
মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মীদের ভবিষ্যত তহবিল 'এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড' (ইপিএফ) বাধ্যতামূলক করেছে দেশটির সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার দেওয়ান রাকায়াত (সংসদে) সরকার ও বিরোধী দলের ৮ সংসদ সদস্যের আলোচনার পর সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে বিষয়টি অনুমোদিত হয়েছে।
দেশটির সরকারি সংবাদ সংস্থা বারনামা জানিয়েছে, নতুন সংশোধনীতে ১১টি ধারায় পরিবর্তন আনা হয়েছে, যার মধ্যে বিদেশি কর্মীদের জন্য বাধ্যতামূলক ইপিএফ পরিশোধের দায়বদ্ধতা এবং ইপিএফের হার সংক্রান্ত বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সরকার আশা করছে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার শ্রম বাজারে ভারসাম্য তৈরি হবে এবং জাতীয় অর্থনীতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বিদেশি কর্মীদের জন্য ইপিএফ বাধ্যতামূলক করার ফলে দীর্ঘমেয়াদে তাদের ওপর নির্ভরতা কমবে এবং স্থানীয় ব্যবসাগুলোর প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রবণতাও বাড়িয়ে তুলবে।
দেশটির অর্থমন্ত্রী দাতুক সেরি আমির হামজাহ আজিজান বলেন, বাধ্যতামূলক ইপিএফ চালুর ফলে মালয়েশিয়ার বেতন কাঠামো উন্নত হবে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এই ব্যবস্থার ফলে পরিবারের ব্যয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে।
এছাড়া, এটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি উদ্যোগ।
একটি গবেষণাপত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে মন্ত্রী বলেন, যদি ইপিএফ বাধ্যতামূলক না করা হয়, তাদের তুলনায় দেশটির স্থানীয় কর্মীরা অনেক সস্তা হয়ে যাবে। ফলে শ্রমবাজারে ভারসাম্য নষ্ট হবে এবং স্থানীয় কর্মীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যাবে। এছাড়া, নতুন এই ব্যবস্থা অবৈধ বিদেশি কর্মীদের সংখ্যা কমাতেও সাহায্য করবে, কারণ শুধুমাত্র বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত এবং নথিভুক্ত কর্মীরাই ইপিএফে চাঁদা দিতে পারবে।
দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে, বর্তমানে বিদেশি কর্মীদের জন্য ইপিএফ তহবিলে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে অর্থ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তারা তাদের মাসিক বেতনের ১১% পর্যন্ত অর্থ জমা দিতে পারে, তবে নিয়োগকর্তার জন্য চাঁদার হার মাত্র ৫ রিঙ্গিত নির্ধারণ করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় ২৫ লাখ বিদেশি কর্মীর মধ্যে মাত্র ২২,৬৩৫ জন, অর্থাৎ ০.৯% কর্মী সক্রিয়ভাবে ইপিএফ প্রদান করেছে।
নতুন বিধান কার্যকর হলে বিদেশি কর্মীদের জন্য ইপিএফ বাধ্যতামূলক হবে এবং এটি ২০২৫ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে (কিউ৪) বাস্তবায়ন করা হবে।
সরকার ৩ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করেছে, বিদেশি কর্মীদের জন্য ইপিএফ চাঁদার হার কর্মী ও নিয়োগকর্তার জন্য ২% নির্ধারণ করা হয়েছে, যা মালয়েশিয়ান কর্মী ও স্থায়ীদের তুলনায় অনেক কম।
এই পরিবর্তনের ফলে শ্রমবাজারের ভারসাম্য বজায় থাকবে এবং জাতীয় অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং বিদেশি কর্মীরা তাদের দেশে ফেরার সময় বৈধ নিয়োগের প্রমাণসহ ইপিএফ থেকে তহবিল উত্তোলন করতে পারবেন বলেও জানালেন দেশটির অর্থমন্ত্রী।