
আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) ৭৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষে আগামীকাল সকাল ৮টায় পুরানা পল্টনস্থ পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যলয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। বিকেল ৪টায় মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া সারাদেশে পার্টির পতাকা উত্তোলন, সমাবেশ-র্যালি-মিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালিত হবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স পার্টির (সিপিবি) ৭৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে দেশের শ্রমিক, কৃষক, ক্ষেতমজুর, মেহনতি মানুষসহ সর্বস্তরের দেশবাসীর প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বিগত দিনে পার্টির পতাকা সমুন্নত রাখতে গিয়ে যাঁরা শহীদের মৃত্যুবরণ করেছেন, তাঁদের স্মৃতির প্রতি নেতৃবৃন্দ গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের পর এখনকার সংগ্রাম পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। এ জন্য নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে হবে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশ ও দেশের মানুষের মুক্তি নিশ্চিত করতে বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সিপিবি সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের সংগ্রামে অবিচল থেকে লড়াই সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ অতীতে ও বর্তমানে নানাভাবে যাঁরা পার্টিতে অবদান রেখেছেন ও রাখছেন তাঁদের সকলকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগ্রামী অভিনন্দন জ্ঞাপন করেছেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ যথাযোগ্য মর্যাদায় ৬ মার্চ সারাদেশে পতাকা উত্তোলন, দলীয় সমাবেশ-র্যালি এবং নানা কর্মসূচির মাধ্যমে বছরব্যাপী প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের জন্য সারাদেশে পার্টির সকল কমিটি ও শাখার প্রতি আহ্বান জানান।
১৯৪৮ সালের ৬ মার্চ পার্টির দ্বিতীয় কংগ্রেসে পৃথকভাবে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা ভিন্ন একটি অধিবেশনে মিলিত হয়ে স্বতন্ত্রভাবে পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি এবং একইসঙ্গে পার্টির পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক কমিটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক কমিটির ৪র্থ সম্মেলনে পৃথক কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করে স্বতন্ত্র ও স্বাধীন পার্টি হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি কার্যক্রম শুরু করে এবং ওই সম্মেলনকে প্রথম পার্টি কংগ্রেস হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপরই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর কমিউনিস্ট কর্মীদের ওপর হত্যা, নির্যাতন, জেল-জুলুম-হুলিয়ার খড়গ নেমে আসে। হাজার হাজার কমিউনিস্টকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়।
এতদসত্ত্বেও তেভাগা, নানকার, টংকসহ নানা কৃষক আন্দোলন, শ্রমিক আন্দোলনের পাশাপাশি ছাত্র ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন সংগঠিত করেছেন। ১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল রাজশাহীর খাপড়া ওয়ার্ড কমিউনিস্ট রাজবন্দীদের ওপর পুলিশ গুলি চালালে ৭ জন কমরেড শহীদ হন।
নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে সংগঠনে কমিউনিস্ট পার্টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যূত্থান সংঘটনে পার্টির পরিকল্পনা, সিদ্ধান্ত এবং অংশগ্রহণ এ দেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে। পূর্ব পাকিস্তানের শুরু থেকেই শোষণ এবং নির্যাতনের বিরুদ্ধে কমিউনিস্টরা তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলেন।
এ দেশের ঐতিহ্যবাহী গণসংগঠনগুলো প্রতিষ্ঠার পেছনে কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকাই মুখ্য। ন্যাপ-ছাত্র ইউনিয়ন-গেরিলা বাহিনী গঠনের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে ১১ ডিসেম্বর বেতিয়ারাতে মুখোমুখি লড়াইয়ে পার্টির কর্মী এবং ছাত্রনেতাসহ ৯ জন শহীদ হন।
স্বাধীন বাংলাদেশের নানা নিপীড়ন সহ্য করে পার্টি তার ভূমিকা পালন করে এগুচ্ছে। ২০০১ সালে ঢাকার পল্টন ময়দানে সিপিবি’র লাখো মানুষের সমাবেশে বোমা হামলা চালিয়ে ৫ জনকে হত্যা করা হয়।
ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রাম, সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াই, জাতীয় সম্পদ রক্ষার আন্দোলন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলন, যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের আন্দোলন, ১৯৯০ ও সর্বশেষ ২০২৪ এ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ সকল আন্দোলন-সংগ্রামেই সিপিবি অনন্য ভূমিকা পালন করেছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘসময় নিষিদ্ধ থাকা, নেতৃবৃন্দের জেল-জুলুম-আত্মগোপনে থাকার পরও ভাষা আন্দোলনসহ দীর্ঘদিনের গণসংগ্রামে এবং মুক্তিযুদ্ধে সিপিবি’র ভূমিকা বিশেষ মর্যাদার ও অনেক বিষয় মৌলিক প্রভাব সৃষ্টিকারী।