শনিবার ১২ অক্টোবর ২০২৪ ২৭ আশ্বিন ১৪৩১
 

আপনারা না পারলে আমাদের দায়িত্ব দেন: সারজিস আলম    ডেঙ্গুতে একদিনে সর্বোচ্চ ৯ মৃত্যু, হাসপাতালে ৯১৫ জন    গণহত্যার পক্ষে কাজ করা গণমাধ্যমের বিচার করা হবে: উপদেষ্টা নাহিদ    রাজনৈতিক পরিচয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না: আইজিপি    সব সম্প্রদায়ের সমান অধিকারের দেশ গড়তে চাই: ড. ইউনূস    মালয়েশিয়ায় ভবন ধসে বাংলাদেশি শ্রমিক নিহত    জিরো টলারেন্স নীতি শর্তেও নানা ‘অপরাধে’ জড়িয়ে পড়ছে বিএনপি   
যে কারণে বিমানের চাকায় গ্যাস ব্যবহার করা হয়
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৩, ১:২০ অপরাহ্ন

সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চাকা বাতাস দিয়ে পূর্ণ করা হয়। কিন্তু বিমানের চাকায় সাধারণ বাতাস ভরা হয় না। বাতাসের পরিবর্তে বিমানের চাকায় ভরা হয় গ্যাস। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগতে পারে বিমানের কোন গ্যাস ব্যবহৃত হয়? কেনইবা বাতাসের পরিবর্তে গ্যাস ভরা হয়? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা যাক।

বিমানের চাকা কোন গ্যাস দিয়ে পূর্ণ করা হয়?
সাধারণত ভূ-পৃষ্ঠে চলাচলকারী যানবাহনগুলো যেমন বাস, ট্রাক বা গাড়ি ইত্যাদির চাকাগুলো সাধারণ ধরনের হয়। কিন্তু মজার ব্যপার হচ্ছে, বিমান মূলত আকাশযান হলেও ট্যাক্সিংয়ের জন্য চাকার প্রয়োজন হয়। ট্যাক্সিং হচ্ছে বিমান আকাশে ওড়ার পূর্বে এবং ল্যান্ডিং এরপর মাটিতে চলার ঘটনা। উড়োজাহাজের ট্যাক্সিং এর জন্য সবচেয়ে জরুরি যে অংশটি, তা হচ্ছে ল্যান্ডিং গিয়ার। আর ল্যান্ডিং হুইলের উপর ভর করেই উড়োজাহাজের ট্যাক্সিং সম্পন্ন হয়। 

বিমানের চাকায় নাইট্রোজেন গ্যাস পূর্ণ করা হয়
যেকোনো ধরনের বিমানের ক্ষেত্রেই চাকায় সাধারণ বাতাসের পরিবর্তে নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করা হয়। এটা করা হয় মূলত নাইট্রোজেন গ্যাসের নিষ্ক্রিয় ধর্মের কারণে। সাধারণত বড় বড় যাত্রীবাহী বিমানগুলো ৩০ হাজার ফুট থেকে ৬৫ হাজার ফুট উচ্চতায় চলাচল করে। আর এই উচ্চতায় বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা মাইনাস ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে মাইনাস ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে।

বিমানের চাকায় বাতাসের পরিবর্তে গ্যাস ভরার কারণ
সাধারণ বাতাসে সবসময়ই কিছু পরিমাণে জলীয় বাষ্প থাকবেই। যদি বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ারের টায়ারে বাতাস ব্যবহার করা হয়, তাহলে এই নিম্ন তাপমাত্রায় বাতাসের সাথে থাকা জলীয় বাষ্প জমাট বেঁধে ছোট ছোট বরফের টুকরায় পরিণত হবে। এই অবস্থায় যখন বিমানটি মাটিতে অবতরণ করবে, তখন এর টায়ারের চাপ পরিবর্তিত হবে। যার ফলে বিমানটি মারাত্মক দুর্ঘটনায় পতিত হতে পারে।

নাইট্রোজেন গ্যাসের মেল্টিং পয়েন্ট হচ্ছে মাইনাস ২১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কাজেই মাইনাস ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় নাইট্রোজেন গ্যাস তরলে পরিণত হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। এর ফলে বিমানের চাকায় নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করা হলে এই সমস্যাটি আর হয় না। ফলে এয়ারক্রাফট অবতরণের সময় উদ্ভুত অনাকাঙ্ক্ষিত এই দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায়। বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ারে বাতাসের পরিবর্তে নাইট্রোজেন ব্যবহারের আরেকটি বড় সুবিধা আছে।

বাতাসের তুলনায় নাইট্রোজেন গ্যাসে জলীয় বাষ্প প্রায় থাকে না বললেই হয়। ফলে নাইট্রোজেন গ্যাস বাতাসের তুলনায় বেশি সময় ধরে টায়ারের চাপ ধরে রাখতে পারে। এর ফলে বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ারের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম হয়, আর বার বার টায়ারে গ্যাস ভরার ঝামেলা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।

বিমানের চাকায় বাতাস ব্যবহার করলে আরেকটি সমস্যা তৈরি হতে পারে। যেহেতু বাতাসের প্রায় ২০ ভাগই হচ্ছে অক্সিজেন, আর সক্রিয়তার কারণে এই অক্সিজেন হুইলের টায়ারের সাথে রাসায়নিক ক্রিয়া করতে পারে। এতে টায়ারের রাবার অক্সিডাইজ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর নন-অক্সিডাইজ রাবার অক্সিডাইজ রাবারের তুলনায় বেশি শক্তিশালী। বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ারে বাতাসের পরিবর্তে নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহারের আরেকটি বিরাট সুবিধা রয়েছে। বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ারে বাতাস ব্যবহারে আরেকটি বড় রকমের অসুবিধা হচ্ছে, বায়ুমণ্ডলের বাতাসের প্রায় ২০ ভাগই থাকে অক্সিজেন। আর আমরা জানি অক্সিজেন দহনে সহায়ক একটি পদার্থ।

বিমান যখন রানওয়েতে অবতরণ করে তখন এর গতি প্রায় ২৫০ কিলোমিটারের কাছাকাছি থাকে। অবশ্য বিমানের আকারভেদে এই গতি ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। আর গড়ে একেকটি সাধারণ টায়ার প্রায় ৩৮ টন ভার বহন করে। বিপুল পরিমাণ বোঝাসহ এই বিশাল গতিবেগ নিয়ে বিমানে যখন রানওয়ের মাটি স্পর্শ করে, তখন চাকার সাথে রানওয়ের প্রচণ্ড ঘর্ষণ তৈরি হয়। আর এই ঘর্ষণের ফলে তৈরি হয় অগ্নিস্ফুলিঙ্গ।

আবার চাকার এই ঘর্ষণের ফলে তাপও উৎপন্ন হয়। চাকায় বাতাস ব্যবহার করলে, বাতাসের অক্সিজেন, ঘর্ষণের ফলে উৎপন্ন তাপ আর আগুনের স্ফুলিঙ্গ থেকে খুব সহজেই আগুন ধরে যেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনার সৃষ্টি করতে পারে।

এক্ষেত্রে চাকায় বাতাসের পরিবর্তে নাইট্রোজেন ব্যবহারের সুবিধা হলো, স্ফুলিঙ্গ থেকে কখনো আগুন যদি ধরেও যায় তাহলে নাইট্রোজেন তার নিষ্ক্রিয় ধর্মের কারণেই আগুন নিভিয়ে দিবে। বিমানের যাত্রীরাও নিরাপদে ভূমিতে অবতরণ করতে পারবে। তাই সব দিক দিয়ে বিবেচনা করে, বিমানের চাকায় সাধারণ বাতাস ব্যবহারের পরিবর্তে নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহারই বেশি যুক্তিযুক্ত। তাছাড়া বাতাসের পরিবর্তে নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহারের এসকল সুবিধার কারণে আজকাল রেসিং কারের টায়ারেও নাইট্রোজেন ব্যবহার করা হচ্ছে!

তথ্যসূত্র: রোর মিডিয়া

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. আক্তার হোসেন রিন্টু
বার্তা ও বাণিজ্যিক বিভাগ : প্রকাশক কর্তৃক ৮২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক (৩য় তলা) ওয়্যারলেস মোড়, বড় মগবাজার, ঢাকা-১২১৭।
বার্তা বিভাগ : +8802-58316172. বাণিজ্যিক বিভাগ : +8801868-173008, E-mail: dailyjobabdihi@gmail.com
কপিরাইট © দৈনিক জবাবদিহি সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft