গতকাল শনিবার লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের ক্রমাগত হামলার মুখে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ইয়েমেনের হুতি স্থাপনাগুলোতে আবারও বিমান হামলা চালিয়েছে।
ইরাক ও সিরিয়ায় ইরান সমর্থিত বিদ্রোহী সংগঠনটির বিভিন্ন স্থাপনায় মার্কিন বিমান হামলার একদিন পর ইয়েমেনে এই যৌথ বিমান হামলা চালানো হলো। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল, গত ২৮ জানুয়ারি জর্ডানে মার্কিন ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় তিনজন মার্কিন সেনা নিহতের প্রতিশোধ নিতে তারা ওই দুই দেশের হুতি অবস্থানে বিমান হামলা চালিয়েছে।
এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য জানায়, সর্বশেষ গতকাল শনিবারের হামলায় ইয়েমেনের ১৩টি এলাকায় ৩৬টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়। লোহিত সাগরে চলাচল করা বাণিজ্যিক জাহাজে হুতিদের হামলা ঠেকাতে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বজায় রাখতে হুতিদের অবস্থানে হামলা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেছেন, অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে ইরান সমর্থিত মিলিশিয়াদের বেপরোয়া হামলার সামর্থকে ভেঙে দিতে এই যৌথ বিমান হামলা চালানো হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ১৩টি স্থানে যৌথ বাহিনীর হামলায় হুতিদের অস্ত্র ভান্ডার, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসহ রাডার স্থাপনা ধ্বংস করে দেওয়া হয়। বিবৃতিতে কোন স্থানগুলোতে হামলা চালানো হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। তবে হুতি নিয়ন্ত্রিত আল-মাসিরাহ টেলিভিশনে বলা হয়, সানাসহ বিভিন্ন স্থানে বিমান হামলা চালানো হয়েছে।
এদিকে শনিবারের হামলার পর হুতি বিদ্রোহীদের মুখপাত্র নাসর আল-দিন আমের বলেছেন, ‘হয় আমাদের জন্য এবং গাজায় ফিলিস্তিনিদের জন্য শান্তি থাকবে অথবা কোনো ধরনের শান্তি থাকবে না। আর এই অঞ্চলে আপনাদের (যুক্তরাষ্ট্র) জন্য নিরাপত্তা থাকবে না। আমরা তীব্রতার জবাব তীব্রতার মাধ্যমেই দেব।’
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে মাত্রা পায় সংঘাত। হামলার জবাবে গাজায় নির্বিচার বোমাবর্ষণ শুরু করে ইসরায়েল। ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হতে থাকে ফিলিস্তিনের আশপাশের এলাকা। একে একে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে লেবানন, ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেনে।
গত সপ্তাহে জর্ডানের একটি ঘাঁটিতে অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের ওপর চালানো হয় ড্রোন হামলা। হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত ও অর্ধশতাধিক সৈন্য আহত হয়। যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করে ইরান সমর্থিক মিলিশিয়ারা এই হামলা চালিয়েছে। আর এর জবাবে হামলা চালানো হয় ইরাক ও সিরিয়ায় ইরানি বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে। গত শুক্রবার চালানো ওই হামলার নিন্দা জানায় ইরাক ও সিরিয়ার সরকার। তবে তেহরান জানায়, এই হামলা কেবল উত্তেজনাকে আরও বাড়াবে।
এদিকে কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ আগামীকাল সোমবার রাশিয়ার আহ্বানে শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি হুমকি হয়ে ওঠা মার্কিন হামলার প্রতিবাদে একটি বিশেষ অধিবেশন ডাকতে পারে।