প্রকাশ: বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ১০:৩৮ অপরাহ্ন
১৭৬ জনের তালিকা করেছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ (বিএমপি)। স্বেচ্ছায় পছন্দমতো স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করতে বলা হয়েছে তাদের। দেওয়া হয়েছে নির্দিষ্ট সময়। তারপর শুরু হবে বদলি প্রক্রিয়া। বিষয়টিকে শুদ্ধি অভিযান আখ্যা দেওয়া হলেও সংবাদকর্মীদের কাছে মুখ খুলছেন না কেউ। পুলিশের চাকরিতে বদলি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া-এমনটাই বলছেন বিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
৪ থানা, ৪ ফাঁড়ি, ডিবি, সিটি এসবি ও পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় মিলিয়ে বিএমপিতে কর্মরত সদস্যের সংখ্যা ১ হাজার ৭৩১। তাদের মধ্যে সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) থেকে কমিশনার পদে ৫৯৬ জন কর্মরত। বাকিরা নায়েক হাবিলদার কিংবা কনস্টেবল। কাঠামো অনুযায়ী এরপরও ৩৬৯টি পদ শূন্য।
দিন শেষে সবাই কিন্তু থেকে যান বরিশালেই। বিয়ে করে বানিয়েছেন আত্মীয়ের দীর্ঘ তালিকা। নগরবাসীর কাছেও তারা ঘনিষ্ঠ পরিচিত। তাদের দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রায়ই বাধে জটিলতা। পরিচিত মুখ হওয়ায় দেখেই পালায় আসামি। আত্মীয়তা কিংবা পরিচয় সূত্রে অপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টাও থাকে কারও কারও মধ্যে। এসব বিবেচনা করেই তাদের সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আলোচ্য পৌনে দুইশর বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে রয়েছে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ। তাদের মধ্যে নগরে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সুদৃশ্য ভবন রয়েছে পরিদর্শক পদমর্যাদার এক কর্মকর্তার। মাঝে কদিন অন্য জেলায় থাকা ছাড়া চাকরির শুরু থেকেই তিনি আছেন বরিশালে। আরেকজন শিক্ষানবিশ উপপরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার পর থেকে আছেন এখন পর্যন্ত। পরিদর্শক পদের এ কর্মকর্তা রয়েছেন একটি থানার দায়িত্বে। এছাড়া এক নিরস্ত্র পরিদর্শক আছেন চাকরির শুরু থেকেই। পিছিয়ে নেই উপপরিদর্শক (এসআই) পদের কর্মকর্তারাও। নগরের জিয়া সড়কে ভবন, কলেজ অ্যাভিনিউ এলাকায় ফ্ল্যাট, রুইয়ার পোল এলাকায় জমি ও সিঅ্যান্ডবি রোডে প্লটের মালিক ৪ উপপরিদর্শক এখানে আছেন এক যুগেরও বেশি সময়। এছাড়া এএসআই পদের এক কর্মকর্তা সদর উপজেলার চরকাউয়া এলাকায় অর্ধকোটি টাকারও বেশি মূল্যে কিনেছেন জমি। যিনি ১২-১৩ বছর আছেন মেট্রো পুলিশে। এর পাশাপাশি স্ত্রী, ছেলেমেয়ে কিংবা ভাইয়ের নামে বিত্তের মালিক হয়েছেন বিভিন্ন পদমর্যাদার মাঠপর্যায়ের বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা।
মেট্রো পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, সঠিক পন্থায় অভিযোগ না আসায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। এছাড়া দাপ্তরিক কিছু জটিলতাও আছে। এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে মেট্রো পুলিশে শৃঙ্খলা ফেরানোর পাশাপাশি ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখা। এ কারণেই এই শুদ্ধি অভিযান।
পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বছর দুয়েক আগেও এরকম শুদ্ধি অভিযান চালানো হয়েছিল। হাইওয়ে পুলিশের বর্তমান প্রধান অতিরিক্ত আইজি শাহাবুদ্দিন তখন ছিলেন এখানকার পুলিশ কমিশনার। একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ওই সময় মেট্রো পুলিশের মাঠপর্যায়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল বরিশাল থেকে। বরিশালের পুলিশ কমিশনার জিহাদুল কবির বলেন, বদলি পুলিশের একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। এটাকে ভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করার সুযোগ নেই। একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর সবাইকে নতুন জায়গায় বদলি করা হয়। এর বাইরে আমার কিছু বলার নেই।
পুলিশের অতিরিক্ত আইজি শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ বলেন, পুলিশ প্রবিধান আর প্রভিশন কিন্তু এক নয়। এটা ঠিক যে একই কর্মকর্তা দীর্ঘদিন একই জায়গায় থাকলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নে খানিকটা হলেও জটিলতা হয়। দীর্ঘ সময়ে ওই কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠ একটা বলয় তৈরি হয়। জেলা পুলিশের ক্ষেত্রে একটা নিয়ম আছে নিজ জেলায় কোনো পুলিশ কর্মকর্তা চাকরি করতে পারবেন না। মেট্রোর ক্ষেত্রে বিষয়টি জটিল। তবু আমি মনে করি, সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন প্রশ্নে একই স্টেশনে কোনো কর্মকর্তার যেমন ৩ বছরের বেশি থাকা উচিত নয়, তেমনই তাকে রাখাও উচিত নয়।