌকিদারের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কিশোর গ্যাং এর মূল হোতা বাপ্পি তার গ্যাং এর অন্য সহযোগিদের বটতলা বাজারে জড়ো হতে বলে। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, বাপ্পির নেততৃত্বাধীন এই গ্যাং এর নাম ছিল ‘বাইক বাপ্পি’। উক্ত ঘটনার জের ধরে একই তারিখ রাত্র অনুমান আট টায় অভিযুক্ত বাপ্পি ও তার গ্যাং এর অন্য সদস্যরা জিসান বাজারে পৌঁছানো মাত্র তাকে বেআইনী জনতাবদ্ধে লাঠি-সোটা, কাঠের চলা হাতে নিয়ে অতর্কিত হামলা শুরু করে। হামলার এক পর্যায়ে অভিযুক্তরা ভিকটিমকে এলোপাতাড়ী মারপিট করে জখম করার পর ০১ নং অভিযুক্ত মোঃ বাপ্পি চৌকিদার (১৮) তার হাতে থাকা কাঠের চলা দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথা লক্ষ্য করে কয়েকটি আঘাত করলে ভিকটিম রক্তাক্ত অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
ভিকটিমের মৃত্যু হয়েছে ভেবে অভিযুক্তরা ত্রাশ সৃষ্টি করে বীরদর্পে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন এসে আহত ভিকটিমকে গলাচিপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল সদর হাসপাতালে এবং পরবর্তীতে বরিশাল থেকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠান।
ঢাকা মেডিকেলে ১১ দিন চিকিৎসার পর গত ১৯ মার্চ ২০২৪ তারিখ আপত দৃষ্টিতে ভিকটিমের শারিরীক অবস্থার উন্নতি দেখে তাকে ছেড়ে দেওয়া হলে ভিকটিমের বাবা তাকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসেন। তবে বাড়িতে আসার পর একই দিন ভিকটিম জিসান পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নিয়ে দ্রুত তার পিতা গলাচিপা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মৃত ঘোষণা করে।
পরবর্তীতে মৃত ভিকটিমের পিতা বাদী হয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গালাচিপা থানায় অভিযোগ দায়ের করে।
র্যাব আরও জানায়, বিষয়টি র্যাবের নজরে আসলে র্যাব-৮ এর সিপিসি-১ (পটুয়াখালী) এবং সিপিএসসি ভোলা ক্যাম্পের একটি যৌথ আভিযানিক দল অভিযুক্তদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে অভিযান পরিচালনা করে গত ২২ মার্চ আনুমানিক ৪.৩০ টায় ০১ নং অভিযুক্ত ‘বাইক বাপ্পি’ গ্রুপের গ্যাং সম্রাট মোঃ বাপ্পি চৌকিদার (১৮) কে মামলা রুজু হওয়ার রাত থেকে একটানা ৬৫ ঘন্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে পলাতক অবস্থায় ভোলা জেলার দক্ষিণ আইচা থানাধীন করিমপাড়ার একটি বিচ্ছিন্ন চর এলাকা হতে গ্রেফতার করে। একইসাথে ঐরাতেই র্যাব-১৫ এর সহযোগিতায় ভিন্ন একটি অভিযান পরিচালা করে উক্ত মামলার ২য় অভিযুক্ত মোঃ মাহিন শিয়ালী (১৮) কে গত ২৩ মার্চ আনুমানিক ৪ টায় সাঁড়াসি অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে বান্দরবান জেলার সদর থানাধীন বান্দরবান পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড এলাকার আর্মি পাড়া এলাকা হতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত অভিযুক্তদ্বয় ঘটনার সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে।
মামলা রুজু হওয়ার পর তারা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়ানোর লক্ষ্যে প্রত্যন্ত অঞ্চলে আত্মগোপন করেছিল বলে স্বীকার করে।
গ্রেফতারকৃত অভিযুক্তদ্বয়কে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে উল্লেখিত বাইক বাপ্পি গ্যাং এর অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারের কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানায় র্যাব-৮ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী যুবায়ের আলম শোভন।